হাসিনা-তামিম বৈঠক
বাংলাদেশ-কাতার ৫ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই
কাতারের কাছে জ্বালানি সহায়তা চায় বাংলাদেশ
প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, বন্দর ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা এগিয়ে নিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের সঙ্গে পাঁচটি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার ঢাকার তেঁজগাওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তিগুলো হলো- ১. আইনগত বিষয়ে সহযোগিতা চুক্তি। ২. পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা চুক্তি। ৩. দ্বৈত কর পরিহার ও কর ফাঁকি রোধ চুক্তি। ৪. সাগর পথে পরিবহণ সংক্রান্ত চুক্তি। ৫. দুই দেশের যৌথ ব্যবসা পরিষদ গঠন সংক্রান্ত চুক্তি।
সমঝোতা স্মারকগুলো হলো- ১. কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা বাড়াতে সমঝোতা স্মারক। ২. যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে সমঝোতা স্মারক। ৩. শ্রমশক্তি ও কর্মসংস্থান বিষয়ে সমঝোতা স্মারক। ৪. উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা খাতে সহযোগিতা বাড়াতে সমঝোতা স্মারক। ৫. বন্দর ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সমঝোতা স্মারক।
চুক্তিগুলোর মধ্যে প্রথমটিতে কাতারের পক্ষে বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন হামাদ আল থানি ও বাংলাদেশের পক্ষে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, দ্বিতীয়টিতে কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি ও বাংলাদেশের অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, তৃতীয়টিতে কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি ও বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, চতুর্থটিতে কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি ও বাংলাদেশের
নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং পঞ্চমটিতে কাতার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান শেখ খলিফা বিন জসিম আল থানি ও বাংলাদেশের ফেডারেশন অব চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম সই করেন।
সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে সব কটিতে কাতারের পক্ষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি এবং বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সই করেন।
এছাড়া রাজধানীর কালশী মোড় থেকে ইসিবি চত্বর পর্যন্ত সড়ককে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি অ্যাভিনিউ নামকরণ করা হয়। কালশী বালুর মাঠে নির্মাণাধীন পার্কটির নাম রাখা হয় শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির নামে।
\হশেখ হাসিনা-শেখ তামিম বৈঠক: এর আগে, কুয়েতের আমির শেখ তামিম মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে টাইগার গেটে তাকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান শেখ হাসিনা। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শিমুল হলে একান্ত বৈঠকে বসেন দুই নেতা।
একান্ত বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গেস্নাব হলে ফটোসেশনে অংশ নেন তারা। এরপর চামেলি হলে দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কাতারের আমির শেখ তামিম।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর করবী হলে তাদের উপস্থিতিতে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই করেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা।
দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি সহায়তা চায় বাংলাদেশ
এদিকে, কাতারের কাছে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার দুপুরে বঙ্গভবনে ঢাকায় সফররত কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে এ সহায়তা চান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
এ সময় তিনি বাংলাদেশকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) দেওয়ার জন্য কাতার সরকারকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে কাতারকে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি জানান, রাষ্ট্রপতি বৈঠকে বলেছেন, আমিরের সফর এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) আগামী দিনে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাকে আরও সম্প্রসারিত করবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ সরকার বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ১০০ অর্থনৈতিক বিশেষ অঞ্চল স্থাপন করেছে। কাতারের বিনিয়োগকারীরা পেট্রো-কেমিকেল, জ্বালানি, মেশিনারিজ, তথ্যপ্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক্স, সিরামিক, কৃষি-ব্যবসা, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মতো কিছু ক্ষেত্রে প্রণোদনা পেতে এবং সহায়তা করতে পারে।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন প্রায় ৩.৭৫ লাখ বাংলাদেশিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়ার জন্য কাতার সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই জনবল কাতার এবং বাংলাদেশ উভয় দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রতিনিয়তই অবদান রাখছেন।
কাতারের আমিরকে আরও তরুণ, দক্ষ ও আধা দক্ষ জনশক্তি, আইটি বিশেষজ্ঞ, পেশাদার প্রযুক্তিবিদ নিয়োগের আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে উভয়পক্ষকে আরও বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
রাষ্ট্রপতি চলমান ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনার সুবিধার্থে কাতারের (মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে) প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
এদিকে কাতারের আমির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। তিনি আশ্বাস দেন যে, সামনের দিনে বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
কাতারের আমির বলেন, বাংলাদেশ-কাতারের সই করা বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক দু'দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ও বহু পক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে আরও কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
সাক্ষাতকালে উভয় নেতা তাদের মধ্যে কুশল বিনিময় করেন এবং আনন্দ প্রকাশ করেন যে, এই সফর বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে বহুমুখী অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করার উপায় নির্ধারণ করবে।
\হবৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, পররাষ্ট্র সচিব এবং বঙ্গভবনের সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে কাতারের প্রতিনিধি দলে ছিলেন আমিরি দেওয়ান প্রধান শেখ সৌদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন হামাদ আল-থানি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল-মুরাইখি এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত কাতারের রাষ্ট্রদূত সেরায়া বিন আলী আল-কাহতানি।
প্রসঙ্গত, দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার বিকালে ঢাকায় পৌঁছান কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবউদ্দিন। বিমানবন্দরে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয় কাতারের আমিরকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ থেকে এটিই প্রথম উচ্চপর্যায়ের রাষ্ট্রীয় সফর।
আর গত দুই দশকের মধ্যে কাতারের কোনো আমিরের বাংলাদেশে এটিই প্রথম সফর। সবশেষ ২০০৫ সালে কাতারের তখনকার আমির হামাদ বিন খলিফা আল থানি বাংলাদেশে এসেছিলেন।