বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১

মে মাসেও তাপপ্রবাহ ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস

অবশেষে ঢাকা-চট্টগ্রামে কাঙ্খিত বৃষ্টি কমাল উত্তাপ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৪১.৮ ডিগ্রি
যাযাদি ডেস্ক
  ০৩ মে ২০২৪, ০০:০০
মে মাসেও তাপপ্রবাহ ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস

তপ্ত এপ্রিল পার হলেও সহসাই মিলছে না স্বস্তি। মে মাসে তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে চলতি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে নিম্নচাপ অথবা ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা রয়েছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, পুরো এপ্রিলজুড়ে তাপপ্রবাহে বৃষ্টি হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ কম। এ মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৮১ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়। তবে ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম মাস এপ্রিল পেরিয়ে মে মাসের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে রাজধানী ঢাকায় বহু কাঙ্খিত বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বন্দরনগরী চট্টগ্রামে কিছুটা উত্তাপ কমিয়েছে কালবৈশাখীর ঝড়ো বৃষ্টি। এ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। এ জেলায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

১ এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে তীব্র এবং ২০ থেকে ৩০ এপ্রিল তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। পুরো মাসে ১৬ দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী হয়েছে। ২৭ এপ্রিল সিলেট ও ২৮ এপ্রিল শ্রীমঙ্গলে সর্বোচ্চ ৮৯ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া রেকর্ড করা হয়েছে। তবে দেশের বেশিরভাগ এলাকা ছিল বৃষ্টিশূন্য।

৩১ মার্চ থেকে টানা দাবদাহের মধ্যে ৩০ এপ্রিল যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা স্বাধীনতার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে জানান, 'এপ্রিলে সারাদেশে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। আর সারাদেশে গড় তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।'

মে মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে ৩ থেকে ৫ দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ কালবৈশাখী ঝড় এবং ২ থেকে ৩ দিন তীব্র কালবৈশাখীর আভাস রয়েছে।

আজিজুর রহমান বলেন, 'এ মাসে দেশের কোথাও কোথাও ১ থেকে ৩টি মৃদু অথবা মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং ১ থেকে ২টি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। মে মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ বা ২টি লঘুচাপ হতে পারে। যার মধ্যে একটি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে নিম্নচাপ অথবা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।'

চলতি মাসে নদ-নদীতে স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজ থাকতে পারে। তবে উজানে ভারী বর্ষণের ফলে উত্তরাঞ্চল ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোথাও কোথাও পানি বিপৎসীমার উপরে যেতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান সংবাদ মাধ্যমকে জানান, 'আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।'

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়

স্টাফ রিপোর্টার, চুয়াডাঙ্গা জানান, দেশের ইতিহাসে রেকর্ড তাপমাত্রার পর টানা ৫ দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা চুয়াডাঙ্গায়। বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ১০%। দীর্ঘ ৩৫ বছরের তাপমাত্রার রেকর্ড মাড়িয়ে গত ৩০ এপ্রিল ৪৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায়।

চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ মো. জামিনুর জানান, চলতি সপ্তাহে টানা ৫ দিন সারাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে চুয়াডাঙ্গায়। এখনো অতি তীব্র দাবদাহ চলছে। এ অবস্থা আগামী দু-একদিন থাকতে পারে। ৪/৫ মে কালবৈশাখী ও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

টানা প্রায় ২০ দিন চুয়াডাঙ্গা জেলা তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন অস্থির হয়ে উঠেছে। তীব্র রোদ আর রোদে আগুনের ফুলকির মতো তেজ যেন মরুভূমির তাপমাত্রা। অতি দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষ ও প্রাণীকুল।

স্বস্তির বৃষ্টিতে ভিজল চট্টগ্রাম

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের উত্তাপ কমাল কালবৈশাখীর ঝড়ো বৃষ্টি। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শুরু হয় বর্ষণ। জেলার প্রায় সব উপজেলায়ই বৃষ্টিপাতের খবার পাওয়া গেছে।

এর আগে মধ্যরাতে দুয়েক ফোঁটা বৃষ্টি হলেও ভোর থেকেই আকাশ ছিল মেঘলা। সকালে ৪০ মিনিটের বৃষ্টিপাতে আনন্দের লহর ছোটে নগরীতে। বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে অনেকে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে তা শেয়ার করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. আবদুল বারেক বলেন, 'আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটা কালবৈশাখীর বৃষ্টি। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আবার ঝড়ো হাওয়া এবং বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এটা মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি নয়। মৌসুমি বায়ু শুরু হতে আরো মাসখানেক লাগবে।'

বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর বেলা ১১টা থেকে ফের উত্তাপ ছড়াতে শুরু করে সূর্য। তবে বাতাস থাকায় অন্যদিনের তুলনায় গরমের তীব্রতা কম ছিল।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, 'চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।'

এপ্রিলে ৮১ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে

পুরো এপ্রিলজুড়ে তাপপ্রবাহে বৃষ্টিও হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ কম। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চলতি বছরের গেল মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৮১ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। ঢাকায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ১৪৮ মিলিমিটার ধরা হলেও এপ্রিলে বৃষ্টি হয়েছে ১৪ মিলিমিটার যা ৯১ শতাংশ কম; ময়মনসিংহে ১৬৪ মিলিমিটার ধরা হলেও বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৯ মিলিমিটার যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৮৮ শতাংশ কম; চট্টগ্রামে ১৪৩ মিলিমিটার ধরা হলে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২২ মিলিমিটার যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৮৪ শতাংশ কম; সিলেটে ২৯৬ মিলিমিটার ধরা হলেও ২৯৩ মিলিমিটার হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ১ শতাংশ কম। এছাড়া রাজশাহীতে ৯৩ মিলিমিটার ধরা হলেও পুরো মাসে শূন্য মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে যা স্বাভাবিকের চেয়েছে ১শ শতাংশই কম, রংপুরে ১২৯ মিলিমিটার ধরা হলেও বৃষ্টি হয়েছে শূন্য মিলিমিটার যা স্বাভাবিকের চেয়ে ১শ শতাংশ কম, খুলনায় ৭৯ শতাংশ ধরা হলেও বৃষ্টি হয়েছে ৯ শতাংশ যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৮৯ শতাংশ কম, বরিশালে ১৩৩ মিলিমিটার ধরা হলেও বৃষ্টি হয়েছে ১৯ মিলিমিটার যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৮৬ শতাংশ কম। এদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে, এপ্রিলে দেশে গড় স্বাভাবিক বৃষ্টির পরিমাণ থাকার কথা ১৩৪ মিলিমিটার। সেখানে বৃষ্টি হয়েছে ২৬ মিলিমিটার যা স্বভাবিকের চেয়ে ৮১ শতাংশ কম।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, 'মাসে সারাদেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম ৮১ শতাংশ বৃষ্টি হয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় তাপীয় লঘুচাপ অবস্থান করায় দেশের অনেক স্থানের ওপর দিয়ে ১-১৯ এপ্রিল মাঝারি থেকে তীব্র এবং ২০-৩০ এপ্রিল পর্যন্ত তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে