শোডাউনের রাজনীতিতে ফিরছে বিএনপি

প্রকাশ | ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
আন্দোলন ও নির্বাচনে নেই বিএনপি। এ কারণে প্রায় দেড়যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা এই দলটির নেতাকর্মীরা চরমভাবে হতাশ। এই হতাশা কাটাতে ২৮ অক্টোবরে আগের মতো শোডাউনের রাজনীতিতে ফিরতে চাচ্ছে দলটি। এর অংশ হিসেবে দীর্ঘ পাঁচ মাস পর ঢাকায় পৃথক দুই সমাবেশ করার উদ্যোগ নিয়েছে তারা। এর মধ্যে আগামী শুক্রবার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে এবং পহেলা মে মহান মে দিবস উপলক্ষে শ্রমিক সমাবেশের মাধ্যমে বড় শোডাউন করবে বিএনপি। \হখোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই দুই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আবারও রাজপথে ফিরতে চাইছে দলটি। এজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। ঘরোয়া বৈঠক, মতবিনিময় সভাসহ প্রস্ততি সভার নানাবিধ কার্যক্রম শুরু করেছেন নেতারা। এই দুই সমাবেশ ছাড়াও তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের আরও সক্রিয় করতে, তাদেরকে রাজপথে আনতে লিফলেট বিতরণসহ কর্মিসভার কর্মসূচির প্রস্তুতিও চলছে। আজকালকের মধ্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। এরপর ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃতু্যবার্ষিকী উপলক্ষে মাসজুড়ে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করা হবে। বিএনপি নেতারা জানান, সরকারবিরোধী টানা আড়াই মাসের আন্দোলন ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নেতাকর্মীরা হতাশ। \হতাদের সক্রিয় করতে দলের হাইকমান্ড নানান কর্মসূচি গ্রহণ করছেন। এর অংশ হিসেবে আগামী শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উলস্নাহ নবী ও যুগ্ম আহ্বায়ক হারুন উর রশীদ হারুনসহ নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ওইদিন নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া দেশের সিংহভাগ শ্রমিক-কর্মচারীর বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কষাঘাতে দুর্বিষহ জীবন আর কষ্টকে সামনে রেখে পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশ করার উদ্যোগ নিয়েছেন দলের হাইকমান্ড। দুই সমাবেশের পস্তুুতি হিসেবে এরই মধ্যে দলের মধ্যে কর্মযজ্ঞ শুরু করা হয়েছে। মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যাত্রাবাড়ী-ডেমরা সাংগঠনিক জোনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশ সফল করতে আজ সোমবার প্রস্ততি সভার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে মহানগরের অন্তর্গত প্রত্যেক থানা-ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটি ছাড়াও প্রত্যেক অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। সমাবেশের জন্য এরই মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে শ্রমিক দলের সমাবেশ সফল করতে রোববার নয়াপল্টন কার্যালয়ে সংগঠনের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মে দিবসের সমাবেশ সফল করতে নানান দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শ্রমিক দলের সমন্বয়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সংগঠনের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনের নেতারা জানান, ওইদিন তারা লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটাতে চাইছেন। মূলত, ঢাকার শ্রমজীবী মানুষকে টার্গেট করে এ সমাবেশ করার পরিকল্পনা থাকলেও ঢাকার আশপাশে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ থেকেও কিছু নেতাকর্মী আসতে পারে। ঢাকার বিভিন্ন সেক্টরের বাইরে অসংগঠিত বিভিন্ন শ্রমিক ও মেহনতি মানুষকে সংগঠিত করার পরিকল্পনা থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইদিন প্রত্যেক জেলা, মহানগর, শিল্পাঞ্চল ও উপজেলা পর্যায়ে শ্রমিক দলের ব্যানারে সমাবেশ ও র?্যালি কর্মসূচি পালন করা হবে। মে দিবসের কর্মসূচি ছাড়াও ২ মে শ্রমিক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা করবে সংগঠনটি। মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু বলেন, বর্তমান সরকারের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে, দেশের মানুষকে বাঁচাতে, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে তাদের চালমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এর অংশ হিসেবে আগামী শুক্রবার ঢাকায় সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সমবেশে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করবে। প্রসঙ্গত, গত বছর ২৮ অক্টোবর ঢাকার বিএনপির সর্বশেষ বড় সমাবেশ হয়। সেই মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সারাদেশে প্রায় ২৫ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নেওয়া হয়। এ সময়ে একেবারে তৃণমূল থেকে শুরু করে সারাদেশে চলে সাঁড়াশি অভিযান। গ্রেপ্তার এড়াতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যান আত্মগোপনে। একইসঙ্গে চলে টানা হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি। দলটির দাবি- আড়াই মাসের আন্দোলনে সারাদেশে ১ হাজার ১৮৪টি মামলায় ১ লাখ ৫ হাজার ৬৮৪ জনকে আসামি করা হয়। একজন সাংবাদিকসহ মৃতু্যবরণ করেন ২৮ জন। ৯ হাজার ৭০৪ জন আহত হন বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়।