অনুমোদন ছাড়া বিদেশি ওষুধ বিক্রি ও আমদানি বন্ধে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে ওষুধ উৎপাদনের জন্য আমদানি করা কাঁচামালও বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
পাশাপাশি অব্যাহতভাবে ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি রোধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুলস্নাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ সংক্রান্ত শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন। আদালতে এ দিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া। আর রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ ও আনিচ উল মাওয়া।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাবের) করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এমন নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ৩০ দিনের মধ্যে ইচ্ছামতো মূল্য নির্ধারণকারী ওষুধ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রিটকারী সংগঠনের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জানান, সব ওষুধের মূল্য নির্ধারণ সরকারের করে দেওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।
গত ১৫ মাসে ১১৭টি ওষুধের দাম ১৩ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে ইচ্ছামতো মুনাফা করছে ওষুধ কোম্পানিগুলো কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো নজরদারি কিংবা কার্যকর ব্যবস্থা। এই পরিস্থিতিতে নাগরিকদের পক্ষে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে ক্যাব। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং অনুমোদনহীন বিদেশি ওষুধ ও কাঁচামাল আমদানি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
'দুই সপ্তাহে ওষুধের দাম বেড়েছে ৭ থেকে ১৪০ শতাংশ' শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করা হয়। ক্যাব এ রিট করে।
পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই মাসে দেশের বিভিন্ন কোম্পানি তাদের উৎপাদিত ওষুধের দাম লাগামহীনভাবে বাড়িয়েছে। অন্তত ৫০ ধরনের ওষুধের দাম ২০ থেকে সর্বোচ্চ ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। চলতি মার্চের প্রথম সপ্তাহেও দাম বাড়ানো হয়েছে বেশ কয়েকটি ওষুধের।
সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট, ডায়াবেটিসের রোগীদের ইনসুলিন ও ইনজেকশনের দাম। এছাড়া হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা, হাঁপানিসহ বিভিন্ন ওষুধ এবং ভিটামিনের দামও বেড়েছে। বাদ যায়নি জ্বর-সর্দির ট্যাবলেট-ক্যাপসুল, বিভিন্ন অসুখের সিরাপও।
বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং বিক্রি থেকে আয়ের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দাম বাড়ানোর হার অস্বাভাবিক। এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির অজুহাত হিসেবে কোম্পানিগুলো ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করছে। এ সময় গ্যাস-বিদু্যতের মূল্য বৃদ্ধি ও উৎপাদন খরচ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ওষুধ কোম্পানিগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা।