শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার প্রশ্ন

আমাকে উৎখাত করলে কে ক্ষমতায় আসবে

আন্দোলন দমনে আমেরিকান স্টাইলের অনুসরণ করা হবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে ৭ জানুয়ারি ইতিহাসের সবচেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে ১৪ দলীয় জোট আছে, থাকবে
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৩ মে ২০২৪, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে থাইল্যান্ড সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন -ফোকাস বাংলা

যেসব রাজনৈতিক সংগঠন সরকার পতনের আন্দোলনে রয়েছে, তারা কেন জনগণের 'সাড়া পায় না', সে বিষয়ে নিজের ধারণা বলেছেন টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ভাষায়, তাকে সরিয়ে কাকে ক্ষমতায় আনতে চায়, সে বিষয়ে বিরোধীরা নিজেরাও জানে না, আর এটা তাদের রাজনীতির বড় দুর্বলতা।

থাইল্যান্ড সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে বৃহস্পতিবার গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে দেশের রাজনীতি নিয়েও বিভিন্ন প্রশ্ন আসে।

দেশের অতি বাম, অতি ডান- সবই এখন 'এক হয়ে গেছে' বলে দু'দিন আগে মন্তব্য করেছিলেন শেখ হাসিনা। সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, 'দুই মেরু এক হয়ে সরকারকে উৎখাত করার কথা বলছে। এই অবস্থায় আপনি জাতিকে কী বার্তা দিতে চান?'

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাম চলে গেছে নব্বই ডিগ্রি ঘুরে। আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই, বিশেষ করে আমরা যাদের অতি বাম মনে করি, তারা সব সময় নিজেদের প্রগতিশীল গণমুখী দল দাবি করে।

সেখানে আমার প্রশ্ন হলো, 'ঠিক আছে, তারা আমাকে উৎখাত করবে, পরবর্তী সময়ে কে আসবে তাহলে? সেটা কি ঠিক করতে পেরেছেন? কারা আসবে? কে আসবে? কারা দেশের জন্য কাজ করবে? তারা কাকে আনতে চায়?'

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, 'সেটা কিন্তু স্পষ্ট না, আর সেটা স্পষ্ট না বলেই কিন্তু কেউ জনগণের কোনো সাড়া পাচ্ছে না। হঁ্যা আন্দোলন করে যাচ্ছে। কেউ বিদেশে বসে, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের বদৌলতে প্রতিদিন অনলাইনে বসে আন্দোলন সংগ্রাম করেই যাচ্ছে, নির্দেশ দিয়েই যাচ্ছে। সেখানেও তো প্রশ্ন আছে। যারা আন্দোলন করে করুক, আমরা তো বাধা দিচ্ছি না।'

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনকারীদের দমাতে পুলিশ যেভাবে বল প্রয়োগ করেছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক আন্দোলন দমাতে সরকার সেই 'কৌশল' নেবে কি না, পরিহাসের ছলে সেই প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, 'আমার মনে হয় আমাদের নতুন পথ নিয়ে নেওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আমরা যদি আমেরিকার স্টাইলে আন্দোলন বা আমাদের পুলিশকে যদি বলে দিই যে আমেরিকার পুলিশ যেভাবে আন্দোলন থামায় সেটা অনুসরণ করতে পারে, সেটা কি বলে দেব? আমার মনে হয় এখন আমাদের পুলিশরা আমেরিকান পুলিশদের অনুসরণ করতে পারে।

'কারণ আমরা তো ধৈর্য ধরতে বলেছিলাম, সেই ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের (বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষ) কথা মনে আছে? আমি বলেছিলাম ধৈর্য ধরতে। যার কারণে পুলিশ ধৈর্য ধরায় তাদের পিটিয়ে মেরেছে, সেই সঙ্গে তাদের হাসপাতালে আক্রমণ, গাড়ি পোড়ানো, কাজেই আমার মনে হয় এখন আমাদের পুলিশ কিন্তু আমেরিকান স্টাইলে আন্দোলন দমানোর স্টাইলটা নিতে পারে। আমার মনে হয় সাংবাদিকরা এই ব্যপারে আমাকে সমর্থন করবেন।'

ইতিহাসের 'সব থেকে সুন্দর নির্বাচন' ২০২৪ সালে হয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'জনগণের অধিকার নিশ্চিত করেই আমরা নির্বাচন করেছি। বাংলাদেশের পুরো নির্বাচনের ইতিহাসটা দেখেন, সেই পঁচাত্তরের পর থেকে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, ৭৭ সালের হ্যাঁ/না ভোট থেকে যতগুলো নির্বাচন, প্রত্যেকটা নির্বাচনের যদি তুলনা করেন, তাহলে দেখবেন যে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন প্রত্যেক নির্বাচনের তুলনায় সবচেয়ে বেশি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু এবং জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চত করার নির্বাচন হয়েছে।'

