সনদ জালিয়াতি

কারিগরি বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী গ্রেপ্তার

প্রকাশ | ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সনদ বাণিজ্যে জড়িত থাকার দায়ে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী মোছা. সেহেলা পারভীনকে (৫৪) গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ বাণিজ্যে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানকেও জিজ্ঞাসাবাদের কথা জানিয়েছে ডিবি। রোববার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, আমরা কাউকে ছাড় দেব না। আমাদের তথ্য-উপাত্তে যদি চেয়ারম্যানের সংশ্লিষ্টতা থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে আমরা তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করব। যেকোনো সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে। এরআগে তিনি বলেন, ডিবি লালবাগ বিভাগ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সার্টিফিকেট তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ১ এপ্রিল পীরেরবাগ এলাকায় একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট একেএম শামসুজ্জামান ও একই প্রতিষ্ঠানের চাকরিচু্যত ও বর্তমানে শামসুজ্জামানের ব্যক্তিগত বেতনভুক্ত সহকারী ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্য মতে বিপুল পরিমাণ জাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র এবং শত শত সার্টিফিকেট ও মার্কশিট তৈরি করার মতো বিশেষ কাগজপত্র, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি করে নেওয়া হাজার হাজার অরিজিনাল সার্টিফিকেট এবং মার্কশিটের বস্নাঙ্ক কপি, শতাধিক সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট, বায়োডাটা, গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্য মতে, গত ৫ এপ্রিল কুষ্টিয়ার সদর থানা এলাকা থেকে গড়াই সার্ভে ইন্সটিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার কলিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার এই তিন জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। ডিবি প্রধান বলেন, গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত কামরাঙ্গীরচর হিলফুল ফুযুল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানকে (৪৮) গত ১৮ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ঢাকা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক মো. মাকসুদুর রহমান ওরফে মামুনকে (৪০) গত ১৯ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া সর্বশেষ এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী মোছা. সেহেলা পারভীনকে শনিবার (২০ এপ্রিল) উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার একেএম শাসমুজ্জামান ও তার ব্যক্তিগত সহযোগী ফয়সাল গত কয়েক বছরে পাঁচ হাজারের বেশি সার্টিফিকেট-মার্কশিট বানিয়ে ভুয়া লোকদের কাছে হস্তান্তর করেছেন। একইসঙ্গে সরকারি ওয়েবসাইটে, সরকারি পাসওয়ার্ড, অথোরাইজেশন ব্যবহার করে ভুয়া লোকদের মধ্যে বিক্রি করা সার্টিফিকেটগুলো বাংলাদেশ সরকারের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করেছে। ফলে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যেকোনো দেশে বসে এই ওয়েবসাইটে গিয়ে রোল নাম্বার, রেজিস্ট্রেশন নাম্বারগুলো সার্চ করলে তা সঠিক হিসেবেই পাওয়া যায়। ডিবি প্রধান বলেন, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাত্রছাত্রীর তথ্য সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন সংক্রান্ত আবেদন নিবেদনের ফোকাল পারসন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। সিস্টেম এনালিস্ট বা কম্পিউটার অপারেটররা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রকদের নির্দেশে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রেখে সংবেদনশীল এই কাজগুলো করার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজেলা, জেলা এবং বিভাগীয় শহরে অবস্থিত সরকারি-বেসরকারি কারিগরি স্কুল ও কলেজ, পলিটেকনিকেল ইনস্টিটিউট, সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক, প্রিন্সিপালরা সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনৈতিকভাবে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন, রোল নাম্বার সৃজন, রেজাল্ট পরিবর্তন-পরিবর্ধন, নাম ও জন্ম তারিখ সংশোধনের তথ্য কম্পিউটার অপারেটর ও সিস্টেম এনালিস্টদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে টাকার বিনিময়ে আদান-প্রদান করেছে। এ রকম প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিপরায়ণ ২৫/৩০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কিছু দুর্নীতিবাজ সিবিএ দালাল কর্মচারী কর্মকর্তা, কম্পিউটার এবং পরিদর্শন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে রেজাল্ট পরিবর্তন, নাম ঠিকানা পরিবর্তন, প্রার্থীদের বয়স পরিবর্তন ও সময়ে অবৈধভাবে রেজিস্ট্রেশন নাম্বার, রোল নাম্বার প্রদান সংক্রান্ত কাজের সিন্ডিকেট বানিয়েছে।