যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ
চট্টগ্রাম নগরীতে ধর্মঘটের নামে পরিবহণ শ্রমিকদের নৈরাজ্য
গাড়ির অভাবে তীব্র দাবদাহের মধ্যে কর্মস্থল ও গন্তব্যে যাওয়ার জন্য শত শত মানুষকে অপেক্ষায় থেকে ঘামতে দেখা যায়
প্রকাশ | ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম
ধর্মঘটের নামে চট্টগ্রাম মহানগরসহ বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে নৈরাজ্য চালিয়েছে পরিবহণ শ্রমিকরা। হাতে লাঠি নিয়ে ধর্মঘট না মানা চালকদের মারধর ও গাড়ি ভাঙচুর করেছেন তারা। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসহ তিন পার্বত্য জেলা-উপজেলায় রোববার সকাল থেকে গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়ির অভাবে তীব্র দাবদাহের মধ্যে কর্মস্থল ও গন্তব্যে যাওয়ার জন্য শত শত মানুষকে অপেক্ষায় থেকে ঘামতে দেখা যায়। অনেকে গণপরিবহণ না পেয়ে ট্রাকে করে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। বিশেষত, স্কুল-কলেজ খোলার প্রথম দিন দুর্ভোগে পড়েন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। নগরীর রিকশা, অটোরিকশা চলাচল করলেও বেশি ভাড়া দাবি করেন চালকরা।
ভুক্তভোগীরা জানান, রোববার সকালে নগরীর অক্সিজেন মোড় এলাকায় আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস ভাঙচুর করেছেন পরিবহণ শ্রমিকরা। এ সময় লাঠিসোঁটা হাতে বাসটির সামনের অংশের গস্নাস ভেঙে ফেলা হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাদের বেগ পেতে হয়েছে।
ঘটনাস্থলে থাকা এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসটি অক্সিজেন মোড়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আনুমানিক ১০ জন যুবক হাতে লাঠি নিয়ে বাসের সামনের গস্নাস ভাঙচুর করে। এ সময় বাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি ছিলেন সাধারণ যাত্রীও। তাদের সেখানে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরে যাত্রীদের অনেকে তীব্র গরমে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছ হয়।
বায়েজিদ থানার ওসি সঞ্জয় কুমার সিনহা বলেন, ধর্মঘট চলাকালীন পরিবহণ শ্রমিকরা চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দোতলা বাস ভাঙচুর করেন। তবে পুলিশ আসার আগে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। ওই ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি।
এদিকে নগরীর বহদ্দারহাট মোড় এলাকায় কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে আসা মেট্রো প্রভাতীর তিনটি বাসের যাত্রী নামিয়ে দেন পরিবহণ শ্রমিক পরিচয়দানকারী কয়েকজন যুবক। এ সময় তারা বাস তিনটির সিট খুলে নিয়ে যান। এ সময় তারা মেট্রো প্রভাতী বাসচালককে মারধর করে জিজ্ঞাসা করেন, কেন গাড়ি নিয়ে বের হয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন বাস মালিক সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল। তিনি বলেন, 'আমার জানামতে ধর্মঘট
\হআন্তঃজেলার পরিবহণের জন্য। কিন্তু বহদ্দারহাট মোড়ে আমার মেট্রো প্রভাতীর তিনটি বাস আটকে ভাঙচুর করা হয়েছে। বাসগুলোর সিট উপড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। চালককে মারধর করা হয়েছে। প্রশাসনের কাছে আমি এর যথাযথ বিচার চাই।'
বহদ্দারহাট নতুন ব্রিজ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, আমিরাবাদগামী যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাচ্ছেন না। তবে গুটিকয়েক মাইক্রোবাস থাকায় এতে করেই কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে শহর ছাড়ছেন তারা।
নগরের বহদ্দারহাটের কালামিয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. লোকমান বলেন, 'আমার বাড়ি লোহাগাড়ার আমিরাবাদ এলাকায়। নতুন ব্রিজ এসে দাঁড়িয়ে আছি দেড় ঘণ্টা। ধর্মঘটের কারণে বাস বন্ধ থাকায় যেতে পারছি না।'
মাইক্রোবাসে চেপেই সাতকানিয়ার উদ্দেশে রওনা দেওয়া আরিফুল হাসান বলেন, 'ইমার্জেন্সি বাড়িতে যাওয়া লাগবে। তাই কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়েই মাইক্রোবাসে করে যাচ্ছি। উপায় তো নেই ভাই।'
শাহ আমানত সেতু এলাকায় নগরীর প্রবেশমুখে দেখা যায়, বিভিন্ন উপজেলা এবং বান্দরবান-কক্সবাজারমুখী শত শত যাত্রী সেখানে ভিড় করেছেন। কিন্তু গাড়ির অভাবে তারা যেতে পারছেন না। অনেককে পরিবার নিয়ে রাস্তায় বসে থাকতে দেখা গেছে। গরমে হাঁসফাঁস করছিল শিশুরা। কক্সবাজার রুটে দুই-একটি গাড়ি ছাড়লেও ৪২০ টাকার ভাড়া ৭০০-৮০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ অটোরিকশায়, কেউ ট্রাকে উঠে গন্তব্যে ছুটছেন।
আয়েশা বেগম শনিবার সাতকানিয়া উপজেলা থেকে নগরীতে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন। রাতে আত্মীয়ের বাসা ছিলেন। স্বামীসহ আবার বাড়িতে ফিরে যাবেন। কিন্তু সেতু এলাকায় এসে দেখেন, গাড়ি চলছে না।
