সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৮৮ জন সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতে ইমিগ্রেশন ও যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শেষে তাদের হস্তান্তর করা হয়। পরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়ায় বিআইডবিস্নটিএ ঘাট থেকে তাদের টাগবোটে তুলে দেওয়া হয়।
গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইনে তুলে দেওয়া হয় বলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের
\হফেরত নিতে মিয়ানমারের ওই জাহাজ বুধবারই বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায়। ওই জাহাজে করেই ১৭৩ জন বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন, যারা বিভিন্নভাবে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন বা সাজা পেয়ে জেলখানায় ছিলেন।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজে করে দেশটির পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও বুধবার দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছায়। পরে তারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নে বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়।
বিজিবি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টায় ১১টি বাসে করে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের কক্সবাজার শহরের বিআইডবিস্নউটিএ জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়। সে সময় পুরো এলাকায় নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা। চারদিকে অবস্থান নেন বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশের সদস্যরা। ঘিরে ফেলা হয় প্রত্যর্পণ কার্যক্রমের পুরো এলাকা। এরই মধ্যে ঘাটে উপস্থিত হয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল। ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া।
মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলে ছিলেন দেশটির রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়ে এবং বিজিপির পাঁচ সদস্য। বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিরা।
প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে সকাল ৭টায় মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কর্ণফুলী টাগবোটে তুলে দেওয়া হয়। কোস্টগার্ডের একটি ট্রলার টাগবোটটিকে পাহারা দিয়ে গভীর সাগরে নিয়ে যায়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, 'তাদের গভীর সাগরে মিয়ানমারের জাহাজে তুলে দেওয়া হয়েছে। তারা এখন স্বদেশে ফিরে যাচ্ছে।'
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার ভোরে বিজিপি সদস্যদের হস্তান্তর উপলক্ষে কক্সবাজারে বিআইডাবিস্নউটিএ ঘাটে বিজিবির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়।
পরে কোস্টগার্ডদের একটি জাহাজ মিয়ানমারের জাহাজ চিন ডুইনের উদ্দেশে কক্সবাজারে বিআইডাবিস্নউটিএ ঘাট ত্যাগ করে।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও। সীমান্তের ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এসে এপারে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
ওই সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে প্রথম দফায় গত ১৫ ফেব্রম্নয়ারি ফেরত পাঠিয়েছিল সরকার।
তাদের মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দু'জন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এরপর গত দেড় মাসে নতুন করে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের সেনা ও বিজিপির আরও ২৮৮ সদস্য। সব প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার তাদের মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের কাছে হস্তান্তর করা হল।
পুরো কার্যক্রম শেষে বাংলাদেশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েসহ প্রতিনিধি দলকে বিদায় জানায় বিজিবির শীর্ষ কর্মকর্তারা।