সীতাকুন্ডে ১০ লেইন নয়, বিকল্প প্রস্তাব 'নাগরিক সমাজের'
প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ১০ লেনে উন্নীত করার যে পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে, সেখানে সীতাকুন্ড উপজেলার ৩৭ কিলোমিটার অংশের জন্য তিনটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে 'সীতাকুন্ড নাগরিক সমাজ'।
এ উপজেলায় সড়ক সম্প্রসারণ করা হলে জীববৈচিত্র্য ক্ষতির মুখে পড়বে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। তারা বলছে, ১০ লেনের পরিবর্তে সীতাকুন্ডের অংশে মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ, চার বা ছয় লেইনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে অথবা ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের পূর্ব পাশে পাহাড় ঘেঁষে নতুন মহাসড়ক নির্মাণ করা যেতে পারে।
বুধবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই প্রস্তাব তুলে ধরেন সীতাকুন্ডের
নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব আবুল কাশেম।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, 'পূর্বে পাহাড় ও পশ্চিমে সন্দ্বীপ চ্যানেল হওয়ায় উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত সীতাকুন্ড উপজেলার দক্ষিণাংশ ভূ-অবস্থানগতভাবে অত্যন্ত সরু। আয়তনে ছোট এই উপজেলার ওপর দিয়ে চলে যাওয়া চার লেইনের জাতীয় মহাসড়ককে ১০ লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে মর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
'কোনো দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির জন্য সড়ক, মহাসড়ক, এক্সপ্রেসওয়ের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু সীতাকুন্ড উপজেলার বাসিন্দাদের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বিকল্প থাকা সত্ত্বেও চার লেইনের সড়ককে ১০ লেইনে উন্নীত করার ঘোষণায়।'
গত ২ এপ্রিল কুমিলস্নায় এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উলস্না নুরী জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ১০ লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, 'ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে করে ঢাকা থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে। সেজন্য এই মহাসড়ক ১০ লেনে উন্নীত করা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক উন্নীত হবে ১০ লেইনে। আমরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি।'
সীতাকুন্ড নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব বলেন, '২০১৬ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হলেও সীতাকুন্ডের মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে মহাসড়কের পাশে চলাচলের জন্য সার্ভিস লেন নির্মাণ না করে বন্ধ করে দেওয়া হয় রিকশা, অটোরিকশাসহ ধীর গতির যানবাহন। এতে বিপাকে পড়ে লাখ লাখ মানুষ। নতুন করে মহাসড়ক ১০ লেন করা হলে অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এ এলাকার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা, হাট-বাজার, বাড়ি-ঘর, মসজিদ-মন্দির, কবরস্থান-শ্মশানসহ শত শত গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক স্থাপনা চিরতরে হারিয়ে যাবে। মহাসড়কের দুই পাশে থাকা হাজারো বিরল প্রজাতির বৃক্ষ ও জীববৈচিত্র্য অধিগ্রহণের মধ্যে পড়ে ধ্বংস হবে।'
সীতাকুন্ডের নাগরিক সমাজ ১০ লেন করার 'বিপক্ষে নয়' জানিয়ে বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরেন আবুল কাশেম।
তিনি বলেন, বর্তমানে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত এবং মীরসরাই ইকোনমিক জোনের উপকূল হয়ে সীতাকুন্ডের ১ নম্বর সৈয়দপুর ইউনিয়নের উত্তর বগাচতর পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ শেষ হয়েছে। এখন বাকি আছে ফৌজদারহাট থেকে সীতাকুন্ডের বগাচতর পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার।
তিনি আরও বলেন, 'নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, এই প্রকল্পের সবকিছু চূড়ান্ত করা আছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। এই মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করা হলে নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচলের পাশাপাশি জনদুর্ভোগ ও সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে।'
দ্বিতীয়ত বিকল্প হিসেবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রস্তাব করে আবুল কাশেম বলেন, 'ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কের সিটি গেট থেকে বড় দারোগাহাট (সীতাকুন্ড অংশ) চার বা ছয় লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা যেতে পারে। এতে বিপুল সরকারি অর্থ ব্যয়ে মানুষের জমি ও বড় বড় স্থাপনা অধিগ্রহণ করতে হবে না।
'সার্ভিস লেন ও আন্ডারপাস-ওভারপাস ছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার ওপর দিয়ে ৮-১০ লেইনের মহাসড়ক করার নজির বিশ্বের কোনো দেশে আছে বলে আমাদের জানা নেই।'
তৃতীয় বিকল্প হিসেবে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল লাইনের পূর্ব পাশে ফৌজদারহাট থেকে চিনকি আস্তানা পর্যন্ত অংশে পাহাড়ের পাশ দিয়ে নতুন মহাসড়ক নির্মাণ করা যেতে পারে বলে জানান তিনি।
সিটি গেট থেকে দারোগাহাট পর্যন্ত প্রায় ৩৭ কিলোমিটার উড়াল সড়ক নির্মাণের প্রস্তাবও করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মো. ফসিউল আলম, মো. জাহাঙ্গীর চৌধুরী ও গিয়াস উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।