বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১
ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক রাখার তাগিদ

সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফ

যাযাদি রিপোর্ট
  ০১ মে ২০২৪, ০০:০০
কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন

আগামীতে মুদ্রানীতি সংস্কারের ক্ষেত্রে ডলারসহ বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক রাখার আবারও তাগিদ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। দেশের অর্থনীতি আগের তুলনায় ভালো করছে বলেও প্রশংসা করেছে আন্তর্জাতিক এই দাতা সংস্থাটি। এ ধারা চললে আগামী দুই বছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে জানিয়েছেন আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন।

মঙ্গলবার ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর

অর্থনীতির আঞ্চলিক পূর্বাভাস বা 'রিজিওনাল ইকোনমিক আউটলুক' প্রকাশ উপলক্ষে কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন এসব কথা বলেন।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বাংলাদেশের চলতি হিসেবে উদ্বৃত্ত ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার। একই সময়ে আর্থিক হিসাবে ৮৩০ ডলার ঘাটতি ছিল, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে চার গুণ বেশি।

কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কম থাকার জন্য দায়ী আর্থিক হিসাবে অবনতি। একই কারণে বাংলাদেশের স্থানীয় মুদ্রা বা টাকাও চাপের মধ্যে রয়েছে। মুদ্রা বিনিময় হার নমনীয় করার পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশ আর্থিক হিসাব ভালো হওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল পাবে।

বিশ্ব অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সারা বিশ্বের মতো এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনীতিও ধাক্কা খেয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে অর্থনীতির টেকসই পুনরুদ্ধারের জন্য রাজস্বনীতির সংস্কারের

পাশাপাশি মুদ্রা বিনিময় হারকেও নমনীয় করা উচিত।

আর্থিক হিসাবে ঘাটতি পূরণে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ দিতে প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ আইএমএফ। গত বছরের ৩০ জানুয়ারি থেকে দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ও করছে। তৃতীয় কিস্তির অর্থ পাওয়ার জন্য পুনর্মূল্যায়ন চলছে।

এই ঋণের শর্ত পূরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা জানিয়ে কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সমস্যা মোকাবিলা করার চেষ্টায় আছে বাংলাদেশ। দেশটি সক্রিয়ভাবে এ বিষয়ে আইএমএফের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে এবং আইএমএফ সেই সহায়তা করেছেও। আর তাই সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে এখন কিছুটা ভালো করছে বাংলাদেশ।

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কমে ৫ দশমিক ৭ শতাংশে নামতে পারে। আগের অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ৬ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৬ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছে।

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য ৪ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করেছে আইএমএফ, যা ছয় মাস আগের চেয়ে দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, এশিয়া মহাদেশে তুলনামূলক দ্রম্নত কমেছে মূল্যস্ফীতি। ভারত ও চীনে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। নতুন সুখবর দিচ্ছে প্যাসিফিক অঞ্চলে পর্যটকদের বাড়তি আনাগোনা।

কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি কমা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার নিয়ন্ত্রণ অর্থনীতিতে ভারসাম্য আনছে। চীন ভালো-খারাপ দুই ধরনের বার্তাই দিচ্ছে। কেননা দেশটিতে সার্বিক বিনিয়োগ বাড়লেও আবাসন খাতে মন্দাভাব আছে। আগামীতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক কোথায় যায় সেটাও ভেবে দেখার বিষয়।

বাংলাদেশ ইসু্যতে আইএমএফ জানায়, বড় কোনো শঙ্কা নেই। সে কারণে বাংলাদেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি আগামী দুই বছর বাড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইএমএফ বেশ কিছু বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করছে। আর্থিক খাতে উন্নতি চোখে পড়ার মতো। সে কারণে আমরা মনে করি চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং পরের বছর তা আরও ১ শতাংশ বাড়বে। কিন্তু টাকার ওপর চাপ কমাতে হবে। সে জন্য মুদ্রা বিনিময় হার আরও সহনশীল করার বিকল্প নেই। এশিয়ার অন্যান্য দেশও কিন্তু একই কাজ করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে