শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

দেশে তাপপ্রবাহ আরও বাড়বে হাসপাতাল প্রস্তুতের নির্দেশ

জনজীবনে স্থবিরতা, হিটস্ট্রোকে তিনজনের মৃতু্য, ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা
যাযাদি ডেস্ক
  ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
দেশে তাপপ্রবাহ আরও বাড়বে হাসপাতাল প্রস্তুতের নির্দেশ

সারাদেশে বেড়েই চলছে তাপপ্রবাহ। প্রচন্ড গরমে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম স্থবিরতা। বাড়ছে রোগব্যাধি। চলমান তাপপ্রবাহ দীর্ঘ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। রোববার দেশের ১২ অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যায় তীব্র তাপপ্রবাহ। জেলাগুলো হলো- পাবনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী জেলাসহ খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলা। এর মধ্যে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায় যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, ফেনী, কক্সবাজার, চাঁদপুর ও রাঙামাটি জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে বয়ে যায় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ।

অতি তীব্র তাপপ্রবাহে যশোরসহ কয়েকটি অঞ্চলের সড়কের বিটুমিন গলে গেছে। এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের সতর্কবার্তা জারির দ্বিতীয় দিন রোববার নরসিংদী, সিলেট ও মেহেরপুরে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃতু্যর খবর পাওয়া গেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় সারাদেশের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। রোববার সকালে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি এই নির্দেশ দেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে

যশোর ও চুয়াডাঙ্গায়। এ ছাড়া পাবনার ঈশ্বরদীতে ছিল ৪২ ডিগ্রি। চলমান তাপপ্রবাহ পুরো সপ্তাহজুড়েই অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া রংপুর অঞ্চলের তাপমাত্রা বাড়তে পারে এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপপ্রবাহের মধ্যে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বজ্রঝড়সহ শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বৃষ্টি হলেও স্বস্তি মিলবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে রোববার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠে ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রিতে। শনিবার যা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি। এর আগে ২০২৩ সালের এপ্রিলে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রিতে।

রোববার সকালে সচিবালয়ে সারাদেশের হাসপাতালের পরিচালক এবং সিভিল সার্জনদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের বলেন, 'তাপদাহের কারণে কোল্ড কেস (যাদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া জরুরি নয়) এই মুহূর্তে হাসপাতালে ভর্তি না করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালগুলো প্রতিকূল পরিবেশের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'এই গরমে সবচেয়ে বেশি ভালনারেবল বয়স্ক এবং বাচ্চারা। এবার এমন একটা জলবায়ু পরিবর্তন হলো যে, আমরা জীবনে কখনো শুনিনি যে দুবাই বিমানবন্দর পানিতে ডুবে গেছে। আমাদের এগুলো ফেস করতে হবে।'

মন্ত্রী বলেন, 'আমার কাছে যখন মেসেজ আসল (হিট এলার্ট), আমি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে মেসেজ দিয়ে স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। কারণ, সব চেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে বাচ্চা এবং বয়স্করা।'

হাসপাতালের পরিচালক এবং সিভিল সার্জনের সঙ্গে মিটিং করেছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, 'আমার কয়েকটা নির্দেশনা ছিল, এর মধ্যে একটি হলো-বয়স্ক এবং বাচ্চারা প্রয়োজন ছাড়া যেন বাসার বাইরে না যায়। হাসপাতালগুলোতে কোনো কোল্ড কেস এখন ভর্তি করতে না করেছি। কোল্ড কেস অর্থাৎ এক মাস পর অপারেশন করলে অসুবিধা না হয়, সেটা দুই সপ্তাহ পরে করুক। হাসপাতাল খালি রাখার জন্য বলছি যে, যদি চাপ হয়, তাহলে বাচ্চা এবং বয়স্কদের জন্য যেন ভর্তি করা হয়। এখন কোল্ড কেস কয়েক দিন বন্ধ থাকবে।'

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের ওরাল স্যালাইনের কোথাও কোনো ঘাটতি হলে যেন আমাকে সঙ্গে সঙ্গে জানানো হয়। এখন পর্যন্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। প্রকৃতির সঙ্গে তো আমাদের কারও হাত নেই। এটা আমাদের রেডি রাখতে হবে।'

শিশুদের জন্য হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, 'আমি গতকাল শিশু হাসপাতালে গিয়েছি। শিশু হাসপাতালগুলোকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখার জন্যই সারাদেশের হাসপাতালগুলোকে নির্দেশ দিয়েছি। কোল্ড কেসগুলোকে এখন হাসপাতালে ভর্তি না করতে বলা হয়েছে।'

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হয়েছে। মে মাসের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে বলা হচ্ছে- তাহলে ছুটি কি বাড়ানো হবে? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, 'পরিস্থিতি বুঝে যদি আমরা মনে করি, ডেফিনেন্টলি আমরা ছুটি বাড়াব। বাচ্চাদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া যাবে না।'