বিপাকে পড়া আয়েশা বেগম বলেন, 'সাতকানিয়া যাব। দুই ঘণ্টা হয়েছে এখানে এসেছি। কিন্তু কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। কীভাবে যাব জানি না। কাউন্টারে গিয়েছিলাম। গাড়ি চলবে না, বলছে। গরমে খুবই খারাপ অবস্থা।' শেখ আসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, 'কক্সবাজার যাব। ৪২০ টাকার ভাড়া ৭০০ টাকা দাবি করছে। সব কাউন্টার বন্ধ।'
আজাদ হোসেন নামে আরেক যাত্রী বলেন, 'আধঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। চট্টগ্রাম মেডিকেলে এক রোগীকে রক্ত দিতে যাচ্ছি। কিন্তু কোনোভাবেই যেতে পারছি না। এটা তো ভালো হচ্ছে না। মামলা-হামলা হলে দেশে আইন আছে। তারা তো আইনের বাইরে কাজ করছে। তাদের ডবল শাস্তি দেওয়া উচিত। হাজার হাজার মানুষ লাইন ধরে আছে। কেউ শহরে সুখে আসেনি। সবাই বিভিন্ন কাজে এসেছে।'
নগরীর চান্দগাঁও থানার ওসি জাহেদুল কবির বলেন, বহদ্দারহাট মোড়ে ধর্মঘটের মধ্যে গাড়ি চলাচল করা নিয়ে কয়েকজন পরিবহণ শ্রমিকের সঙ্গে হাতাহাতি হয়েছে। গাড়ি ভাঙচুরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। হাতাহাতি করতে গিয়ে হয়ত সামনের একটি বা দুটি কাচ ভেঙে যেতে পারে। ঘটনার পরপরই পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
এদিকে ধর্মঘটের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ধুমঘাট ব্রিজ থেকে চট্টগ্রাম নগরীর প্রবেশমুখ সিটি গেট পর্যন্ত কোনো ধরনের গণপরিবহণ চলাচল করেনি। বারইয়ারহাট বাসস্ট্যান্ড, চট্টগ্রাম নগরীর মাদারবাড়ি এবং কোতোয়ালি বাসস্ট্যান্ড থেকে রোববার সকাল থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। বন্ধ রয়েছে মহাসড়কে চলাচল করা লেগুনা ও সেইফ লাইন পরিবহণের গাড়িও।
ফলে যাত্রীদের পোহাতে হয় অসহনীয় দুর্ভোগ। উপায় না পেয়ে জরুরি কাজে বের হওয়া অনেক যাত্রী কাভার্ড ভ্যান ও ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে শহরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় মিনি পিকআপ ভ্যানে উঠেও অনেক মানুষকে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
মিরসরাই পৌর সদরে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করা ব্যাংক কর্মকর্তা আরফাতুল ইসলাম বলেন, 'সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য রাস্তায় এসে দেখি, কোনো গণপরিবহণ চলাচল করছে না। আমি ভাটিয়ারি যাব। প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করছি। কীভাবে যাব বুঝছি না।'
বড়তাকিয়া বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করা মঘাদিয়া এলাকার রহমান নামে একজন বলেন, 'চট্টগ্রাম আদালতে আমার একটি জায়গা-সংক্রান্ত মামলার শুনানি রয়েছে। কিন্তু রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই। আমাকে যেভাবেই হোক যেতে হবে।'
জালাল উদ্দিন নামে একজন বলেন, 'আমার মায়ের ডায়াবেটিসের কারণে নিয়মিত শহরে গিয়ে ডাক্তার দেখাতে হয়। সকাল ৮টা বাজে সীতাকুন্ড সদরে এসেছি, এখন ১০টা বাজতে চললেও শহরমুখী বাস পাচ্ছি না। ধর্মঘটের বিষয়ে জানা ছিল না। এখন মাইক্রোবাস অথবা প্রাইভেটকার ভাড়া নিয়ে যেতে হবে।'
এ ছাড়া অনেকদিন পর স্কুল-কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী পরিবহণ ধর্মঘটের কারণে সময়মতো যেতে পারেননি। স্কুলশিক্ষক কামরুন নাহার জানান, 'প্রায় এক মাস বন্ধ থাকার পর স্কুল খুলেছে। সকালে রাস্তায় দেখি কোনো বাস চলছে না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করতে হয়েছে। যেখানে আমার ভাড়া লাগে ৪০ টাকা, এখন ভাড়া গুণতে হয়েছে ২০০ টাকা।'
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-পশ্চিম) তারেক আহমেদ বলেন, 'দূরপালস্নার গাড়ি বন্ধ আছে। অলঙ্কার, একে খান মোড়, সিটি গেট, কদমতলী থেকে দূরপালস্নার গাড়ি ছাড়ছে না। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে। শহরে বাস চলছে। কোথাও তেমন কোনো গন্ডগোলের খবর আমরা পাইনি। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। দ্রম্নত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
ধর্মঘটের নামে নৈরাজ্য হলেও এর দায়ভার নেবেন না বলে জানিয়েছেন বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহণ মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব মোহাম্মদ মুছা। তিনি বলেন, 'আমরা ধর্মঘট বললেও মূলত এটি কর্মবিরতি। পরিবহণ শ্রমিকদের ওপর চলমান নৈরাজ্যের প্রতিবাদ করতেই এই কর্মবিরতির আহ্বান করা হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরও এর আওতাভুক্ত।'
