বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১
৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়!

রেজা মাহমুদ
  ০৩ মে ২০২৪, ০০:০০
প্রতারণার মাধ্যমে মৃতু্যর জাল সনদ তৈরির অভিযোগে পুলিশের দায়ের করা মামলায় বৃহস্পতিবার আদালতে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের শুনানি শেষে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয় -ফোকাস বাংলা

পাহাড় সমান অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই 'চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার' আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রতারণার মাধ্যমে মৃতু্যর জাল সনদ তৈরির অভিযোগে পুলিশের দায়ের করা মামলায় তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার বিকালে শুনানি শেষে অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেনের আদালত এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে রাজধানীর মিরপুর থানায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। সিটি করপোরেশনের ভুয়া সিল দিয়ে মৃতু্য সনদ তৈরি করে অননুমোদিত লাশ দাফনের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা এবং বাকি দুটি মামলা দায়ের করেছেন পৃথক দুই ব্যক্তি।

এদিকে বেশ কিছুদিন ধরেই গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আলোচনায় 'মানবতার ফেরিওয়ালা' খ্যাত মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে। এরই ভিত্তিতে বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তাকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। গ্রেপ্তারের পরেরদিন বৃহস্পতিবার মিল্টনকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন ডিবি পুলিশের এসআই কামাল হোসেন। এ সময় মিল্টনের আইনজীবীরা রিমান্ড আবেদন বাতিল চেয়ে মিল্টনের জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ড আবেদনে যা বলা হয়েছে

এদিকে পুলিশের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ধৃত আসামি দীর্ঘদিন ধরে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ৫০টি ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছেন। তিনি চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার সেন্টার নামে চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান খুলে 'মানবতার ফেরিওয়ালা' পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতনামা, ওয়ারিশবিহীন ব্যক্তি, শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের নিয়ে চিকিৎসা ও সেবা না দিয়ে তাদের মৃতু্যর কোলে ঠেলে দিয়েছেন। মৃতু্য সংক্রান্ত সঠিক তথ্য উদঘাটনের জন্য ও আসামির অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না- তা তদন্তে পুলিশ রিমান্ড আবেদন করে।

রিমান্ড আবেদনে আরও বলা হয় আসামি মিল্টন সমাদ্দার নিজেকে ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিতেন। আদৌ তার ডাক্তারি সনদ আছে কি না তা যাচাইয়ের লক্ষ্যে, সহযোগী অন্য আসামিদের শনাক্তসহ নাম, ঠিকানা সংগ্রহ এবং গ্রেপ্তার, চিকিৎসা সেবার নাম করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে কোনো ভিকটিমকে হত্যা, অজ্ঞাতনামা শিশুদের আইনানুগ অভিভাবকদের অজ্ঞাতে পাচার করেছে কি না, তাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রি করেছে কি না- সেই তথ্য সংগ্রহের জন্য পুলিশ রিমান্ড আবেদন করে।

এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এরপর বৃহস্পতিবার মিরপুর মডেল থানায় প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা করা হয়। মামলায় মিল্টনের সহযোগী কিশোর বালা নামে একজনকে আসামি করা হয়।

\হ

মামলার এজাহারে যা বলা হয়েছে

মামলার এজাহারে বলা হয়, মামলার বাদী পুলিশ ফোর্সসহ মিরপুরে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার সেন্টারে হাজির হলে আসামি মিল্টন সমাদ্দার পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় তাকে আটক করা হয়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান যে, তিনি কোনো নিবন্ধিত ডাক্তার নন এবং তার ওই প্রতিষ্ঠানে তিনি নিবন্ধিত কোনো ডাক্তার নিয়োগ দেননি। তিনি চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার সেবার নামে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে নিজে ডাক্তার সেজে পলাতক আসামি কিশোর বালার সঙ্গে যোগসাজশে প্রতারণামূলকভাবে বিভিন্ন চিকিৎসা করেন। এছাড়াও ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমোর মাধ্যমে ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট তৈরি করে মিল্টন সমাদ্দার ১ কোটি ২০ লাখ ফ্রেন্ড ফলোয়ারের মধ্যে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ উপার্জন করেন।

পুলিশের অভিযানে মিল্টনের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাগজপত্র ও তার টেবিলে থাকা ডেথ সার্টিফিকেট, দুটি স্ট্যাম্প সিল পাওয়া যার একটিতে ইংরেজিতে এমডি মহিদ খান (গফ গড়যরফ কযধহ) অন্যটিতে বাংলায় আসামি মিল্টন সমাদ্দারের নাম লেখা।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, আসামি মিল্টন সমাদ্দার নিজে ডাক্তার সেজে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের মৃত ঘোষণা এবং জালজালিয়াতির মাধ্যমে মৃতু্যর সনদপত্রে ভুয়া ডাক্তারের স্বাক্ষর ও সিল এবং নিজে ডাক্তার সেজে স্বাক্ষর ও সিল দেন। পরে মৃত ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে সনদপত্র প্রদান করেন।

এতে আরও বলা হয়, প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, আসামি মিল্টন সমাদ্দার দীর্ঘদিন ধরে মানবতার সেবা ও চিকিৎসার নামে বিভিন্ন বয়স্ক এবং শিশুকে নিয়ে শারীরিক, মানসিক আঘাত করে, কখনো কখনো তাদের সুচিকিৎসার নাম করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ে বিক্রি করেন। একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না হয়েও সেবার নামে অজ্ঞাতনামা, ওয়ারিশবিহীন ব্যক্তিদের নিয়ে চিকিৎসা প্রদান না করে, খাবারের যথাযথমান বজায় না রেখে বিভিন্ন মানুষকে মৃতু্যর কোলে ঠেলে দিয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জালজালিয়াতির মাধ্যমে ৫০ জনের নামে মৃত সার্টিফিকেট দিয়েছেন। যাদের মৃতু্যর সঠিক কারণ উদঘাটিত হয়নি।

কে এই মিল্টন সমাদ্দার?

মিল্টন সমাদ্দার। অনেকের কাছে তার পরিচয় সমাজ সেবক হিসেবে। মাঝে মাঝেই তিনি মানুষের সেবার জন্য অন্যদের কাছে অর্থ সাহায্য চাইতেন। সাড়াও পেতেন তাতে। কিন্তু গত কিছু দিন ধরে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই মিল্টনের নাম ও কাজ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। সমাজ সেবার আড়ালে নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠে আসে একে একে। এর মধ্যে মানবপাচার, বাচ্চা শিশুর ওপর হামলা, দুটি টর্চার সেল গঠন, অসহায় মানুষের নামে সংগ্রহ করা অর্থ আত্মসাৎ, তাদের কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরি করে বিক্রি, জাল মৃতু্য সনদ তৈরি এবং জমি দখলের মতো গুরুতর সব অভিযোগও রয়েছে।

বুধবার আটকের পর ডিবি পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের জানান, বরিশালের উজিরপুরে বাড়ি মিল্টনের। সেখানে নিজের বাবাকে পিটিয়ে এলাকা ছাড়া হন মিল্টন। এরপর ঢাকায় এসে শাহবাগে একটি ফার্মেসিতে কাজ করেন। সেখানে ওষুধ চুরির কারণে তাকে বের করে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে কিছু লেখাপড়া করেন। পরে মিঠু হালদার নামের এক নার্সকে বিয়ে করেন। বিয়ে করার পর স্ত্রীকে নিয়ে মিরপুরে 'চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার' নামে একটি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করেন।

সম্প্রতি মিল্টন সমাদ্দারের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। যদিও কয়েকটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন মিল্টন সমাদ্দার।

৯০০ মরদেহ দাফনের দাবি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজে মিল্টন সমাদ্দার প্রায়ই দাবি করেন, তার আশ্রমে সব সময় ২৫০-৩০০ অসুস্থ রোগী থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে রাস্তায় যারা মারা যান, তাদের দাফন করেন মিল্টন। আবার তার আশ্রমে অবস্থানকালেও অনেকে মারা যান। মিল্টনের দাবি, সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৯০০ মরদেহ দাফন করেছেন তিনি। যাদের দাফন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৬০০ জন তার আশ্রমে মারা গেছেন। আর বাকি ৩০০ মরদেহ রাস্তা থেকে এনে তিনি দাফন করেছেন। এসব মরদেহ রাজধানীর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে দাবি তার।

তবে গণমাধ্যমের বিভিন্ন খবরের তথ্যানুযায়ী, মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মিল্টন সমাদ্দারের প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে সব মিলিয়ে ৫০টি মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এছাড়া রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ১৫টির মতো মরদেহ দাফনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে আজিমপুর কবরস্থানে ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত কোনো মরদেহের দাফন হয়নি বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন সেখানকার দায়িত্বরতরা।

