পার্সেলের ফোন নম্বরের সূত্র ধরে গ্রেপ্তার তিন

'খেলনার মোড়কে' যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় গাঁজার কেক

প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুক্তরাষ্টের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ঢাকায় ডাকযোগে আসা কোটি টাকা মূল্যের গাঁজার চকলেট ও কেক জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। পরে পার্সেলে উলিস্নখিত ফোন নম্বরের সূত্র ধরে ঢাকার আশুলিয়া থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. রাসেল মিয়া (২০), রমজান মিয়া (২১) ও মো. ইমরান ওরফে রাজ (২০)। ডিএনসি জানায়, আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য থেকে একটি পার্সেল আসে বাংলাদেশের ডাক বিভাগের বৈদেশিক ডাক শাখায়। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পার্সেলটি জব্দ করে ডিএনসি ঢাকা মেট্রো (উত্তর)। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিএনসি প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএনসির মহাপরিচালক (ডিজি) মুস্তাকীম বিলস্নাহ ফারুকী। তিনি বলেন, পার্সেলটি খুলে দেখা যায়, বাচ্চাদের খেলনার প্যাকেট করে আমেরিকা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে টেট্রাহাইড্রো ক্যানাবিনলযুক্ত গাঁজার কুশ, চকলেট ও কেক। এসব মাদকের বাজারমূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। পার্সেলের ভেতরে থাকা ৬টি প্যাকেটে ছিল টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনলযুক্ত কুশ, যা আমেরিকার তৈরি। যার ওজন ১ কেজি ৩০০ গ্রাম। পার্সেলে আরও ছিল আমেরিকার তৈরি গাঁজার চকলেট ৯টি। এছাড়া পার্সেলে ছিল আমেরিকার তৈরি ১০টি গাঁজার কেক। ডিএনসি'র ডিজি বলেন, রোববার পল্টনের পুরাতন ডাক ভবনের বৈদেশিক ডাকের শাখা থেকে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য থেকে আসা একটি পার্সেল জব্দ করা হয়। পার্সেলে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ টেট্রাহাইড্রো ক্যানাবিনলযুক্ত কুশ, ক্যানাবিস চকলেট ও ক্যানাবিস কেক জব্দ করা হয়। পার্সেলের গায়ে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রযুক্তির সহায়তায় প্রাপকের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাসেল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাসেল \হজিজ্ঞাসাবাদে জানায় পার্সেলটি ডেলিভারি নেওয়ার কথা ছিল তার। সে আরও জানায়, গ্রেপ্তার রমজান মিয়া তাকে পার্সেলটি টাকার বিনিময়ে রিসিভ করার কথা বলে। পরে রাসেলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রমজান মিয়াকে আশুলিয়ার আমতলা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। রমজান মিয়া জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তাকে টাকার বিনিময়ে পার্সেলটি রিসিভ করতে বলেন মো. ইমরান ওরফে রাজ। পরে রাজকেও গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রমজান ও রাজ একে অপরের বন্ধু। তিনি আরও বলেন, যে প্যাকেটে করে মাদকগুলো আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে এসেছিল সেগুলো ছিল বাচ্চাদের খেলনার প্যাকেট। যাতে করে কেউ বুঝতে না পারে এসব প্যাকেটে মাদক রয়েছে। গ্রেপ্তাররা দীর্ঘদিন ধরে এভাবে বিদেশ থেকে গাঁজার কেক, কুশ ও চকলেট এনে রাজধানীরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করত। বিদেশ থেকে যারা এই মাদকটি বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন তাদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসি'র ডিজি বলেন, ক্যালিফোর্নিয়াতে এ মাদক বৈধ কিংবা অবৈধ সেটা বিষয় না। বাংলাদেশে এই মাদক অবৈধ, তাই বাংলাদেশে এই মাদক পাঠানো আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। বাংলাদেশে এটা অবৈধ জেনেই তারা বাচ্চাদের খেলনার প্যাকেটে মাদক পাঠিয়েছে। এই পার্সেলটি যেকোনো আমেরিকান নাগরিক পাঠিয়েছেন বিষয়টি এমন নয়। ওখানে বসবাসরত অন্য কোনো দেশের নাগরিকও পাঠাতে পারেন। আমেরিকা থেকে এই মাদক বাংলাদেশে কতবার এসেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমেরিকার থেকে ঠিক কতবার এসেছে এ তথ্যটি এখনো নিশ্চিত নই আমরা। তবে আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছি তারা গত এক দুই বছর ধরে এই মাদক বাংলাদেশে নিয়ে আসছেন। আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানার চেষ্টা করব তাদের নেটওয়ার্ক কতটা বিস্তৃত। এই মাদকের ব্যবহারকারী কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমরা তদন্তে জানার চেষ্টা করব। এই বিষয়ে আরও সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তাদের আমরা জানাব। গ্রেপ্তারদের বয়স অল্প, তারা এই কোটি টাকার মাদকের মূল্য কীভাবে পরিশোধ করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে একজন একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মার্কেটিং অফিসার। আমরা তদন্তে জানার চেষ্টা করব তাদের অর্থের উৎস কী এবং তারা কীভাবে অর্থ সেখানে পাঠিয়েছেন। এর সঙ্গে মানি লন্ডারিং জড়িত থাকতে পারে আমরা এসব বিষয়ে তদন্ত করব।