তিনি বলেন, 'চুয়েটে দুই ছাত্রের মৃতু্যর পর বিষয়টি নিয়ে সমাধান হওয়ার পরও আমাদের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের সম্পদ ও পরিবহণ শ্রমিকদের নিরাপত্তা চাই। আমাদের চার দফা দাবির মধ্যে প্রথম দফা হলো- বিভিন্ন সময় জেলার বিভিন্ন পোস্ট ও স্টেশন থেকে লাইনম্যানসহ অনেক পরিবহণ শ্রমিককে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়, মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। এমনকি যাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই, তাদেরও মামলার আসামি করা হয়। কখনো গাড়ি পার্কিং, কখনো কাগজ না থাকা, এমন সব অহেতুক অজুহাতে ধরে নিয়ে যায়। পরিবহণ শ্রমিকদের পকেটে থাকা টাকা কেড়ে নিয়েও তাদের হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়। শফি নামে আমাদের এক পরিবহণ শ্রমিক নেতাসহ কয়েকজন এখনো জামিন পাননি।'
দ্বিতীয় দফার বিষয়ে তিনি বলেন, 'কয়েকদিন আগে চুয়েটের তিনজন শিক্ষার্থী একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পড়েন। এতে আমরা মর্মাহত। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে টানা সড়ক অবরোধ ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় প্রশাসনের উপস্থিতিতে বৈঠকের পরও সেসব সিদ্ধান্ত না মেনে সড়কে যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের প্রথম দিন চলছে।'
প্রসঙ্গত, ২২ এপ্রিল বিকালে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের জিয়ানগর এলাকায় শাহ আমানত পরিবহণের একটি বাস মোটর সাইকেলকে ধাক্কা দেয়। মোটর সাইকেলে আরোহী হিসেবে চুয়েটের তিন শিক্ষার্থী ছিলেন। তাদের মধ্যে ঘটনাস্থলেই শান্ত সাহা (২৩) ও তৌফিক হোসেন (২২) নামে দুই শিক্ষার্থীর মৃতু্য হয়। শান্ত চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ২০ ব্যাচের ও তৌফিক ২১ ব্যাচের ছাত্র। একই ঘটনায় জাকারিয়া হিমু আরেকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। ২৪ এপ্রিল ঘাতক বাসচালককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
ঘটনার পর ২২ এপ্রিল বিকাল থেকে ২৫ এপ্রিল রাত পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছিলেন। আন্দোলনের মধ্যে ২৫ এপ্রিল বিকালে চুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে চুয়েটের পরীক্ষাসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকাল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এতে ছাত্রদের বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার মধ্যে এবং ছাত্রীদের শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ ঘোষণার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা চত্বরে থাকা ও মূল ফটকে রাখা শাহ আমানত পরিবহণের দুটি বাসে তারা আগুন ধরিয়ে দেন। এ ছাড়া বিকালে প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। এ সময় উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার প্রায় দুই ঘণ্টা ওই ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে থাকেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ২০ জনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠকে বসে প্রশাসন। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ও হল ত্যাগের নির্দেশনা পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দেয় চুয়েট প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের হলে থাকারও অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে করে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন। এর মধ্য দিয়ে অবরোধ তুলে নিলে চার দিন পর চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
চট্টগ্রামে ধর্মঘট স্থগিত
এদিকে চট্টগ্রামে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট স্থগিত করেছেন গণপরিবহণ মালিক-শ্রমিকরা। রোববার বিকালে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামানের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর ধর্মঘট স্থগিত করেন নেতারা।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহণ মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব মোহাম্মদ মুছা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া বাসের ক্ষতিপূরণ এবং বাসে অগ্নিসংযোগকারীদের গ্রেপ্তারসহ চার দফা দাবিতে শনিবার এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন গণপরিবহণ মালিক-শ্রমিকরা।
\হরোববার সকালে ধর্মঘট শুরু হলেও বিকালে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠকের পর গণপরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের নেতা মঞ্জুর আলম চৌধুরী ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা দেন।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহণ মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব মোহাম্মদ মুছা বলেন, 'জেলা প্রশাসক দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। আমাদের ওপর যেন হামলা না হয়, সেটির ব্যবস্থা নেবেন বলেছেন। সবকিছু বিবেচনায় আমরা ধর্মঘট স্থগিত করেছি।'
তবে কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কে চুয়েট শিক্ষার্থীদের হামলা হলে আবার ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দেন তিনি।