মহান মে দিবস আজ
স্বীকৃতিহীন শ্রমিক, অনিশ্চিত জীবন
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে নানান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শ্রমিক সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
প্রকাশ | ০১ মে ২০২৪, ০০:০০
বীরেন মুখার্জী
বাংলাদেশ এখন কর্মক্ষমতার স্বর্ণযুগে। দেশের ৬৫ শতাংশ মানুষই কর্মক্ষম। ২০২৩ সাল শেষে দেশের যুব শ্রমশক্তি দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৬২ লাখ ৮০ হাজার। এছাড়া দেশে অর্থনৈতিকভাবে কর্মক্ষম শ্রমশক্তি রয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি। তবে এর মধ্যে প্রায় ৯২ শতাংশ শ্রমিকের নেই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি। এরা হলেন- নির্মাণ শ্রমিক, জাহাজভাঙ্গা শ্রমিক, গৃহশ্রমিক, মাটিকাটা শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক, জেলে বা মৎস্যজীবী শ্রমিকসহ অসংখ্য কারখানার শ্রমিক। বিপুল এই অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিককে মাঝে মধ্যেই কর্মহীন থাকতে হয়। বৃহৎ এই জনগোষ্ঠীর জন্য নেই কোনো সুরক্ষা বা সুনির্দিষ্ট মজুরি। পোশাক কারখানাসহ ৫৪ ধরনের শিল্পে সরকার সর্বনিম্ন মজুরি বেঁধে দিলেও দ্রব্য মূল্যের লাগামহীন এই সময়ে এই শ্রমিকের বিশাল একটি অংশ অনিশ্চিত জীবন-যাপন করেন। এমন বাস্তবতায় স্বীকৃতিহীন শ্রমিকদের বেঁচে থাকা এখন বড় চ্যালেঞ্জের। এরই মাঝে বছর ঘুরে আবার এসেছে শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম আর সংহতির দিন মহান মে দিবস। এ বছর 'শ্রমিক মালিক গড়বো দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ' প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
তথ্য অনুযায়ী, ১৮৮৬ সালে ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজের পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা কাজ করার দাবিতে আন্দোলনে নামেন। ওই দিন অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে গিয়ে কয়েকজন শ্রমিককে জীবন দিতে হয়েছিল। উত্তাল সেই আন্দোলনের মুখে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। এরই পথ ধরে বিশ্বব্যাপী দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের সময় চালু করা হয়। এরপর ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সমাবেশে ১ মে'কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর পরের বছর থেকে বিশ্বব্যাপী এ দিনটি পালিত হয়ে আসছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার কর্মক্ষম শ্রমিকের মধ্যে প্রায় ৬ কোটি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। বাকি শ্রমিক বেকার। পরিসংখ্যান আরও বলছে, পরিবারের মধ্যে কাজ করেন কিন্তু কোনো মজুরি পান না এমন মানুষের সংখ্যা ১ কোটির বেশি।
আর প্রায় সোয়া এক কোটি আছেন দিনমজুর, যাদের কাজের নিশ্চয়তা নেই, নেই মজুরির নিশ্চয়তা। দেশে বিভিন্ন পেশার প্রায় ৭ কোটি শ্রমিক রয়েছেন। এর মধ্যে ১০ শতাংশের কম শ্রমিকের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি রয়েছে।
দেশের বিপুল পরিমাণ অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিককে রোগ-বালাই, অসুখ-বিসুখ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দুর্ঘটনায় ও মৃতু্য পরবর্তী সৎকার বা আনুষঙ্গিক কাজের সময় মানুষের দয়ার ওপর নির্ভর করতে হয়। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকায় তারা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়
প্রয়োজনে নূ্যনতম অর্থ পান না। ২০১৩ সালে নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য বিমার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা অজানা কারণে বন্ধ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) জরিপ অনুযায়ী, ২০২৩ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৭০৯ জন শ্রমিকের মৃতু্য হয় (২০২২ সালের তুলনায় ৩১ শতাংশ কম), এর মধ্যে ৭০৬ (৯৯ শতাংশ) জন পুরুষ এবং তিনজন (১ শতাংশ) নারী শ্রমিক। খাত অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ২৪৬ (৩৪ শতাংশ) জন শ্রমিকের মৃতু্য হয় পরিবহণ খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১৩ (১৫ শতাংশ) জন শ্রমিকের মৃতু্য হয় নির্মাণ খাতে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯৭ (১৩ শতাংশ) জন শ্রমিক মারা যান কৃষি খাতে। এ ছাড়া রিকশাশ্রমিক ৪৪ জন, প্রবাসী শ্রমিক ৩৫, দিনমজুর ২৯, মৎস্যশ্রমিক ২৬, বিদু্যৎ খাতে ১৫, নৌপরিবহণ খাতে ১৫, স্টিল মিলে ১১ এবং অন্যান্য খাতে ৭৮ জন শ্রমিক নিহত হন।
সড়ক দুর্ঘটনা, বিদু্যৎস্পৃষ্ট হওয়া, বজ্রপাত, অগ্নিকান্ড, সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়ে ট্রলারডুবি, পড়ন্ত বস্তুর আঘাত, মাথায় কিছু পড়া, বিষাক্ত গ্যাস, নৌ-দুর্ঘটনা, দেয়াল বা ছাদ ধসে পড়া, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, বন্য পশুর আক্রমণ ইত্যাদি কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
জরিপে ২০২৩ সালে কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার পথে ৪০ জন শ্রমিক নিহত এবং ৩১ জন শ্রমিক আহত হয়। নিহত শ্রমিকদের মধ্যে ১৩ জন (৩২ শতাংশ) নারী শ্রমিক এবং আহত শ্রমিকদের মধ্যে তিনজন (৯ শতাংশ) নারী শ্রমিক ছিলেন।
দেশে সবচেয়ে বেশি শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে ২০১৩ সালে সাভারের রানা পস্নাজা ধসে। এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১,১৩৬ জন। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল ২,৪৩৮ জনকে। তবে এ দুর্ঘটনার পর ভবন ধসের মতো একই ধরনের বিপর্যয় এড়ানোর জন্য পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানে নজর দেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, রানা পস্নাজা ছিল শ্রমিকদের অধিকারের উন্নয়ন এবং সবার জন্য নিরাপদ কারখানা নিশ্চিত করার জন্য একটি নতুন সংগ্রামের সূচনা। কিন্তু বাস্তবতা হলো- ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় শ্রমিকের ন্যায্য ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আজো মিমাংসা হয়নি।
এদিকে প্রবাসী শ্রমিক ও দেশের পোশাক খাতের শ্রমিকের হাত দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ এলেও এ দুই খাতের বাইরে এখনো তেমন কোনো বিকল্প উৎস বের করতে পারেনি সরকার। তাই এখনো শ্রমিকরাই দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। অথচ আজও শ্রমিকের জীবনের ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মেলেনি। তৈরি পোশাক খাতে বর্তমানে শুধু বিজিএমইএর মালিকদের কারখানাতেই ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। আরও বিভিন্ন ছোট ছোট কারখানায় রয়েছেন অন্তত ১০ লাখ শ্রমিক। এর ৬০ শতাংশই নারী। যদিও নারী শ্রমিকের সংখ্যা ৮০ শতাংশ ছিল। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে কমছে নারী শ্রমিক।
অন্যদিকে, প্রবাসী শ্রমিকদেরও রয়েছে নানা বৈষম্য। এখনো তারা দেশে ফিরতে গিয়ে এয়ারপোর্টে হয়রানির শিকার হন। ইমিগ্রেশন থেকে কাস্টমস সব জায়গায় শুধু হয়রানি। শ্রমিক মৃতু্যর হারও অনেক বেশি। অথচ তারা প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স পাঠান।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, 'অভিবাসীদের ঘামের চাকায় অর্থনীতি সচল রয়েছে। অথচ তাদের জন্য এখনো অনেক কিছু করার বাকি। যদিও কিছু কাজ হয়েছে। আলাদা মন্ত্রণালয়, আলাদা ব্যাংক। কিন্তু প্রবাসীদের সামাজিক মর্যাদা এখনো দাঁড় হয়নি। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শ্রমিকের জীবনমান এখনো অনেক অনিশ্চিত। আমরা জানি ওই দেশগুলোতে গণতন্ত্র নেই, রাজতন্ত্র চলে। ফলে মানবাধিকার নিশ্চিত করা কঠিন। এরপরও সরকার দ্বিপক্ষীয়ভাবে কিছু সমাধান করেছে। তারা নিজেরা এখন পাসপোর্ট ও মোবাইল রাখতে পারে। ব্যাংকের মাধ্যমে বেতন নিচ্ছে। এখন যেসব সমস্যা আছে তা আর দ্বিপক্ষীয় নয়, বহুপক্ষীয় সমস্যা। এগুলো সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।'
জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, 'শ্রমিকদের জন্য কর্মক্ষেত্র নিরাপদ করার আন্দোলনের ফলে এখন কর্মপরিবেশ ঠিক হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবা ও মজুরির বিষয়টি এখনো অপ্রতুল। এখনো এখাতে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি আট হাজার টাকা। এটি অন্তত ২০ হাজার টাকা হওয়া উচিত।'
বিশ্লেষকদের মতে, দেশে এখনো আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) নির্দেশিত রীতি-পদ্ধতি পুরোপুরি মানছেন না মালিকপক্ষ। শ্রমিকদের দীর্ঘদিন লড়াইয়ের পর সরকারি নির্দেশনা ও ঘোষণায় মালিকপক্ষ 'নূ্যনতম বেতন' মেনে নিলেও মালিক পক্ষ 'বাড়তি' ব্যয় বাড়াতে চায় না। এছাড়া অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকের জন্যও নেই কোনো উদ্যোগ।