চুয়াডাঙ্গা ও যশোর পুড়ছে ৪২.২ ডিগ্রিতে

স্টাফ রিপোর্টার, চুয়াডাঙ্গা জানান, কৃষিসমৃদ্ধ চুয়াডাঙ্গা জেলায় তীব্র তাপদাহ খরার কারণে কৃষিতে সংকট দেখা দিয়েছে। বোরো মৌসুমে ধান কাটার সময় এসেছে। ধান কাটা শুরুও হয়েছে। তবে প্রচন্ড রোদে মাঠে দাঁড়াতে পারছেন না কৃষক-মজুর। প্রচন্ড খরায় আম-লিচুর গুটি ঝরে যাচ্ছে। সব ফসলে সেচ দিতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

রোববার বিকাল ৩টায় যশোর ও চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলায় এই মৌসুমের সর্বোচ্চ। এপ্রিল মাসে এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তর।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. জামিনুর রহমান বলেন, 'টানা পাঁচ দিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে চুয়াডাঙ্গায়। বর্তমানে তীব্র তাপদাহ চলছে এই জেলায়। আপাতত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এপ্রিল মাসজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে।

সিলেটে রিকশাচালকের মৃতু্য

রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা পুলিশ বক্সের সামনে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে আবু হানিফ মিয়া (৩০) নামে এক রিকশাচালকের মৃতু্য হয়েছে বলে জানা গেছে। নিহত আবু হানিফ মিয়া হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার শিবপুর গ্রামের করম আলীর ছেলে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, 'রোববার বেলা ১১টার দিকে দক্ষিণ সুরমা পুলিশ বক্সের সামনে রিকশাচালক হানিফ মিয়া অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।'

মেহেরপুরে গৃহবধূর মৃতু্য

এদিকে, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় তীব্র তাপদাহের মধ্যে বাড়ির উঠানে কাজ করার সময় এক গৃহবধূর মৃতু্য হয়েছে। রোববার সকাল ৮টায় উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের রুয়েরকান্দি গ্রামে এই নারীর মৃতু্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নোমাজ আলী। মারা যাওয়া ৪৫ বছরের শিল্পী খাতুন ওই গ্রামের আবু তাহেরের স্ত্রী।

শিল্পী খাতুনের চাচাত বোন তছলিমা খাতুন জানান, রোববার সকাল থেকে শুরু হয়েছে তীব্র তাপদাহ। এর মধ্যে শিল্পী খাতুন নিজ বাড়িতে উঠানে কাজ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ স্ট্রোক করে মারা যান তিনি। গত তিন দিন ধরে শিল্পী খাতুন জ্বর এবং বমিতে অসুস্থ ছিলেন বলে জানান এই স্বজন।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক শামীম হাসান বলেন, 'জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বইছে। এর মধ্যে গাংনী উপজেলায় নারীর মৃতু্যটি হিটস্ট্রোকে হয়েছে কিনা, সেটা নিশ্চিত করতে ইউএনও এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'

বৈরী আবহাওয়ার হাত থেকে মুক্তি পেতে জেলাবাসীকে অতি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না হতে এবং নিজেকে সুস্থ রাখার নির্দেশনা দিয়ে মাইকিং করা হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

মাধবদীতে একজনের মৃতু্য

মাধবদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি জানান, উপজেলার মাধবদীতে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে সাফকাত জামিল ইবান (৩০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। রোববার দুপুর ১২টার দিকে ভগীরথপুর গ্রামের মৃত জাকারিয়ার ছেলে সাফকাত স্ট্রোক করলে স্বজনরা তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীকে দেখে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাফকাত জামিল ইবান সকালে নারায়ণগঞ্জের মামার বাড়ি থেকে বিয়ের অনুষ্ঠানের দাওয়াত থেকে নিজ বাড়িতে আসেন। এরপর থেকে তিনি অসুস্থতাবোধ করলে স্থানীয় একজন ডাক্তার পেশার মাপার পর পেশার লো দেখায়। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শারীরিকভাবে বেশি অসুস্থ হলে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সিহকের স্বজনরা জানান, হিটস্ট্রোকে তার মৃতু্য হয়েছে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

ঈশ্বরদীতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস

পাবনা প্রতিনিধি জানান, রোববার পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা পাবনা জেলায় চলতি মৌসুমের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগেরদিন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন জানান, ঈশ্বরদীতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এটিই চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ। এই তাপমাত্রা আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে জেলায় অতি তীব্র তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে।

তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে গোটা জেলা। অসহনীয় গরমে অতিষ্ঠ জেলার জনজীবন। তীব্র গরমে মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষক, রিকশচালক, ভ্যানচালক, ইটভাটার শ্রমিকসহ দিনমজুরদের জন্য অসহ্য হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও তীব্র গরমে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সব বয়সি মানুষ।

রাজশাহীতে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি

রাজশাহী অফিস জানায়, রোববার রাজশাহীতে তাপমাত্রার পারদ উঠে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এমন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজশাহীজুড়ে শনিবার থেকে সাত দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। প্রখর রোদ-গরমে সুস্থ থাকতে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে।

বগুড়ায় বাড়তে পারে তাপমাত্রা

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো বগুড়ায় তাপদাহ বেড়ে চলছে। রোববার এই মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে কমছে বাতাসের আর্দ্রতা।

বগুড়া আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বোরবার বগুড়ায় এই মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঢাকার আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, 'তাপমাত্রা আজ আরও একটু বেশি। এই তাপমাত্রা এমনই থাকতে পারে এ সপ্তাহজুড়ে। বাতাসে জ্বলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় গরমের অনুভূতি তাপমাত্রার তুলনায় বেশি।'

যশোরে গলে যাচ্ছে সড়কের বিটুমিন

অন্যদিকে, অতি তীব্র তাপপ্রবাহে যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে সড়কের বিটুমিন গলে যাচ্ছে। ডায়রিয়াসহ গরমজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। রোববার বিকাল ৩টায় যশোরের তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩০ শতাংশ। শনিবার জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রোববার শহরের মুজিব সড়কে রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন চালক প্রশান্ত দাস। তিনি বলেন, 'বেলা ১১টা পর্যন্ত যাত্রী পাওয়া যায়। এরপর থেকে রাস্তা জনশূন্য হয়ে যায়। ওপরে সূর্য্যের যেমন তাপ, তেমনি নিচে রাস্তা থেকেও ওঠে আসে ভ্যাপসা গরম। সন্ধ্যার আগে আর যাত্রী মিলবে না। প্রচন্ড গরমে নিজের শরীরও হাঁসফাঁস করে।'

চৌগাছা থেকে খুব সকালে ৬০ কেজি পেয়ারা এনে সাইকেলে নিয়ে বিক্রি করছেন ঝিকরগাছা উপজেলার বারাকপুর গ্রামের সোহেল রানা। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত তিনি ২০-২৫ কেজির মতন পেয়ারা বিক্রি করতে পেরেছেন। তিনি জানান, খুব গরমের কারণে রাস্তায় লোকজন নেই; সেই কারণে বেচাবিক্রিও হচ্ছে না।

যশোর জেনারেল হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী ভর্তি হয়েছে ২৪ জন। আগের রোগী মিলিয়ে বর্তমানে রয়েছে ২৮ জন। এর মধ্যে শিশু ১২, নারী এবং পুরুষ ৯ জন। শিশুদের মধ্যে তিন জন হাম, পক্স ও টিটেনাস আক্রান্ত। অন্য সবাই ডায়রিয়া রোগী। হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স হোসনে আরা খাতুন এ তথ্য দিয়েছেন।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার আব্দুস সামাদ বলেন, 'এই গরমে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস, হার্ট ও কিডনি রোগী। গরমের কারণে বেশির ভাগ শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে। এই গরমে স্ট্রোক, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া প্রভৃতি রোগে মানুষ আক্রান্ত হয়।'

রোদে বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে ডাক্তার আব্দুস সামাদ বলেন, 'সবার উচিত, সুতির ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করা। এখন প্রচুর পরিমাণে সুপেয় পানি, ডাবের পানি, স্যালাইন, দেশি ফলমূল খাওয়া উচিত। পচা ও বাসী খাবার যেন কেউ না খায়।'

এদিকে, লাগাতার প্রচন্ড গরমে যশোরে বিভিন্ন সড়কের বিটুমিন গলে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে কথা হয় সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাহবুব হায়দার খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'রাস্তার বিটুমিন গলে যাচ্ছে মূলত তাপমাত্রার কারণেই। গত কয়েক দিন ধরে যশোরে প্রচন্ড তাপমাত্রা বিরাজমান। এই তাপমাত্রায় রাস্তার কোথাও কোথাও বিটুমিন গলে যাচ্ছে- এমন খবর আমাদের কাছে রয়েছে।'

যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে সহনীয় সড়কে ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়। পরে আরও বেশি তাপমাত্রা সহনশীল সড়কে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু কিছু রাস্তা বেশ কয়েক বছর আগে তৈরি। সেখানে মূলত ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে। সে কারণেও এগুলো গলে যেতে পারে।

রোববার আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক তাপপ্রবাহের বিষয়ে জানান, বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।

এ ছাড়া সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্বাভাসে বলা হয়, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

মঙ্গলবারের পূর্বাভাসে বলা হয়, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী বুধবার ও বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারাদেশে সামান্য বৃষ্টি হতে পারে। তবে এর খুব একটা প্রভাব পড়বে না তাপমাত্রায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে