চতুর্থবারের মতো ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে দেশের ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (জিএসটি) গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে 'এ' ইউনিটের (বিজ্ঞান) পরীক্ষা দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। তবে গরমের মধ্যে বিপাকে পড়েন পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। ক্রমাগত হাতপাখা নেড়ে একটু স্বস্তি খুঁজছেন তারা।
জিএসটি সমন্বিত ভর্তি কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এ বছর 'এ' ইউনিটে এক লাখ ৭০ হাজার ৫৯৯ জন, 'বি' ইউনিটে ৯৪ হাজার ৬৩১ জন এবং 'সি' ইউনিটে ৪০ হাজার ১১৬ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন। মোট তিন লাখ পাঁচ হাজার ৩৪৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
আগামী ৩ মে 'বি' ইউনিটে মানবিক ও ১০ মে 'সি' ইউনিটে বাণিজ্য বিভাগ থেকে আবেদনকৃত শিক্ষার্থীদের সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এবার মোট ২৩টি কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর 'এ' ইউনিটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রের অধীনে পরীক্ষা দিয়েছেন ৫৩ হাজার ৮১৫ জন শিক্ষার্থী। এই ইউনিটে মোট আসন সংখ্যা ১২ হাজার; প্রতি আসনের বিপরীতে লড়েন ১৪ জন।
এবার ভর্তিচ্ছু যেসব পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্ধারণ করেছিলেন, তাদের আসন বিন্যাস ক্যাম্পাস ও এর আওতায় থাকা পাঁচটি উপ-কেন্দ্রে সাজানো হয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে উপকেন্দ্রগুলো হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ, সরকারী বাঙলা কলেজ, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যে কোনো ধরনের জালিয়াতি রোধে আমাদের সর্বোচ্চ নজরদারি করা হয়েছে। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি
বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভার স্কাউট ও বিএনসিসির সদস্যরা কাজ করেন। প্রক্টরিয়াল বডিও সর্বোচ্চ নজরদারি করেছেন। এছাড়া তীব্র গরমে অভিভাবকদের জন্য ভিক্টোরিয়া পার্কে মোট ৪০০ আসনের ব্যবস্থা করেছি। তাছাড়া কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে সুপেয় পানির সরবরাহও করা হয়েছে।'
এদিকে দেশজুড়ে চলা তীব্র গরমে ভোগান্তিতে পড়েছেন পরীক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা। পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে আসা অভিভাবকদের বেশিরভাগই বসেছেন ভিক্টোরিয়া পার্কে। এ সময় তাদের হাতে পাখা দেখা গেছে।
পার্কে অভিভাবকদের বসার জন্য ৪০০ চেয়ারের ব্যবস্থা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রাখা হয়েছে তিন হাজার লিটার সুপেয় পানি এবং ১০ হাজার ওয়ান টাইম গস্নাস।
এছাড়া ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ টিমে চিকিৎসক আছেন দুজন। ঢাকা ওয়াসা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমবারের মতো এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
অন্যদিকে, পরীক্ষার্থীরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পৌঁছাতে যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েন। রায়সাহেব বাজার মোড় থেকে সদরঘাট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় তীব্র যানজট দেখা গেছে। গুলিস্তান হয়ে আসা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকেই যানজটের কারণে ক্যাম্পাস পর্যন্ত হেঁটে আসতে হয়েছে।
পরীক্ষা দিতে আসা দুলন গৌড় নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, মহাখালী থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত আসতে আমার প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে। রাস্তায় অনেক জ্যাম। গুলিস্তান আসার পর দেখি রাস্তা পুরোটা বস্নক। গুলিস্তান থেকে হেঁটে হেঁটে কেন্দ্রে আসলাম। এই তীব্র গরমে এভাবে কেন্দ্রে পৌঁছানো অনেক কষ্টসাধ্য।
রাজধানীর রামপুরা থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা আরেক শিক্ষার্থী ফারিহা আক্তার বলেন, রাস্তায় এখন অনেক যানজট। উত্তরা থেকে পুরান ঢাকা আসতে আসতেই গরমে আর যানজটে প্রায় অসুস্থ হয়ে গেছি। গরমের মধ্যে এতটা সময় তীব্র যানজটে বাসে আসা অনেক কষ্টকর। যানজট নিরসনে ব্যবস্থা নিলে ভোগান্তি কম হতো।
মেয়েকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে কেন্দ্রে এসেছেন জায়েদা বেগম।
তিনি বলেন, গরমে বাসে চড়ে মেয়েকে নিয়ে আসতে অনেক কষ্ট হয়েছে। ভোরে বের হয়েও গুলিস্তান পৌঁছেছি বেলা ১১টায়। গুলিস্তান থেকে আর বাস চলছেই না, থেমে আছে। পরে হেঁটেই আসতে হয়েছে।
ট্রাফিক পুলিশ সদস্য শরিফুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে যানজট নিরসনে আমরা কাজ করছি। আমরা চেষ্টা করছি যেন গেইট সামনের রাস্তা সবসময় ফাঁকা থাকে। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের যেন ভোগান্তি পোহাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করেছি।
যানজট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'বেলা ১১টার পর ক্যাম্পাসের সামনে দিয়ে গাড়ি চলার বিধিনিষেধ ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেক দূরে নামিয়ে দিলে তাদের কেন্দ্রে আসতে অসুবিধা হচ্ছে দেখে ট্রাফিক পুলিশ নির্দেশনা কিছুটা শিথিল করায় জ্যাম অনেকটা কমে আসে।'
এদিকে, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) কেন্দ্রে সর্বমোট ৮৫০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭৮৩ জন পরীক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত হলসমূহ পরিদর্শন করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর মোহাম্মদ আলী, রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সন্তোষ কুমার বসু, ভর্তি পরীক্ষার আহ্বায়ক প্রফেসর ড. পূর্ণেন্দু বিশ্বাস এবং জনসংযোগ বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার এমরান হোসেন উপস্থিত ছিলেন। জিএসটি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার চিফ প্রফেসর চিন্ময় বেপারী উপস্থিতির হার ৯২ শতাংশ নিশ্চিত করেন।
আগত ভর্তি পরীক্ষার্থীদের পবিপ্রবি ছাত্রলীগ সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ খাবার পানি, ডাবের পানি সরবরাহ করেন।
হলসমূহ পরিদর্শন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, পবিপ্রবি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে, কোনোরূপ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, পবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি, পবিপ্রবি রোভার স্কাউটস, পবিপ্রবি বিএনসিসি, মেডিকেল টিম, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আনসার সদস্যসহ সবার সহযোগিতায় সুষ্ঠুভাবে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে শনিবার সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনায় শান্তিপূর্ণভাবে 'এ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে 'এ' ইউনিটে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় চার হাজার ৫৬০ জন এবং আর্কিটেকচার ব্যবহারিক (ড্রয়িং) পরীক্ষায় ৯৯ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করেন। পরীক্ষার হলে ৯২.৩৫ শতাংশ ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
পরীক্ষা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. মো. ফরহাদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) প্রফেসর ড. এ আর এম সোলাইমান ও কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. সিরাজুল ইসলাম কেন্দ্র পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের জিএসটি গুচ্ছভুক্ত স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির 'এ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বেরোবিসহ সাতটি উপকেন্দ্রে 'এ' ইউনিটের ১৬ হাজার ২২৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ছিল ১৪ হাজার ৯৯৭ জন। পরীক্ষায় উপস্থিতির হার ছিল ৯২.৪১ শতাংশ।
তীব্র গরম ও তাপপ্রবাহের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং গেইটের উত্তর দিকে নিরাপদে বসা ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগসহ অনেক সংগঠন থেকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য সহায়তায় জন্য বুথ বসানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কেন্দ্রে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৬টি একাডেমিক ভবনে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ইবি কেন্দ্রে এবার ৬৪৪২ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
পরীক্ষা চলাকালীন কক্ষ পরিদর্শন করেন ইবি উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর শেখ আবদুস সালাম। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডক্টর আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া এবং রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এইচএম আলী হাসানসহ প্রমুখ। এছাড়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) গুচ্ছ পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এতে উপস্থিতির হার ছিল ৮৯.৩৩ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ভেনু্যতে একযোগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শাবি কেন্দ্রে ৫ হাজার ৮১০ জন আবেদনকারীর মধ্যে ৫ হাজার ১৯০ ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে শাবির ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ আরফিন খান জানান, পরীক্ষা চলাকালীন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।