ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপলস্নী গ্রামে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় মধুখালী রেলগেট এলাকার ঈদগাহ মাঠের সামনে 'সর্বস্তরের জনগণের' ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ৪ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রাখে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও আগুন ধরিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাতে বাধা দিলে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে। দুপুর দেড়টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় অন্তত ১৪ জন আহত হয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপলস্নী সর্বজনীন কালীমন্দিরে প্রতিমায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর হামলায় চার নির্মাণ শ্রমিক আহত হন। পরে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই সহোদর আশরাফুল ও আসাদুলের মৃতু্য হয়। এ ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে মধুখালী থানায় তিনটি মামলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে মধুখালী ঈদগাহের সামনে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভকারীরা দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে ঈদগাহ ময়দানে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে হঠাৎ মিছিলটি মহাসড়কে উঠে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ধরে কামারখাল
ী সেতুর দিকে এগোতে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাতে বাধা দিলে বিক্ষোভকারীরা খন্ড খন্ড হয়ে মিছিল করতে থাকেন। একাধিক ভাগে বিভক্ত বিক্ষোভকারী মালেকা চক্ষু হাসপাতালের সামনে, নোয়াপাড়ার মোড়, মাঝিবাড়ি, বাগাটের ঘোপঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। বাগাটের ঘোটঘাটে বিক্ষোভকারীরা সড়কে গাছের গুঁড়ি ফলে অবরোধ করে এবং গুঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। বিক্ষুব্ধরা মহাসড়কে উঠে অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ জনতার ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ও শটগানের গুলি ছোড়ে। তখন বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে ইট ছুড়তে ছুড়তে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ সময় অন্তত ১৪ জন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী মো. লিটন জানান, পুলিশের সঙ্গে এলাকার লোকজনের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় এলাকা রণক্ষেত্র পরিণত হয়। অধিক সংখ্যক লোকজন হওয়ায় পুরো এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
মো. ইমন জানান, রাস্তা অবরোধ অব্যাহত রাখতে মুসলিস্নরা ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন। দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের চিকিৎসক কবির সরদার জানান, এ ঘটনায় পুলিশ ও সাধারণ জনগণসহ মোট ১৪ জন আহত হয়ে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি হয়। এর মধ্যে পুলিশ সদস্য ৫ জন এবং সাধারণ মানুষ ৯ জন চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। ১ জনকে গুরুতর অবস্থায় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার (পিএএ), ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ (পিপিএম), মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামনুন আহমেদ অনীক।
মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ডুমাইনের পঞ্চপলস্নীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে মধুখালী উপজেলার পাইলট স্কুল থেকে নওয়াপাড়া পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভকারীরা বিক্ষিপ্তভাবে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন। পুলিশ কোথাও বুঝিয়ে শুনিয়ে কোথাও কাঁদানে গ্যাস ও ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে তাদের নিবৃত্ত করে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।