শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১
উপজেলা ভোটে এমপির স্বজনরা

আওয়ামী লীগের তৃণমূলে দ্বন্দ্ব-বিভেদ বাড়বে

যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
আওয়ামী লীগের তৃণমূলে দ্বন্দ্ব-বিভেদ বাড়বে

আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে সিদ্ধান্ত অমান্য করে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের অনেকে স্বজনদের প্রার্থিতা বহাল রাখায় তৃণমূলের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েও মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সামলাতে না পারায় হতাশ তৃণমূলের নেতারা। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারাও বিব্রত। দলীয় প্রতীকবিহীন ভোটে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব-বিভেদ কমানোর চেয়ে বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন দলের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন, সংসদ সদস্যরা উপজেলা চেয়ারম্যানদের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন। এ জন্য নিজ অনুসারীর বাইরে যাতে কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান না হন, সে জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

দলের সিদ্ধান্ত না মানার পেছনে অতীতে শাস্তি দিয়েও পরে ক্ষমা করে দেওয়াকে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। তাদের মতে, স্বজনদের ঢালাওভাবে ভোটের মাঝপথে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়টিও কিছুটা অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া স্বজনের সংজ্ঞার সীমারেখা কী, এটাও স্পষ্ট নয়। অর্থাৎ স্বজন বলতে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান ও ভাই পর্যন্ত মানা হবে, না কি আরও বিস্তৃত হবে-এটা নিয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন।

এদিকে, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজনদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বিষয়ে সাংগঠনিক

সম্পাদকরা ফোনে যোগাযোগ করার পর অধিকাংশই দলীয় সিদ্ধান্ত মানবেন বলে জানান। সবাই শেষ দিন প্রত্যাহারের আশ্বাস দেন। কিন্তু শেষ দিকে অনেকে ফোন ধরাই বন্ধ করে দেন। কোনো কোনো সংসদ সদস্য অজুহাত হিসেবে জানান, তাদের স্বজনরা কথা শুনছেন না।

চার পর্বের উপজেলা ভোটের প্রথম পর্বে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে মাত্র তিনজন স্বজন সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে একজন ছাড়া বাকিদের ওপর দলীয় সিদ্ধান্তের সেভাবে প্রভাব পড়েনি। নাটোরের সিংড়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌?মেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবীব মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। নোয়াখালীর হাতিয়ায় সাবেক সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌস তার ছেলে আশিক আলীর 'ডামি' প্রার্থী ছিলেন। তিনিও প্রত্যাহার করেন। আর চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় সংসদ সদস্য আলী আজগরের চাচাত ভাইয়ের ছেলে সহিদুল ইসলাম প্রত্যাহার করেছেন। যদিও সংসদ সদস্যের আপন ভাই আলী মনসুর এখনো প্রার্থী আছেন।

দ্বিতীয় পর্বের ভোটেও মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের ৩৫ জন স্বজন প্রার্থী হয়েছেন। তৃতীয় পর্বে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া চলছে। চতুর্থ পর্বে তফসিল ঘোষণা হলেও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শুরু হয়নি।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সংসদ সদস্যরা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, এর প্রভাব তৃণমূলের রাজনীতিতে পড়বে। এখন কেউ কারও কথা মানতে চাইবেন না।

তবে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে, আগামী ৩০ এপ্রিল দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, যা হয়েছে, তা দুঃখজনক। কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বিষয়টি দেখবেন।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, অধিকাংশ স্থানে সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্বাচনী এলাকা একই। আর সংসদ সদস্যদের সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যানদের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু থেকেই। উপজেলা চেয়ারম্যানের পদটি বরাবরই সংসদ সদস্যরা নিজের ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে রাখতে চান। এ জন্যই এবার সুযোগ পেয়ে স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ে মাঠে নেমেছেন মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা।

আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা ও সংসদ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তার নির্বাচনী এলাকায় তার দুইজন স্বজন প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে একজন গত জাতীয় নির্বাচনে তার বিরোধিতা করেছিলেন। দল যেহেতু প্রতীক দেয়নি, তাই তিনি তার ঘনিষ্ঠ অন্য এক স্বজনকে সমর্থন দিয়েছেন। দলের সিদ্ধান্ত মেনে তার প্রার্থীকে সরিয়ে দিলে বিরোধিতাকারী স্বজন জিতে যাবেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের উপজেলা নির্বাচন হয়েছিল দলীয় প্রতীকে। কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড সব উপজেলায় দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। কিন্তু এরপরও প্রায় প্রতিটি উপজেলায় নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থী হন। গঠনতন্ত্র অনুসারে, সবাইকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এরপরও ১২৩ জন বিদ্রোহী প্রার্থী দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

ওই নির্বাচনে অন্তত ৫৯ জন মন্ত্রী-সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে। কিন্তু কারও বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরের বছরের ডিসেম্বরে দলের জাতীয় সম্মেলনের আগে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বহিষ্কার হওয়া নেতাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। একইভাবে ২০১৯ সালের পরবর্তী তিন বছর যাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়, তাদেরও সাধারণ ক্ষমা করা হয়।

একজন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রতিপক্ষ সংসদ সদস্যের ছেলে। ওই প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী বহাল থাকার পর স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বার্তা পেয়ে গেছে। এখন প্রশাসন সংসদ সদস্যের পছন্দের প্রার্থীকে সহযোগিতা করতে দ্বিধা করবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে