কঠোর সিদ্ধান্তেও ভ্রম্নক্ষেপ নেই বিএনপি নেতাদের
প্রকাশ | ০৪ মে ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
উপজেলা নির্বাচন ঘিরে কঠোর সিদ্ধান্তের তেমন কোনো প্রভাব বিএনপিতে পড়ছে না। প্রথম ধাপের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৮০ জনের দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি আমলেই নিচ্ছেন না পরবর্তী ধাপের প্রার্থীরা। দাপটের সঙ্গে আছেন নির্বাচনের মাঠে। দ্বিতীয় ধাপের অবাধ্য প্রার্থীদের বহিষ্কার তালিকা তৈরি করছে বিএনপি। এর মধ্যেই তৃতীয় ধাপের প্রার্থীরা ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বসে নেই চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী বিএনপি নেতারা।
বিএনপি সূত্রমতে, বিএনপি বলতে গেলে প্রায় সব সাংগঠনিক তৎপরতা বাদ দিয়ে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের বহিষ্কারের মিশনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রার্থীদের নির্বাচনবিমুখ করতে কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় ও জেলার নেতাদের বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা খুব একটা কাজে লাগছে না। খুব কমসংখ্যক প্রার্থীকে বুঝিয়ে নির্বাচন থেকে ফেরানো যাচ্ছে। বিদ্রোহীদের বেশিরভাগই থেকে যাচ্ছেন নির্বাচনের মাঠে। এ নিয়ে দলের উচ্চ পর্যায়ে অস্বস্তি আছে।
সূত্রমতে, নির্বাচনে কারচুপি হলে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই, বিজয়ী হলেও কয়েকদিনের ব্যবধানে চেয়ার ছেড়ে কারাগারে যাওয়ার একাধিক নজির এবং প্রশাসনের আরও বেশি রোষানলে পরতে হবে- এমন সব নেতিবাচক অভিজ্ঞতার পাশাপাশি দলের নির্দশনা অমান্য করে বিএনপি নেতারা কেন নির্বাচনে থাকছে এর কারণ অনুসন্ধান করেছে দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নির্বাচনে অংশ নেওয়া বেশির ভাগই সুবিধাভোগী শ্রেণি। এছাড়া বিভিন্ন মহলের লোভে পড়ছেন অনেকে। অনেকে বিএনপি করলেও সব দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলে। আন্দোলন সংগ্রামে কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না। মামলা মোকাদ্দমাও নেই তেমন। কেন্দ্রীয় নেতাদের ধরে পদ টিকিয়ে রাখে। এই আমলে ব্যবসা বাণিজ্যেও তেমন কোনো সমস্যা হয় না। সব মিলে তাদের অকিাংশই কোনো আদর্শের ধার ধারে না। তবে এমনও অনেকে আছেন হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার হওয়ার পরও দল থেকে খোঁজখবর না নেওয়ায় অভিমান থেকে প্রার্থী হয়েছেন। তাদের বুঝিয়ে নির্বাচন থেকে সরিয়ে আনার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। অনেকের ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে। প্রথম ধাপে বোঝানোর পর ১৬ জন নেতা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। আর দ্বিতীয় ধাপে ১২ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, এবার কমবেশি ৪৮০ উপজেলা পরিষদে ৪ ধাপে ভোট হবে। প্রথম ধাপে ভোট হবে ৮ মে। এরপর ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে, ২৯ মে তৃতীয় ও আগামী ৫ জুন চতুর্থ ধাপের নির্বাচন হবে। ইতোমধ্যে সব ধাপের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম দফার নির্বাচন প্রার্থী হওয়ায় ৮০ জন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচনের জন্য বিএনপির ৬১ জন নেতা এরই মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ২৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ২০ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ১৬। এরই মধ্যে এই ৬১ জন নেতাকে বিএনপির দপ্তর থেকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে কারণ দর্শানো চিঠি দেওয়া হয়েছে। বেঁধে দেওয়া এ সময় আজ শেষ হচ্ছে। এরমধ্যে সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে বা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে তাদের দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন ঘিরে শোকজ বহিষ্কারের কার্যক্রমের মধ্যে তৃতীয় ধাপের আগ্রহীরাও ভোটের মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রথমিকভাবে তথ্য অনুযায়ী উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে সারাদেশে ২০ বিএনপি নেতাকর্মী দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ১০ জন দলের পদধারী নেতা। অবশ্য অনেকে আগেই দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন।
\হখোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোট বর্জনের কঠোর নির্দেশ সত্ত্বেও আগ্রহীদের অতি উৎসাহে বিরক্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তা থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু ভাবনাও আছে, বহিষ্কারের তালিকা দীর্ঘ হলে তৃণমূলের সংগঠন আরও দুর্বল হতে পারে। তারপরও কঠোর অবস্থানেই থাকবে দলটি। নেতাদের ভোট থেকে বিরত রাখার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে ইতোমধ্যে সাংগঠনিক টিমকে নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমনকি বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতা ভোটে অংশ নেওয়া বহিষ্কৃৃতদের কোনোভাবে সহায়তা করলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।
তৃণমূলের অনেকে বিএনপির সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে মাঠে থাকলেও দলের সিদ্ধান্ত সঠিক বলে দাবি করেন অন্যতম নীতি নির্ধারক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, অনেকেই মেয়র হয়েছিল বিএনপির সমর্থন নিয়ে। গাজীপুরের মেয়র মান্নান বিপুল ভোটে জয়লাভ করছিল। সেই মেয়র কি একদিনও চেয়ারে বসতে পারছেন। রাজশাহীর মেয়র বুলবুল পাঁচ বছরে মাত্র আড়াই মাস চেয়ারে বসতে পেরেছিল। যারা ইতোপূর্বে নির্বাচন করেছেন, চেয়ারম্যান ছিলেন তারা কিন্তু এখন নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী না।