'যেটা আমাদের দীর্ঘদিনের লক্ষ্য ছিল, আমরা সংগ্রাম করেছি এই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরাই আন্দোলন সংগ্রাম করেছি, সেটা ভুলে গেলে তো চলবে না।'

আগে নিজের ঘর সামলান

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাদের দেশে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তাদের আগে নিজের ঘর সামলানো উচিত।

এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের দেশে এই যে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, গুলি করে একেবারে সাধারণ নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, এসব তো তাদের দেখা উচিত। নিজের ঘর আগে সামলানো উচিত।

তিনি বলেন, আমেরিকায় বিভিন্ন স্কুল, শপিংমল, রেস্টুরেন্টে অনবরত গুলি হচ্ছে, আর মানুষ মারা যাচ্ছে। এমন কোনো দিন নেই বোধহয়, আমেরিকায় মানুষ না মারা হচ্ছে। তাদের সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।

আমেরিকায় বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'এর আগেও আমাদের বাংলাদেশি কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করেছি এবং বিচার করে তারা আমাকে জানিয়েছে। আমাদের যেটুকু করার, সেটুকু আমরা করে যাচ্ছি।' তিনি বলেন, শুধু এখানেই নয়, আমেরিকায় বসেও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।

সম্প্রতি ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন আন্দোলন দমন করতে আমেরিকার পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা যদি আমাদের পুলিশকে বলে দিই, আমেরিকার পুলিশ যেভাবে আন্দোলন থামায়, সেই পদ্ধতি তারা অনুসরণ করতে পারে! সেটা করতে পারি? আমরা তো ধৈর্য ধরতে বলেছিলাম। ২৮ অক্টোবর আমি তো পুলিশকে বলেছিলাম ধৈর্য ধরতে। তাদের (পুলিশকে) পিটিয়ে মেরেছে। সেই সঙ্গে তাদের হাসপাতালে আক্রমণ, গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। কাজেই আমার মনে হয়, এখন আমাদের পুলিশ কিন্তু আমেরিকান স্টাইলে আন্দোলন দমানোর ব্যবস্থাটা নিতে পারে। আমার মনে হয়, সাংবাদিকরা এ বিষয়ে আমাকে সমর্থন করবেন।

আমরাও অবজারভার টিম পাঠাব

সংবাদ সম্মেলনে কোনো দেশের নাম উলেস্নখ না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'আরও অনেক দেশেই তো নির্বাচন হচ্ছে, আমরা দেখব। আমরা অবজারভার টিমও পাঠাব, দেখি কেমন নির্বাচন হয়। সেখানকার মানুষ কীরকম ভোট দেয় আমরা দেখব।'

বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা স্বচ্ছ করতে আওয়ামী লীগের ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'আমাদের চেষ্টা হচ্ছে, ধীরে ধীরে এই প্রক্রিয়াটাকে আরও গণমুখী করা, আরও স্বচ্ছ করা। এ-ই প্রথম আমরা আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি। নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল ছিল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ওপর। সেখান থেকেও মুক্ত করে তাদের সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি, আলাদা বাজেট দিয়ে দিচ্ছি।'

বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর জনগণকে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, 'মানুষ কেন ভোটে যাবে না! ভোট দেওয়া তো তার অধিকার। তার এলাকায় সে কাকে চায়, তাকে সে ভোট দেবে। তাকে ভোটের অধিকারে হস্তক্ষেপ কেন করা? এখন অনেকগুলো রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে। এক সময় দেখা গেল, সবাই বর্জন করে। বর্জন করে কেন? কারণ, আসলে নির্বাচন করার মতো সক্ষমতাই নেই।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'পার্লামেন্ট ইলেকশন করতে হলে আপনাকে তো পাবলিকের কাছে দেখাতে হবে যে, আপনার পরবর্তী নেতৃত্বে কে আসবে বা প্রধানমন্ত্রী কে হবে বা নেতা কে হবে। একটা নেতা তো দেখাতে হবে। আপনার কাছে যদি উপযুক্ত নেতা না থাকে, তখন তো আপনাকে একটা ছুতো খুঁজতে হয়। হঁ্যা, ইলেকশন করলাম না, বিরাট ব্যাপার দেখালাম। বাস্তবতা তো সেটাই। আমাদের দেশে তো ওইটাই হচ্ছে এখন। একটা সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে যদি পাবলিকের কাছে দেখান, পাবলিক তো ওটা নেবে না। পলাতক আসামি, তাকে যদি দেখান, পাবলিক তো নেবে না। রাজনীতি করতে গেলে তো ঝুঁকি নিতে হয়।'