এ বিষয়ে ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম শহিদুল আলম বলেন, 'নির্মাণ শ্রমিকরা দুর্ঘটনায় মারা গেলে তাদের কেউ খোঁজ নেওয়ার থাকে না। তাদের লাশটি বাড়ি পাঠাতেও চাঁদা তুলতে হয়। সরকারি সাহায্য পাওয়া সোনার হরিণ। অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর কেউ কেউ সরকারি সহায়তা পায়, তবে তা অনেক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তাছাড়া সরকারি সহায়তা পেতে শ্রমিকের স্বীকৃতির বিষয়টিও রয়েছে। এতসব কাগজপত্র গুছিয়ে কেউ আর সহায়তার নাম মুখে নেয় না। আমরা প্রস্তাব করেছিলাম, যাতে সব শ্রমিক সমানভাবে এই সহযোগিতা পায়, তবে সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।'
এটা ঠিক যে, দেশে প্রতি বছরই শ্রমশক্তি বাড়ছে। বাড়ছে যুব শ্রমশক্তিও। বর্তমানে দেশে ২ কোটি ৬২ লাখ ৬০ হাজার যুব শ্রমশক্তির মধ্যে পুরুষ ও নারী প্রায় সমান। তবে স্বীকার করতেই হবে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমছে। বিদু্যৎ, গ্যাস সংকট ও আমদানির ঋণপত্র খুলতে না পারার কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যারা টিকে আছে, তারাও কারখানা পুরো বন্ধ না করলেও শ্রমিক ছাঁটাই করছে। এর মধ্যে নিত্যনতুন প্রযুক্তির কারণেও শ্রমিকের চাহিদা কমছে। ফলে শ্রমিকরা কাজ হারাচ্ছেন।
যুব জনগোষ্ঠীকে সম্পদে পরিণত করার জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। কিছু প্রকল্প পরিকল্পনার মধ্যে সীমাবদ্ধ। সম্প্রতি 'দেশের ৪৮টি জেলায় শিক্ষিত কর্মপ্রত্যাশী যুবকদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রকল্প' নামে বিশেষ প্রকল্প নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি সম্প্রতি অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের লক্ষ্যে ৩ বছরে ২৮ হাজার ৮০০ বেকার যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রায় ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্পটি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ করতে চায়। এছাড়া আছে আরও বেশ কিছু বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প।
তবে দেশে বেকারত্বের হারও বেড়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ২০ শতাংশ। অন্যদিকে নারীদের বেকারত্বের হার বেড়েছে। ডিসেম্বর শেষে নারীদের বেকারত্বের হার বেড়ে হয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে এ বেকারত্বের হার ছিল ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, শ্রমিকের মানোন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষার যেসব ব্যবস্থা রয়েছে, তার মধ্যেও শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্তি জরুরি। তাদের স্বীকৃতির ব্যবস্থা করতে হবে। কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের শ্রম আইনে নিয়োগপত্র দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও অন্য শ্রমিকের কোনো নিয়োগপত্র দেওয়া হয় না। শ্রমিকরা এভাবে অধিকার বঞ্চিত হন। বিষয়টি সরকারকে বিবেচনা করতে হবে। তাহলে স্মার্ট দেশ গঠনও ত্বরান্বিত হবে।
এদিকে মহান মে দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো দিনটি উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান ও টকশো সম্প্রচার করবে।
বিশ্বের সব শ্রমজীবী মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেন, '২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে উন্নত কর্মপরিবেশ, শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক, শ্রমিকের পেশাগত নিরাপত্তা ও সুস্থতাসহ সার্বিক অধিকার নিশ্চিতকরণের কোনো বিকল্প নেই।'
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের মেহনতি মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে তার বাণীতে বলেন, 'আওয়ামী লীগ মনে করে শ্রমজীবী মেহনতি মানুষই দেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি। শ্রমজীবী মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বাংলাদেশ উন্নীত হয়েছে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে। আর তাদের নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রমের মধ্যেই নিহিত রয়েছে দেশের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ।'
মহান মে দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে নানান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শ্রমিক সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এ উপলক্ষে আজ বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। তবে তাপপ্রাহের কারণে মে দিবসের শোভাযাত্রা সংক্ষিপ্ত করবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
নানা দলের কর্মসূচি
মহান মে দিবস উপলক্ষে আজ বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় শ্রমিক লীগের উদ্যোগে শ্রমিক জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। জনসভায় প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ জানান, মহান মে দিবস উপলক্ষে আজ দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর নয়াপল্টনে শ্রমিক সমাবেশ শুরু হবে। সমাবেশের পর বর্ণাঢ্যর্ যালি বের করবেন অংশগ্রহণকারীরা। সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দেবেন।
এ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল শ্রমজীবী মেহনতি মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিনে বলেছেন, সমাজ প্রগতির পতাকাবাহী শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি সংকল্পবদ্ধ এবং শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আগামীতেও আমরা একইভাবে শ্রমজীবী-কর্মজীবী মানুষের কাজের পরিবেশ নিরাপদ এবং তাদের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাব।
ফরিদপুরের মধুখালীতে দুই শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে বুধবার সারাদেশে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের সমাবেশ ওর্ যালি অনুষ্ঠিত হবে। শ্রমিক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর চারটি স্পটে সমাবেশ ওর্ যালি ডেকেছে সংগঠনটি।
বিশ্বের সব শ্রমজীবী মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ বলেছেন, অবিচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাবি আদায়ের দিন পহেলা মে। ইতিহাসের পাতায় মে দিবস উজ্জ্বল হয়ে থাকলেও শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রম এখনো শেষ হয়নি।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতা জি এম কাদের তার বাণীতে উলেস্নখ করেন, মহান মে দিবস হলো শোষকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অধিকার আদায়ের সংগ্রামের অনুপ্রেরণা। মে দিবস লড়াই করতে শেখায় নির্যাতন-নিপীড়ন আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে। এই দিনটি সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকতে শেখায়।
সংকটকালে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত, শ্রমজীবী মানুষের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান ও চিকিৎসার নিশ্চয়তার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া। তারা বলেন, মহান মে দিবসে নতুন করে শপথ নিয়ে শ্রমিকশ্রেণিকে সব ধরনের শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।
অন্যদিকে আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ সব শ্রমিক এলাকায়র্ যালি, সমাবেশ ও আলোচনা কর্মসূচি করবে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি কেন্দ্রীয় কমিটি। সংগঠনের সহ-প্রচার সম্পাদক হযরত বিলস্নাল জানান, আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে সকাল সাড়ে ৯টায় লালর্ যালির মধ্য দিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন হবে। কেন্দ্রীয় সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সমাবেশ শেষের্ যালি করবেন।
হজরত বিলস্নাল আরও জানান, সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় বেলা ৪টায় সভা অনুষ্ঠিত হবে। গাজীপুরের টঙ্গী ২৭-এর্ যালি অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১১টায়। নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সকাল ১০টায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রামের ইপিজেডে সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতের্ যালি ও সমাবেশ করবে গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি।