মশাবাহিত রোগের ঝুঁকিতে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ :গবেষণা
প্রকাশ | ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর মতো মশাবাহিত রোগের ঝুঁকিতে আছে, এমনই সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী কয়েক দশকে উত্তর ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে মশাবাহিত বিভিন্ন মহামারি ছড়িয়ে পড়বে, যার উদ্দীপক হিসেবে কাজ করবে বৈশ্বিক উষ্ণতা।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তাবিষয়ক সংস্থা ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির (ইউকেএইচএসএ) প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০ বছরের বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো গত বছর দেশটিতে ম্যালেরিয়া সংক্রমণের ঘটনা দুই হাজার স্পর্শ করেছে।
সংস্থাটি বলছে, ২০২৩ সালে ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ডে ম্যালেরিয়া সংক্রমণের ঘটনা ছিল ২০০৪টি, যেগুলোর মূল উদ্দীপক ছিল বিদেশ ভ্রমণ। সে তুলনায় ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল ১৩৬৯টি।
ইউকেএইচএসএ'র তথ্য অনুসারে এ উত্থানের সম্পৃক্ততা আছে বিভিন্ন দেশে নতুন করে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা ও মহামারির নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর বিদেশে ভ্রমণের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে।
এদিকে গত দুই দশকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 'ডবিস্নউএইচও'র কাছে ডেঙ্গুর ঘটনা সংশ্লিষ্ট অভিযোগ বেড়েছে ১০ গুণ, যেখানে ২০০০ সালে এমন অভিযোগের সংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচ লাখ। আর ২০১৯ সালে তা ছাড়িয়েছে ৫০ লাখ।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ বলছে, ২০০০ সালের পর থেকে ১৩টি ইউরোপীয় দেশে ডেঙ্গু মশা ছড়িয়েছে, যেখানে ২০২৩ সালে স্থানীয়ভাবে এ রোগ ছড়াতে দেখা গেছে ফ্রান্স, ইতালি ও স্পেনে।
স্পেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'কাতালান ইনস্টিটিউশন ফর রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভান্সড স্টাডিজ'-এর অধ্যাপক রেচেল লউই বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার মানে দাঁড়ায় ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর মতো রোগের জীবাণু অনেক দেশে ছড়িয়ে যেতে পারে। এতে করে বিভিন্ন এমন জায়গায় মহামারি দেখা যাবে, যেখানকার লোকজনের কাছে সম্ভবত এ ধরনের রোগ গুরুত্ব পায় না ও যে দেশগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত নয়।'
তিনি বলেন, 'সত্যিকারের বাস্তবতা হলো, গ্রীষ্মকালের ব্যাপ্তি বেড়ে গেলে এ ধরনের মশাবাহিত রোগও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে, যেখানে মহামারির ঘটনাও ক্রমাগত বাড়তে থাকবে ও সেগুলো মোকাবিলা করার ক্ষেত্রেও জটিলতা বাড়বে।'
গবেষকরা বলেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখলেও ১৯৭০ থেকে ১৯৯৯ সালের তুলনায় ২১০০ সাল নাগাদ আরও ২৪০ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর মতো রোগের ঝুঁকিতে পড়বে।
তবে তাদের অনুমান বলছে, এ মুহূর্তের কার্বন নিঃসরণ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কথা বিবেচনায় নিলে এই শতকের শেষ নাগাদ ৪৭০ কোটি মানুষ ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
অধ্যাপক লউই আরও যোগ করেন, 'মহামারির জন্য আমাদের অবশ্যই আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে, যাতে এগুলো শুরুর দিকেই ঠেকানো যায়।'