দখল-বিক্রিতে জড়িতদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
ফুটপাত তুমি কার?
প্রকাশ | ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
সাখাওয়াত হোসেন
পথচারীদের নিরাপদে হাঁটার জন্য ব্যস্ত সড়কের পাশে শত শত কোটি টাকা খরচ করে ফুটপাত নির্মিত হলেও এর সিংহভাগই বছরের পর বছর ধরে হকারদের দখলে। আবার কোথাও বা নির্মাণসামগ্রীর স্তূপ, কোথাও আবার ফুটপাত গুঁড়িয়ে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পার্কিং লট তৈরি করা হয়েছে। ফলে পথচারীদের জীবন ঝুঁকি নিয়ে দ্রম্নতগামী যানবাহনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাস্তা দিয়েই হাঁটতে হচ্ছে। এতে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।
সিটি করপোরেশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে ফুটপাতের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করলেও কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তা ফের বেদখল হয়ে যাচ্ছে। অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দাবি, ফুটপাত বিক্রি, দখলের সঙ্গে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও ক্যাডার এবং থানা পুলিশের সম্পৃক্ততা থাকায় তা হকারমুক্ত রাখা যাচ্ছে না। তবে তারা এ জন্য পাল্টা সিটি করপোরেশনকে দায়ী করেছেন। তাদের ভাষ্য, সিটি করপোরেশনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে ফুটপাত, এমনকি রাস্তা ইজারা দিচ্ছে। এই সুযোগে অবৈধ দখলদাররা ফুটপাত ভাড়া দিয়ে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
চলমান এই পরিস্থিতিতে সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যারা ফুটপাত দখল ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত, তাদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৩ মের মধ্যে আদালতে তালিকা দাখিল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সচিবকে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
তবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এই নির্দেশ কতটা বাস্তবায়ন করবে, তা নিয়ে অনেকের সন্দেহ রয়েছে। তারা জানান, এর আগে, ২০২৩ সালের ২৪ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন) ড. মলয় চৌধুরীর সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ফুটপাত বিক্রি ও দখলের সঙ্গে রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে সভার আলোচ্যসূচিতে উঠে আসে। সভায় ১৫ দিনের মধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে বিদ্যমান
ওয়াকওয়ে ও ফুটপাতের তালিকা এবং অবৈধভাবে তা দখলকারীদের তালিকা করতে বলা হয়। অন্য এক সিদ্ধান্তে ফুটপাত ভাড়া ও বিক্রির অবৈধ অর্থ আদায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তালিকা ১৫ দিনের মধ্যে দাখিলের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয় জননিরাপত্তা বিভাগ, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও রাজউককে। তবে ১৫ দিনের মধ্যে তালিকা ও দখলকারীদের নাম দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও আট মাসে তা দাখিল করা হয়নি।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ২০১৬ সালে 'দ্য স্টেট অব সিটিজ ২০১৬: ট্রাফিক কনজেশন ইন ঢাকা সিটি-গভর্নেন্স পারসপেক্টিভ' শিরোনামে এক গবেষণায় বলে যে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ফুটপাতের হকারদের কাছ থেকে বছরে এক হাজার ৮২৫ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। যা ওই সময় দুই সিটি করপোরেশনের মোট বাজেটের চেয়ে বেশি ছিল। আর প্রতিদিন চাঁদা আদায় হয় ৬০ কোটি টাকারও বেশি।
ওই গবেষণায় ঢাকায় তখন মোট হকারের সংখ্যা বলা হয় তিন লাখ। আর প্রতি হকারের কাছ থেকে গড়ে তখন প্রতিদিন ১৯২ টাকা চাঁদা আদায় করা হতো। ওই গবেষক দলের প্রধান ছিলেন ড. মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ। তিনি বর্তমানে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির গেস্নাবাল স্ট্যাডিজ অ্যান্ড গভর্নেন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি জানান, 'হকারদের সংখ্যা আমরা সংবাদমাধ্যম থেকে নিয়ে পরে যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছি। আর চাঁদার পরিমাণ জেনেছি সরেজমিন কাজ করে।
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের টার্গেট ছিল ফুটপাতের অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা। দেখলাম, এর একটি রাজনৈতিক অর্থনীতি আছে। এই চাঁদা রাজনৈতিক লোকজন, পুলিশ ও লাইনম্যানরা নেয়। লাইনম্যানরা আবার পুলিশের নিয়োগ করা। আমরা প্রস্তাব করেছিলাম যে, সিটি করপোরেশন যদি এটা রেগুলারাইজ করে ট্যাক্স হিসাবে নেয়, তাহলে চাঁদাবাজি বন্ধ হবে এবং সরকারের আয় হবে।'
ওই গবেষণায় বলা হয়, ফুটপাতে চার বর্গফুট জায়গার জন্য মাসে তিন হাজার টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। আর প্রতিটি লাইটের জন্য প্রত্যেক দিন নেওয়া হয় ২৫ টাকা করে। মাসে দুই হাজার টাকা।
এই গবেষক বলেন, নতুন করে কোনো গবেষণা না হলেও পর্যবেক্ষণ বলছে এখন হকার বেড়েছে। চাঁদার আকারও বেড়েছে। আর আগের অবস্থাই বহাল আছে। পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা এবং লাইনম্যানরাই এখনো ফুটপাতের চাঁদা নিয়ন্ত্রণ করছে।
হকার লীগের সভাপতি আবুল কাসেমও চাঁদাবাজির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, 'এখন ঢাকা শহরে সাড়ে তিন লাখ হকার আছে। তাদের কাছ থেকে সর্বনিম্ন প্রতিদিন ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা নেওয়া হয়। এটা এলাকা এবং আকারের ওপর নির্ভর করে। গড়ে কমপক্ষে ৩০০ টাকা চাঁদা আদায় হয় প্রতিদিন প্রতিজন হকারের কাছ থেকে। আর ঈদের আগের এক মাস এই রেট বেড়ে যায়।
তার হিসাব সঠিক ধরে নিলে ঢাকায় প্রতিদিন এখন হকারদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয় ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বছরে তিন হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। এই চাঁদা কারা নেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কতিপয় পুলিশ, সিটি করপোরেশনের লোক এবং স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলের কিছু রাজনৈতিক নেতা ওই চাঁদা নেন। আর এই টাকা তোলার জন্য তারা লাইনম্যান ও ক্যাশিয়ার নিয়োগ করেন।
এদিকে তথ্য অনুসন্ধানে রাজধানীর বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ফুটপাত বছরওয়ারি ইজারা দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর নিউ মার্কেট ও বায়তুল মোকাররম এলাকার ফুটপাতে চলাচল কেবলই ক্রেতা আর বিক্রেতার। কারণ, এই দুই এলাকার ফুটপাতে সাধারণ পথচারীদের হাঁটাচলা করার সুযোগ নেই। সবই বেদখল দোকানে। প্রায় সাত হাজারের মতো দোকান রয়েছে। এর মধ্যে বায়তুল মোকাররম এলাকার ফুটপাতে রয়েছে আড়াই হাজারের মতো।
অভিযোগ রয়েছে, এসব দোকান থেকে থানা পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ স্থানীয় কাউন্সিলর, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক নেতা, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা ও হকার্স নেতারা চাঁদা আদায় করছেন। ১৫০ জনের মতো লাইনম্যান প্রতিদিন চাঁদা তুলে পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে ভাগবণ্টন করে দেন।
বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের এক নেতা বলেন, 'ফুটপাত এখন সোনার খনি হয়ে গেছে। এখানে বিএনপি-আওয়ামী লীগ বলে কথা নেই। সব নেতাই নীরবে ব্যবসা করছে। কেউ ডানে ঘুরিয়ে খায়, আবার কেউ বামে খায়। রাজধানীতে এখন প্রায় তিন লাখের মতো হকার রয়েছে। লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজরা হকারদের রক্ত চুষে খাচ্ছে। আমরা কিছুই করতে পারছি না। স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতা এবং পুলিশ এসবে শেল্টার দেয়। এভাবে শত কোটি টাকার চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে চলেছে।'
