প্রচন্ড দাবদাহে বাড়ছে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা
প্রকাশ | ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
রেজা মাহমুদ
এবার পুরো এপ্রিলজুড়েই দেশব্যাপী লোডশেডিং করেছে বিদু্যৎ বিভাগ। গরমের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এর হারও। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে লোডশেডিং পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। এমনকি রেকর্ড বিদু্যৎ উৎপাদন সত্ত্বেও চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি বেড়ে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিদু্যৎ পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে।
বিদু্যৎ বিভাগের তথ্যনুযায়ী সর্বশেষ রোববার সারাদেশে বিদু্যতের চাহিদা ছিল দিনে ১৫ হাজার ২শ' মেগাওয়াট এবং রাতে ১৭ হাজার ২শ' মেগাওয়াট। এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে দিনে ১৩ হাজার ৪৫১ ও রাতে ১৫,৮১৬ মেগাওয়াট। ফলে গড় ঘাটতি ছিল প্রায় ১৮শ' মেগাওয়াট। এতে রাজধানীতে তেমন লোডশেডিং না করা হলেও বাইরে নিয়মিত বিরতিতে লোডশেডিং করা হয়েছে। তবে সোমবার অন্য দিনের তুলনায় ঢাকার বেশকিছু এলাকায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে।
বিদু্যৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, 'নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎ সরবরাহে আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। কিন্তু তাপমাত্রা যে হারে বাড়ছে তাতে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানীর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি হয়ে যাওয়া বিদু্যৎ কেন্দ্র, পরিবহণ ও বিতরণ ব্যবস্থার বিভিন্ন যন্ত্রাংশে টেকনিক্যাল ইরর দেখা দিচ্ছে, নিয়মিত কুলিং সিস্টেম যথাযথভাবে কাজ করছে না। ফলে রাজধানীতেও লোডশেডিং করতে হচ্ছে। দেখা গেছে ৩৫ থেকে ৩৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা পর্যন্ত এসব যন্ত্রাংশ প্রপার কাজ করে, এর বেশি তাপমাত্রায় নানা জটিলতা দেখা দেয়। তবে আমাদের টেকনিশিয়ানরা কাজ করছে, আশা করঠিছ দ্রম্নত এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে'।
বাংলাদেশ বিদু্যৎ উন্নয়ন
বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্যানুযায়ী, চলতি মাসে বিদু্যতের রেকর্ড উৎপাদনের পাশাপাশি বিদু্যতের চাহিদা ভেঙেছে অতীতের সব রেকর্ড। প্রচন্ড গরমে আবাসিক গ্রাহকদের বিদু্যতের ব্যবহার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী বিদু্যৎ সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিদু্যৎ বিভাগকে। বিশেষ করে এসির ব্যবহার বৃদ্ধিতে বিদু্যতের চাহিদা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপিডিবি'র কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব আবাসিক লাইনে দিনে ১৫ কিলোওয়াট বিদু্যৎ ব্যবহার হতো সেবব লাইনে এখন ৪০ কিলোওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। রাতারাতি এই পরিমাণ বিদু্যতের জোগান দিতে গিয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে ঢাকাতেও লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে। রাজধানীর কল্যাণপুর, বনানী, মিরপুর, আদাবর, জুরাইন, দনিয়া, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। এদিকে বিদু্যতের লোড ব্যবস্থাপনা নিয়ে সম্প্রতি সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে লোড ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিদু্যৎ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে হিসেবে এখন থেকে শহরেও যৌক্তিক লোডশেডিং দেওয়া হবে। পাশাপাশি বড় বিপণিবিতান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিদু্যৎ ব্যবহারের বিষয়ে সাশ্রয়ী নীতি এবং রাত ৮টার পর মার্কেট বন্ধের নিয়ম কঠোরভাবে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিদু্যৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, যে হারে বিদু্যতের চাহিদা বাড়ছে সে হারে উৎপাদন না হওয়ায় সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না। তবে আগামী মাস থেকে বেশকিছু তেলভিত্তিক পাওয়ার পস্ন্যান্টগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাদের বয়েকায় পরিশোধের বিষয় রয়েছে, তা নিয়েও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। আশা করা যায় মে মাসের শুরুতেই কিছু বকেয়া পরিশোধ এবং জ্বালানি তেলের সরবরাহ বাড়িয়ে কয়েকটি পাওয়ার পস্নান্ট চালু করা যা্েব। তা করা গেলে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং কিছুটা হলে কমে আসবে এবং সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।
এর আগে ২৩ এপ্রিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদন হয়েছে। এর দুদিন আগে সর্বোচ্চ বিদু্যৎ উৎপাদনের রেকর্ড ছিল ১৫ হাজার ৬৬৬ মেগাওয়াট। এরপরও ঢাকার বাইরে অঞ্চলভেদে চাহিদার তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বিদু্যৎ ঘাটতি থাকছে।
বিদু্যৎ বিভাগের তথ্যমতে, দেশের বিদু্যৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু জ্বালানি সংকট, বেসরকারি বিদু্যৎ কেন্দ্রগুলোর বকেয়া বৃদ্ধি, সঞ্চালন লাইনের সীমাবদ্ধতা এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজে অনেক কেন্দ্র বন্ধ থাকায় সক্ষমতা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় বিদু্যৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না।