সরকারপ্রধান জানান, তার লক্ষ্য একটা অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন। সেখানে থেকে যারা উঠে আসবে, আসবে। এটাই হলো বাস্তবতা। মানুষ যাকে চাইবে, সেই আসবে। যেমন আওয়ামী লীগকে চেয়েছে, আওয়ামী লীগ এসেছে। ঠিক সেইভাবে, যাকে মানুষ চাইবে সেই আসবে। সেটাই তিনি চাচ্ছেন।

চৌদ্দ দল আছে, থাকবে

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনে ১৪ দলের কে জয় পেল, আর কে পেল না, সেটা বিবেচ্য নয়; তাদের এই আদর্শিক জোট অটুট আছে। একজন সাংবাদিক বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর চৌদ্দ দলীয় জোটের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। এমন কি অনেকে বলছেন, চৌদ্দ দল থাকবে না। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতির ভাষ্য জানতে চান সেই সাংবাদিক। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, 'চৌদ্দ দল তো অবশ্যই আছে। থাকবে না কেন? তাদের সঙ্গে আমাদের সব সময়ই যোগাযোগ আছে। যোগাযোগ নেই তা তো না।

'এখন দু-চারজন বিক্ষিপ্তভাবে কী বলছে আমি জানি না। আমাদের যিনি সমন্বয় করেন, আমির হোসেন আমু সাহেবের ওপর দায়িত্ব দেওয়া আছে দলের পক্ষ থেকে। তিনি যোগাযোগ রাখেন।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'নির্বাচনে চৌদ্দ দলের অনেকে প্রার্থী দিয়েছিল, নির্বাচন করেছে, আর নির্বাচনে জেতা না জেতা আলাদা কথা, কিন্তু আমাদের এই জোট থাকবে। এটুকু বলতে পারি, জোট শেষ হয়ে গেছে কে বলল?'

'শিগগিরই' চৌদ্দ দলের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'কার্যনির্বাহী বৈঠক করেছি, আমাদের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করব এবং আমি চৌদ্দ দলের সঙ্গেও বসব। তাছাড়া অনেকের সঙ্গে আমার নিজেরও যোগাযোগ আছে। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। যিনি সমন্বয়কারী তার সঙ্গে তো যোগাযোগ আছেই।'

উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গ

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বজনদের প্রার্থী দাঁড় করানোর বিষয়ে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের ফের নিরুৎসাহিত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর পরিবার দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন। তারা আগে নির্বাচন করেছেন। কেউ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান। তাদের তো রাজনৈতিক জীবনী আছে। তাদের মানা করি কী করে? 'তবে এটা ঠিক, এক জায়গায় বউকে দিল, আরেক জায়গায় ছেলেকে দিল, এগুলো ঠিক না। কর্মীদের মূল্যায়ন করা উচিত। সেটাই নেতাকর্মীদের বলতে চেয়েছি।'

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী, এই তো। তারপর হিসাব করে দেখেন কয়জন ছেলেমেয়ে, কয়জন স্ত্রী দাঁড়িয়েছে। এর বাহিরে তো পরিবার ধরা হয় না। আমাদের কথা হচ্ছে নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে, আমাদের সেটাই লক্ষ্য।

'সবকিছু নিজেরা নিয়ে নেব, আমার নেতাকর্মীদের জন্য কিছু রাখব না, এটা হয় না। সেই কথাটা আমি বলতে চেয়েছি। সবাই দাঁড়িয়েছে, নির্বাচন করছে, সেটার লক্ষ্য হলো নির্বাচনকে অর্থবহ করা।'

সমবায়ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা

সংবাদ সম্মেলনে সমবায়ভিত্তিক কৃষির ক্ষেত্রে কৃষকদের মধ্যে ভয় দূর করতে এবং আস্থার জায়গা তৈরিতে সরকারের পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চান এক সাংবাদিক। জবাবে সমবায়ভিত্তিক কৃষি নিয়ে নিজের ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সমবায়ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থায় সার, বীজ, চাষ ও মাড়াইয়ে সব ব্যবস্থাই সমবায়ের মাধ্যমে হবে। এখানে কৃষককে নিজের ব্যক্তিগতভাবে কোনো খরচ করতে হবে না। ওই ফসলের একটা অংশ সমবায়ের কাছে বা সরকারের কাছে থাকবে। যা পরবর্তী চাষের জন্য ব্যবহার করা হবে। সেভাবেই আমরা এটা করতে চাইছি। যেটা জাতির পিতা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু করতে দেওয়া হয়নি। করতে দেওয়া হলে আজ দেশে খাদ্যের ঘাটতি হতো না।'