এদিকে নিউ মার্কেট এলাকায় প্রায় ২০০ জন লাইনম্যান এসব চাঁদার টাকা তোলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিউ মার্কেট জোনের ফাঁড়ির ইনচার্জ রাজিবুল ইসলাম রাজিব বলেন, চাঁদার টাকা কোথায় যায়, জানি না। থানা পুলিশ এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবে।
সরেজমিন রাজধানীর শ্যামলী, আদাবর ও মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, টাউন হল, কৃষি মার্কেট, তাজমহল রোড এবং লিংক রোড এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোনো ফুটপাতেই পথচারীদের হাঁটার কোনো উপায় নেই। ফুটপাতের ওপর বসানো হয়েছে সারি সারি চা-শিঙাড়ার দোকান, ফল, সবজি ছাড়াও নানা রকমের ভ্রাম্যমাণ দোকান, জুতার দোকান ও নার্সারি। এ ছাড়া মূল সড়ক দখল করে গাড়ি পার্কিং করা হয়েছে, রাখা হয়েছে বিদু্যতের খুঁটি, ময়লার স্তূপ। এ ছাড়া রয়েছে ছিন্নমূল মানুষের পলিথিনের ছাপড়াঘর, রিকশা-ভ্যানের দোকান। ফলে পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে গাড়ির সারির ফাঁক দিয়ে মূল সড়কে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন।
একই অবস্থা শ্যামলী এলাকার মূল সড়কেরও। সড়কের দুই পাশে ফুটপাত দখল করে চলছে ব্যবসা। এ ছাড়া সড়কে গাড়ি পার্কিং করে রাস্তার জায়গা দখলে নেওয়া হয়েছে। রিং রোডের প্রিন্স বাজারের সামনে প্রতিদিনই ২০-২৫টি গাড়ি মূল সড়কের ওপর পার্কিং করে রাখা হয়েছে।
কৃষি মার্কেট, তাজমহল রোড, টাউন হল সড়ক এবং লিংক রোডে। জাপান গার্ডেন সিটির সামনের সড়কে ফুটপাত দখল করে বসেছে সারি সারি কাপড়ের দোকান ও খাবারের দোকান। কৃষি মার্কেটের বেশ কয়েকজন কাপড় ব্যবসায়ী জানান, অনেক বছর ধরে তারা এখানে এভাবেই ব্যবসা করে আসছেন। এ জন্য প্রতিদিন ৫০০-১০০০ টাকা দিতে হয়।
অন্যদিকে ব্যস্ততম এলাকা মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড ও বেড়িবাঁধ সড়কের দুই পাশে ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে দোকানপাট, অস্থায়ী বাজার। শুধু তাই নয়, মোহাম্মদপুর সাতমসজিদ মার্কেট-সংলগ্ন রোডের ফুটপাত পুরোটাই দখল করে বসানো হয়েছে সাইনবোর্ড। পাশাপাশি অবৈধ পার্কিং তো আছেই। ফলে রাস্তায় চলতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পথচারীদের, ঘটছে নানা ধরনের দুর্ঘটনা। দিন-রাত সব সময় যানজট নিত্যসঙ্গী এই এলাকার মানুষের।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজুল হক ভূঁঞা বলেন, রাজধানীর অন্য এলাকার চেয়ে পুরো মোহাম্মদপুরে যানজট বেশি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ফুটপাত দখল করে ব্যবসা। তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। ফুটপাত পুরোপুরি দখলমুক্ত করতে আমরা কাজ করছি। এ ছাড়া যানজট নিরসনেও কাজ করছি।'
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেট সেন্টার পয়েন্ট নামে খ্যাত। একাধিক স্কুল-কলেজ, অফিস ছাড়াও বিভিন্ন কোচিং সেন্টার আছে সেখানে। এই এলাকাকে মিনি বাসস্ট্যান্ডও বলা হয়ে থাকে। আনন্দ সিনেমা হলের পাশে, মূল সড়কেও বাসগুলো দাঁড়ায়। যাত্রীরা ওঠানামা করে থাকেন। প্রত্যেক দিন হাজার হাজার মানুষ এই এলাকায় নানা কাজে আসা-যাওয়া করে থাকেন। ওই এলাকায় ফুটপাতে হাঁটতে গিয়ে তারা নানা বিড়ম্বনায় পড়েন। কারণ, ফুটপাতগুলো দখল করে নানা ধরনের পণ্য বিক্রি করেন হকাররা। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় পথচারীদের।
আনন্দ সিনেমা হলের ফুটপাতের অবস্থা আরও করুণ। সেখানে পথচারীরা অনেক গাদাগাদি করে হেঁটে চলাচল করেন। অনেক পথচারী পকেটমারের শিকার হন। ওই এলাকার দোকানি শাহিন জানান, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তারা ব্যবসা করে থাকেন। তাদের কাছে একাধিক লাইনম্যান এসে টাকা নিয়ে যান।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মুখপাত্র মো. আবু নাছের বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ফুটপাত দখলমুক্ত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নানাভাবে ফুটপাত চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। এসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযান চললে ফুটপাতের দোকানপাট অনেকটা কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, 'রাজধানীর ফুটপাত দেখাশোনার মূল দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। তাদের সঙ্গে পুলিশ বিভিন্ন সময় এসব দোকানপাট উচ্ছেদে কাজ করেছে। তাদের উঠিয়ে দিলে তারা এসে আবার বসে। এভাবেই সবকিছু চলছে। এতে পুলিশের অপরাধ কোথায়? ফুটপাত দখলে পুলিশ সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, শুধু পুলিশ নয়, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বিরুদ্ধেই এমন অভিযোগ আছে। সুনির্দিষ্টভাবে এমন কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।'
ডিএমপি মতিঝিল ও রমনা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, 'এই ফুটপাত নিয়ে আমরা যখন অভিযান চালাই, তখন হকাররা দোকান তুলে নেয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার দোকানপাট বসানো শুরু করে। এর পেছনে শুধু পুলিশ নয়, রাজনৈতিক বড় পাওয়ার আছে। এ জন্য পুলিশ মিলতাল দিয়ে কাজ করে।'
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, ট্রাফিক পুলিশ রাস্তার ফুটপাত থেকে চাঁদা নিচ্ছে- এমন কোনো অভিযোগ প্রশাসনের কাছে নেই। থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের পুলিশ সুপার ইনামুল হক সাগর জানান, 'সম্প্রতি ফুটপাতমুক্ত করতে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা রয়েছে, এ ক্ষেত্রে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি। থানা পুলিশ বা ফাঁড়ির পুলিশ অথবা কোনো সদস্য যদি চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা আছে।'
এ অবস্থায় ঢাকার ফুটপাত দখল ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নামের তালিকা দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। স্বরাষ্ট্রসচিব অথবা স্থানীয় সরকার সচিবকে নামের তালিকা হলফনামা আকারে আগামী ১৩ মে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
'বিক্রি হচ্ছে ঢাকার ফুটপাত' শিরোনামে ২০২২ সালের আগস্টে একটি দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। ঢাকার ফুটপাত দখল ও বিক্রি করে জনগণের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) ২০২২ সালের নভেম্বরে একটি রিট করে।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে ঢাকার ফুটপাত দখল ও বিক্রির জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করতে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়।
নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়টি ২২ এপ্রিল আদালতে তুলে ধরেন রিট আবেদনকারীপক্ষ। সেদিন শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ঢাকার ফুটপাত দখল ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা এবং ফুটপাত দখল বন্ধে ব্যবস্থা নিতে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে নেওয়া পদক্ষেপের অগ্রগতি জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষকে ২৯ এপ্রিল প্রতিবেদন দিতে বলেন। সে অনুসারে সোমবার বিষয়টি ওঠে।
আদালতে আবেদনকারীপক্ষে শুনানি করেন- জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন- ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।