কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের নয়টি দানবাক্স থেকে পাওয়া ২৭ বস্তা টাকা গুনে মিলেছে রেকর্ড সাত কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা, যা মসজিদের ইতিহাসে রেকর্ড। পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত হোসেন বলেন, এই টাকার বাইরে দানবাক্সে মিলেছে বিদেশি মুদ্রা ও সোনার গয়না, যার অর্থমূল্য এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
এর আগে মসজিদের দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর। সেবার ২৩ বস্তা টাকা গুনে ছয় কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া গিয়েছিল; এতদিন সেটাই ছিল রেকর্ড।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ এবং কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের উপস্থিতে শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় মসজিদের নয়টি দানবাক্স খোলা হয়।
পরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মোমতাজসহ ছয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে ৭০ জন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, পাগলা মসজিদ ও মাদ্রাসার ৩৪ জন শিক্ষক এবং ১০২ জন ছাত্র টাকা গোনা শুরু করেন। টাকা গুনে শেষ করতে সময় লাগে টানা ১৪ ঘণ্টা।
সুউচ্চ মিনার ও তিন গম্বুজবিশিষ্ট তিনতলা পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জের অন্যতম ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থাপনা। জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে হারুয়া এলাকায় প্রায় চার একর জায়গাজুড়ে এ মসজিদ। এ মসজিদের নামকরণ নিয়ে দুই ধরনের জনশ্রম্নতি আছে।
একটি মত হল, প্রায় পাঁচশ
\হবছর আগে বাংলার বারো ভূঁইয়ার অন্যতম ঈশা খাঁর উত্তর পুরুষ দেওয়ান জিলকদর খান ওই জায়গায় নদীর তীরে আধ্যাত্মিক সাধনায় মগ্ন হয়েছিলেন। সাধারণের কাছে তিনি 'জিল কদর পাগলা' নামে পরিচিতি পান। পরে ওই জায়গায় এ মসজিদ নির্মিত হয়। জিল কদর পাগলার নামানুসারেই মসজিদটি 'পাগলা মসজিদ' হিসেবে পরিচিতি পায়।
আরেকটি জনশ্রম্নতি হল, তৎকালীন কিশোরগঞ্জের হয়বতনগর জমিদার পরিবারের এক নিঃসন্তান বেগম 'পাগলা বিবি' নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন। দেওয়ানবাড়ির সেই বেগম স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে নরসুন্দার তীরে একটি মসজিদ নির্মাণ করলে তা 'পাগলা বিবির মসজিদ' নামে পরিচিতি পায়।
তিনতলা পাগলা মসজিদের ছাদে তিনটি বড় গম্বুজ এবং পাঁচতলা ভবনের সমানে একটি মিনার রয়েছে। সহস্রাধিক মানুষ সেখানে একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন, নারীদের জন্যও সেখানে নামাজের আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে।
এই মসজিদে মানত বা দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয় বলে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে অনেকে বিশ্বাস করেন। সে কারণে অনেকেই নগদ টাকা, গয়না, এমনকি গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিও দান করেন। দাতাদের মধ্যে অন্য ধর্মের মানুষও থাকেন।
সাধারণত প্রতি চার মাস পরপর মসজিদের দানবাক্স খোলা হয়। প্রশাসনের উপস্থিতিতে প্রতিবার দানবাক্স খোলার পর বিপুল পরিমাণ অর্থ মেলে বলে সংবাদপত্রের শিরোনাম হয় পাগলা মসজিদ। এ মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতসহ জটিল রোগীদের চিকিৎসায় এর অর্থ ব্যয় করা হয়।