প্রচলিত ব্যবস্থার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের দেশে পরিবার যখন বড় হয়ে যায়, তখন জমি ভাগ হয়ে যায় এবং জমিতে আইল বসানো হয়। জমিতে চাষ করতে গেলে, যান্ত্রিকীকরণ করতে গেলে একটানা বড় জমি লাগে। ছোট, খন্ড খন্ড জমিতে সেটা করা যায় না। সে কারণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলতেন, আমাদের যত আইল আছে, সেগুলো যদি জোড়া দেওয়া হয় ফরিদপুর জেলার মতো সমান জমি বের হবে। সেজন্য তিনি কৃষি যান্ত্রিকীকরণের কথা বলতেন। ট্রাক্টরসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা।'

হীরকজয়ন্তী ব্যাপকভাবে পালন করবে আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার হীরকজয়ন্তী পালন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা দলের ৭৫ বছর পালন করব ব্যাপকভাবে। বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখব, আমরা কোনো কোনো দেশকে আমন্ত্রণ করব। ব্যাপক কর্মসূচির পালনের জন্য আমরা উপ-কমিটি করব। উপমহাদেশের একটি দল '৭৫ বছর উদযাপন করছে এটাই বড় কথা।'

প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে যানজট কমে যাবে

এ সময় ঢাকার যানজট প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ট্রফিক নিয়ম অনেকেই মানেন না, এটা যানজটের জন্য অন্যতম একটি সমস্যা। মানুষ যদি নিজে সচেতন না হয়, তাহলে আর কত সচেতন করা যাবে। সেটা হলো বাস্তবতা।'

তবে ঢাকা শহরকেন্দ্রিক প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে যানজট কমে যাবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে যানজট শুধু কমবে না, জেলার সঙ্গে দ্রম্নত যোগাযোগ হবে। তাহলে সবাইকে আর ঢাকায় থাকতে হবে না। ঢাকার বাইরের উপশহরগুলোতে অনেকেই থাকবেন, ঢাকায় এসে কাজ করে চলে যাবেন। আর ডিজিটাল পদ্ধতিতো আছেই।'

এ সময় মেট্রোরেলের রক্ষণাবেক্ষণে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'একটা জিনিস তৈরি (মেট্রোরেল) করে দিয়েছি, সেটাকে রক্ষণাবেক্ষণ, যত্ন নেওয়া জনগণের দায়িত্ব। এটা তো তাদেরই দেখতে হবে। তারা নিজেরা যদি যত্নবান না হয়, তাহলে কত আর শেখানো যাবে। যা তৈরি করে দিয়েছি, তার যত্ন নিলে মানুষ সুফল পাবে বা পাচ্ছে।'

এ সময় রাজধানীর ফিটনেসবিহীন বাস প্রসঙ্গেও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'বেসরকারি বাস মালিকরা যদি ভাঙাচোরা বাস চালাতে পছন্দ করেন, তাহলে আমাদের কী করার আছে। ফিটনেস আছে কিনা সেটা দেখার বিষয় আছে। আর আমিতো ভলবো বাস কিনে এনেছিলাম। তখন বলা হয়েছিল, এই বাস বাংলাদেশে চলবে না, কিন্তু চলেছে। বিএনপি যখন ক্ষমতায় এলো, এতগুলো ভলবো বাসের একটিরও খবর নেই। সেগুলো পড়েছিল। আমরা আর্টিকুলেট বাস আনলাম, বিএনপি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিল। এখন যদি তারা আন্দোলনের নামে ভাঙা বাসগুলো পোড়ায়, তাহলে বিমার টাকাটাও পেল, তাদের আন্দোলনটাও চলল। সেটাও অনেক সময় করে। তবে নতুন বাসগুলো যেন না পোড়ায়। আমরা আনি কষ্ট করে, ওরা ধ্বংস করে।'

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত

জলবায়ু সম্মেলনে উন্নত দেশগুলোর '১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রম্নতি'র কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এটা হচ্ছে সব থেকে দুর্ভোগের যে, প্রতিবার জলবায়ু সম্মেলন হয়, অনেক প্রতিশ্রম্নতি পাওয়া যায়। আমরা ডিমান্ড করি, কিন্তু কাজের জায়গায় অর্থ আর কেউ দেয় না। ধনী দেশগুলো বা যারা আজ নিজেরা উন্নত হয়ে গেছে। তাদের কারণেই আজ এই জলবায়ু পরিবর্তনটা; যার অভিঘাতে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। এখানে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া তাদেরই এটা দায়িত্ব সব থেকে বেশি। তারা মুখে বলার সময় সব দিয়ে দেয়, কিন্তু কাজে খুব কম দেয়। এটা নিয়ে কিন্তু আমরা আন্তর্জাতিকভাবে সবসময় কথা বলে যাচ্ছি। আমরা প্রতিশ্রম্নতি যেটা পাচ্ছি কিন্তু আসলে টাকা তো দিচ্ছে না। এটা তো বাস্তব কথা। তারপরও আমরা বার বার বলে যাচ্ছি। এছাড়া আমরা নিজস্ব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে