তাপমাত্রা বেড়েছে, আরও তিন দিনের সতর্কবার্তা
দুই জেলায় বইছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ, গরমে অসুস্থ হয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যবসায়ীর মৃতু্য
প্রকাশ | ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
দেশের ১১টি অঞ্চলের ওপর দিয়ে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এর মধ্যে দুই জেলায় বইছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। রোববার ঢাকাসহ বেশিরভাগ এলাকার তাপমাত্রাই ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। তবে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা একটু কমেছে। ফলে আরও তিনদিনের 'হিট অ্যালার্ট' বা সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। আগামীকাল সিলেট ছাড়া দেশের আর কোথাও বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলে পূর্ভাবাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে, গরমে অসুস্থ হয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে এক মাংস ব্যবসায়ী ও নরসিংদীতে এক মুক্তিযোদ্ধার মৃতু্য হয়েছে। রোববার দুপুরের দিকে এসব ঘটনা ঘটে।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রোববার বেলা ৩টা পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে যশোরে ৪২ দশমিক ২। এ ছাড়া ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর থাকা অঞ্চলগুলো হচ্ছে- রাজশাহীত রোববার ৪২, যা শনিবার ছিল ৪১ দশমিক ৫, চুয়াডাঙ্গায় রোববার কিছুটা কমে ৪১ দশমিক ৮, শনিবার ছিল ৪২ দশমিক ৭, ঈশ্বরদীতেও রোববার তাপমাত্রা কমে দাঁড়িয়েছে ৪১ দশমিক ৩, শানিবার ছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সাতক্ষীরায় রোববার তাপমাত্রা বেড়ে ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি হয়েছে, শনিবার যা ছিল ৩৯ দশমিক ৪, কুমারখালী ও মোংলায় রোববার তাপমাত্রা হয় ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি। গোপালগঞ্জে গতকাল ৪০ দশমিক ৬, শনিবার ছিল ৩৮ দশমিক ২, টাঙ্গাইলে রোববার ৪০ দশমিক ৩, শনিবার ছিল ৩৬ দশমিক ৬, ফরিদপুর রোববার ৪০ দশমিক ২, শনিবার ছিল ৩৮ দশমিক ৪, খুলনায় রোববার ৪০, শনিবার ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। ১
এ ছাড়া ঢাকায় রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। যা শনিবার ছিল ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
সোমবারের পূর্বাভাসে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। আগামীকাল মঙ্গলবারের পূর্বাভাস প্রায় একই কথা বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'তাপপ্রবাহ অব্যাহত আছে এবং থাকবে। রোববার আবারও তিনদিনের হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এপ্রিল মাসে (২৯ ও ৩০ এপ্রিল) সিলেট ছাড়া আর কোথাও বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।'
কিছুটা কমেছে চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা
স্টাফ রিপোর্টার, চুয়াডাঙ্গা জানান, পর পর দু'দিন সর্বোচ্চ ৪২.৭ ডিগ্রির পর রোববার কিছুটা চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা। এদিন বিকাল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ১৯ শতাংশ। শনিবার বিকাল ৩টায় এ জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৬ এপ্রিল ছিল ৪২.৬ ডিগ্রি। ২৫ এপ্রিল ছিল ৪২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ মো. জামিনুর রহমান বলেন, 'এ জেলায় তীব্র দাবদাহ চলছে। তবে তাপমাত্রা রোববার সামান্য কমেছে। আগামীতে বাড়তে পারে। এরপর মে মাসের কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।'
এদিকে, তীব্র তাপপ্রবাহে চুয়াডাঙ্গা জেলার জনজীবন অস্থির হয়ে উঠেছে। রোদে আগুনের ফুলকির মতো তেজ। পাশাপাশি অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে প্রাণিকুলও।
তীব্র রোদের কারণে শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যান চালকরা কাজ করতে না পেরে অনাহারে দিন পার করছেন। একটু প্রশান্তির খোঁজে গাছের ছায়া ও ঠান্ডা পরিবেশে স্বস্তি খুঁজছে স্বল্প আয়ের মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তাঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ছে। আবার অনেকে জরুরি প্রয়োজন ও জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচন্ড তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে কাজে বের হচ্ছেন। তবে রোদের এতো উত্তাপ যে মাথা ঘুরে যাচ্ছে। হিটস্ট্রোকে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
গরমে অসুস্থ হয়ে দুইজনের মৃতু্য
এদিকে, রাজধানীর কাজলা থেকে ছাগল কিনে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কাওরান বাজারে নিজের দোকানে যাচ্ছিলেন মাংস ব্যবসায়ী মো. সেলিম (৫৫)। পথে কাজলা ব্রিজ এলাকায় প্রচন্ড গরমে অসুস্থ হয়ে মারা যান তিনি। রোববার বেলা ১২টায় এ ঘটনা ঘটে। সেলিমকে বহনকারী সিএনজি অটোরিকশা চালক মো. রুবেল এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, মো. সেলিম গরমে অচেতন হয়ে পড়লে তাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান তিনি। এ সময় দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা মেডিকেলের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া সেলিমের মৃতু্যর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'মৃত ব্যক্তির মরদেহ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে অবগত করা হয়েছে।'
হাসপাতালে নিয়ে আসা সিএনজি চালক মো. রুবেল বলেন, 'কাওরান বাজারে মো. সেলিমের মাংসের দোকান আছে। সকাল সাড়ে ১০টায় আমার সিএনজি ভাড়া করে যাত্রাবাড়ী থানার কাজলা এলাকায় ছাগল কিনতে যান। সেখান (কাজলা) থেকে ছাগল কিনে যাত্রাবাড়ী বিবির বাগিচা এলাকায় তার বাসার সামনে যান। এরপর একই সিএনজি অটোরিকশায় করে ছাগল নিয়ে আমরা কাওরান বাজারের উদ্দেশে রওনা হই। কাজলা ব্রিজের ওপর এসে গরমে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। তখন আমি তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।
এ ছাড়া নরসিংদীতে প্রচন্ড গরমে সুলতান উদ্দিন মিয়া (৭২) নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃতু্য হয়েছে। রোববার দুপুর ৩টায় আদালত প্রাঙ্গণে তার মৃতু্য হয়। তিনি নরসিংদী কোর্টে আইনজীবী সহকারী (মুহুরি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
স্বজনরা জানায়, মৃত সুলতান উদ্দিন মিয়া সকালে প্রতিদিনের মতো বাসা থেকে বের হয়ে নরসিংদী কোর্টে যান। কোর্টে কাজ করার সময় দুপুরে তার বুকে ব্যথা অনুভব হয়। পরে তিনি আদলতের মসজিদের সামনে এলে পড়ে যান। পরে লোকজন তাকে উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নরসিংদী জেলা হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক এমএন মিজানুর রহমান বলেন, 'রোগীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাই ময়নাতদন্ত ছাড়া মৃতু্যর সঠিক কারণ বলা মুশকিল। তবে রোগীর স্বজনরা জানিয়েছে তার বুকেব্যথা ছিল। তার ওপর প্রচন্ড গরমের মধ্যে কাজ করছিলেন তিনি।