মরদেহে কাটাছেঁড়া ও জাল মৃতু্য সনদ প্রদানের অভিযোগ

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, মিল্টন সমাদ্দারের দক্ষিণ পাইকপাড়া আশ্রমের কাছেই বায়তুর সালাম জামে মসজিদে এক সময় তার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসা মরদেহ বিনামূল্যে গোসল করাতেন। তার মানবিক কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষ তাকে এই সুবিধা দিয়েছিল। তবে গোসল করানোর সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রায় প্রতিটি মরদেহের বিভিন্ন স্থানে কাটাছেঁড়ার দাগ শনাক্ত করেন। করোনার সময় এ বিষয়ে মিল্টনকে প্রশ্ন করে মসজিদ কর্তৃপক্ষ। এরপর তিনি ওই মসজিদে মরদেহ পাঠানো বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় একটি মাদ্রাসার পরিচালক তোফাজ্জল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, 'মিল্টন এক সময় বাসা ভাড়া পরিশোধ করতে পারতেন না। এখন তিনি এগুলো করে কোটি কোটি টাকার মালিক। দামি গাড়িতে চড়েন। আমরা শুনেছি আড়ালে তিনি মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরি করেন। রাস্তা থেকে মানুষ তুলে আনার পর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। যাদের কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ভালো থাকে, তাদের যথাযথ চিকিৎসা করানো হয়। তাদের জন্য ভালো খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেন। এরপর সুস্থ হলে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নেওয়া হয়। 'চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার' এ কাজ করেছেন- এমন একজন বলেন, 'কোনো রোগী অসুস্থ হলে সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয় না। এখানে রেখেই চিকিৎসা করা হয়। কারণ, তিনি চান না কেউ পুরোপুরি সুস্থ হোক। এটা তার ব্যবসা।' এছাড়াও মিল্টন যতজনকে দাফন করেছেন, তাদের প্রত্যেকের ডেথ সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের প্যাডে।

মারধরের অভিযোগ

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নিজস্ব বাহিনী দিয়ে একাধিক ব্যক্তিকে মারধরে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তার আশ্রমের ভেতরে রয়েছে নিজস্ব টর্চার সেল। লাঠিসোটা, পাইপসহ মারধরের নানা উপকরণ পাওয়া গেছে সেখানে। এর মধ্যে গত ১০ এপ্রিল সাভারের কমলাপুর এলাকার বাহেরটেকে নিজের কেনা জমি দেখতে গিয়ে বেধড়ক মারধরের স্বীকার হন মো. সামসুদ্দিন চৌধুরী নামে ৬৫ বছর বয়সি এক ব্যক্তি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মেয়ে এবং মেয়ের জামাই। বাধা দিতে গিয়ে মারধরের শিকার হন তারাও। মারধরে মেয়ের জামাই ফয়েজ আহমেদের হাতের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায় এবং সামসুদ্দিন চৌধুরীর একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। সামসুদ্দিনের মেয়ে সেলিনা বেগমও মারধরের হাত থেকে রক্ষা পাননি। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে প্রায় এক ঘণ্টা পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় মিল্টন সমাদ্দারকে প্রধান আসামি করে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।

ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) আব্দুলস্নাহ বিশ্বাস বলেন, 'মারধরের ঘটনায় চারজন আহত হয়েছেন। মামলার তদন্ত চলছে'।

আর্থিক হিসাবে অস্বচ্ছতা

সাধারণ মানুষের দানের টাকায় পরিচালিত অলাভজনক সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয় সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়। মিল্টন সমাদ্দারও তার চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের অনুমোদন একই প্রক্রিয়ায় নেন। তবে নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান দিয়ে অডিট এবং দুই বছর পরপর নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি নবায়নের কথা থাকলেও তিনি সেটি করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়াও মিল্টন সমাদ্দারের পাঁচটি ফেসবুক পেজে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের ১৬টি নম্বর দেওয়া রয়েছে। এ ছাড়া তিনটি বেসরকারি ব্যাংকে খোলা হিসাবের মাধ্যমে চলে আর্থিক লেনদেন। দেখা গেছে, এসব একাউন্টে প্রতি মাসে কোটি টাকার মতো জমা হয়। কিন্তু মিল্টনের আশ্রমে থাকা ৫০ জন মানুষের দেখা শোনায় এই বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। ডিবি পুলিশ জানিয়েছে এসব অর্থের হিসেব নিয়েও তদন্ত করা হবে।

বরিশালে চার্চ দখলের অভিযোগ

বরিশালে 'চন্দ্রকোনা খ্রিষ্টান মিশনারি চার্চ' দখলের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে। দখলের উদ্দেশ্যে তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিল-স্বাক্ষর জাল করে চার্চের নতুন কমিটি গঠন করে বরিশাল জেলা প্রশাসককে একটি চিঠি দেন। ওই কমিটিতে সভাপতি করা হয় মিল্টন সমাদ্দারকে। কমিটির বাকি সদস্যদের প্রায় সবাই মিল্টনের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন। তবে এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না চার্চের দায়িত্বরত যাজকরা। পরে তারা ধর্ম মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলে মন্ত্রণালয় থেকে তাদের জানানো হয়, এ ধরনের কোনো চিঠি ইসু্য করা হয়নি। এরপর তারা আদালতে মামলা করেন। আদালত জালিয়াতি করে চার্চ দখল করতে চাওয়া ব্যক্তিদের ওই চার্চের সীমানায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে