চুনাপাথর নিয়ে দেশে ফিরছে আবদুলস্নাহ

প্রকাশ | ০১ মে ২০২৪, ০০:০০

সনজীব নাথ, চট্টগ্রাম
চুনাপাথর নিয়ে দেশের পথে যাত্রা শুরু করেছে সোমালিয়ান জলদসু্যদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া চট্টগ্রামের কবির গ্রম্নপের জাহাজ এমভি আবদুলস্নাহ। সঙ্গে ফিরছেন জাহাজটির ২৩ নাবিকও। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১২ বা ১৩ মে জাহাজটি কুতুবদিয়ায় পৌঁছাবে। মঙ্গলবার এ তথ্য জানান কবির গ্রম্নপের প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম। তিনি বলেন, মিনা সাকার বন্দর থেকে ৫৬ হাজার মেট্রিকটন চুনাপাথর বোঝাই শেষ হওয়ার পর ২৯ এপ্রিল মধ্যরাতে এমভি আবদুলস্নাহ দেশের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা। ১২ বা ১৩ মে জাহাজটি কুতুবদিয়ার কাছাকাছি গভীর সমুদ্রবন্দরে নোঙর করতে পারে। সেখানেই চুনাপাথর খালাস করা হবে। ২৩ জন নাবিক জাহাজেই দেশে ফিরছেন। এর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরে কয়লা খালাস করে গত শনিবার সকালে মিনা সাকার বন্দরে যায় এমভি আবদুলস্নাহ। সেখান থেকে ৫৬ হাজার মেট্রিকটন চুনাপাথর লোড করা হয় জাহাজে। তবে কোন আমদানিকারক চুনাপাথরের চালানটি দেশে আনছে, তা জানা যায়নি। এদিকে সোমালিয়ান জলদসু্যদের কবল থেকে মুক্তির পর নাবিকদের রিসিভ করতে দুবাই ছুটে যান জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রম্নপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাতের নেতৃত্বে একটি দল। সেই দলে রয়েছেন মেহেরুল করিমও। তিনি বলেন, এমভি আবদুলস্নাহর নাবিকরা বর্তমানে খোশমেজাজে রয়েছেন। নাবিকদের স্বাস্থ্য ও মানসিক অবস্থা ভালো রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের জেটিতে থাকা এমভি আবদুলস্নাহ থেকে কয়লা খালাস কার্যক্রম চলার ফাঁকে নাবিকরা দুবাইয়ের অভিজাত বিপণি কেন্দ্রগুলোয় কেনাকাটা করেছেন। নাবিকরা ছোট ছোট গ্রম্নপে বিভক্ত হয়ে কেনাকাটা করেন। কেনাকাটার এক ফাঁকে নাবিকদের সঙ্গে দেখা হয় দুবাইয়ে কর্মরত চট্টগ্রামের চন্দনাইশের সন্তান সাংবাদিক মোহাম্মদ গোলাম সরোয়ারের সঙ্গে। মোহাম্মদ আতিক উলস্নাহ খানের বাড়িও চন্দনাইশ উপজেলায়। সেই হিসেবে দুইজনকে বেশ উৎফুলস্ন দেখা যায়। এ সময় মোহাম্মদ গোলাম সরোয়ারের মোবাইলে তোলা নাবিকদের কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়। মোহাম্মদ আতিক উলস্নাহ খান বলেন, 'জাহাজ থেকে নামতে হলে আমিরাত সরকারের অনুমতি লাগে। গত বৃহস্পতিবার ৩ জন ও শুক্রবার ২০ জন আমরা জাহাজ থেকে নামার অনুমতি পেয়েছি। সেই হিসেবে বিভিন্ন গ্রম্নপে বিভক্ত হয়ে পরিবারের সদস্যদের জন্য বিভিন্ন মার্কেট থেকে কেনাকাটা করেছি আমরা। অনেকদিন পর যেন মাটির গন্ধ পেলাম আমরা।' এমভি আবদুলস্নাহ জাহাজের ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদ বলেন, 'জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামিরিয়া বন্দরে ফেরার পর দুই নাবিক বিমানে দেশে ফেরার কথা ছিল। পরে মত পাল্টে অপর ২১ নাবিকের সঙ্গে দেশে ফেরার মতপ্রকাশ করেন তারা। ফেরার পথে একটি বন্দর থেকে তেল ও খাবার সংগ্রহ করা হবে। আশা করছি, আগামী ১২ বা ১৩ মে দেশে পৌঁছাব। কুতুবদিয়ায় জাহাজের কার্গো খালাস করে চট্টগ্রাম বিচে নোঙর করব। তখন নাবিকরা পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন বা বাড়িতে যাবেন।' গত ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে ৫৮ হাজার টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে যাওয়ার পথে ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদসু্যদের কবলে পড়ে এমভি আবদুলস্নাহ। ওই জাহাজের ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়। জাহাজটির নাবিকরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুলস্নাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উলস্নাহ ও ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুরুদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ। ৩২ দিন জিম্মি থাকার পর মুক্তিপণের বিনিময়ে গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা ৮ মিনিটে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুলস্নাহ থেকে নেমে যায় সোমালিয়ার জলদসু্যরা। জলদসু্যরা নেমে যাওয়ার পরই জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুলস্নাহকে জলদসু্যদের নিয়ন্ত্রিত উপকূল থেকে সোমালিয়ার সীমানা পার করে দেয়। জাহাজটি ২১ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৪টায় আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে। পরদিন সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় নোঙর করে জেটিতে। সেখানে ৫৫ হাজার মেট্রিকটন কয়লা খালাসের পর ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় সেটি চুনাপাথর বোঝাই করার জন্য মিনা সাকার বন্দরে যায়। পরদিনই জাহাজটি দেশের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা থাকলেও চুনাপাথর বোঝাইয়ে বাড়তি সময় লাগার কারণে সেটি পিছিয়ে যায় বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। এর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে সোমালিয়ান জলদসু্যদের কবলে পড়েছিল কেএসআরএম গ্রম্নপের এস আর শিপিং লিমিটেডের আরেকটি জাহাজ এমভি জাহান মণি। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তবে এবার মাত্র ৩৩ দিনেই এমভি আবদুলস্নাহ জাহাজটিকে সোমালিয়ার জলদসু্যদের কবল থেকে মুক্ত করা হয়েছে। কেএসআরএমের তথ্যমতে, এস আর শিপিংয়ের অধীনে মোট ২৪টি জাহাজের মধ্যে সর্বশেষ যুক্ত হয় এমভি আবদুলস্নাহ। ২০১৬ সালে তৈরি এই বাল্ক ক্যারিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। ড্রাফট ১১ মিটারের কিছু বেশি। গত বছর জাহাজটি এস আর শিপিং কিনে নেওয়ার আগে এটির নাম ছিল গোল্ডেন হক। মালিকানা পরিবর্তনের পর জাহাজের নামও পরিবর্তন করা হয়। নতুন নাম রাখা হয় এমভি আবদুলস্নাহ।