শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

চট্টগ্রামে বাড়ছে চালের দাম

সনজীব নাথ, চট্টগ্রাম
  ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রামে বাড়ছে চালের দাম

সরকারি খাদ্য গুদামে চালের মজুত কমে আসায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে চালের দাম বাড়ছে।

শনিবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাট, চকবাজার, ঝাউতলা বাজার, ফিরিঙ্গিবাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে।

তবে চট্টগ্রামের পাইকারি চালের বাজার পাহাড়তলি ও খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের দাম বাড়েনি, স্বাভাবিক আছে।

পাহাড়তলির বিসমিলস্নাহ স্টোরের মালিক হাজী উকিল আহমদ সওদাগর বলেন, বাজারে চালের সরবরাহ কম। ফলে রমজানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছেন মিল মালিক ও আড়তদাররা। এরপর আর চালের দাম বাড়েনি। যদিও চাল সরবরাহ আগের মতোই কম রয়েছে।

রাইসমিল মালিক, মোকাম মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে মোটা চাল (স্বর্ণা ও চায়না ইরি)

রোজার আগে ৪২-৪৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল। রোজায় তা ৩-৪ টাকা বাড়িয়ে বর্তমানে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৪৭ টাকায়। মাঝারি মানের চালের (পাইজাম, বিআর-২৮, বিআর-২৯ ও বিআর-৪৯) কেজি ৪৮-৫০ টাকা থেকে বেড়ে পাইকারিতে ৫৩-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চট্টগ্রামের মোটা আতপ চাল কেজিপ্রতি ৪২-৪৩ টাকা থেকে বেড়ে ৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো সরু চালের কেজিপ্রতি দাম ৬৫-৬৭ টাকা থেকে বেড়ে ৭০-৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কিন্তু বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে মোটা চাল (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) খুচরায় বিক্রয় হচ্ছে ৫৫-৫৬ টাকা। মাঝারি মানের চালের (পাইজাম, বিআর-২৮, বিআর-২৯ ও বিআর-৪৯) কেজি ৫৮-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো সরু চালের কেজিপ্রতি ৭০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। যা রোজার শেষ দিকেও ৩-৪ টাকা কম ছিল।

রিয়াজউদ্দিন বাজারের আল ফারুক অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী সৈয়দুল হক বলেন, পাইকারি বাজারেও চালের দাম বেড়েছে। ফলে খুচরা বাজারেও বেড়েছে। খুচরা বাজারে চালের দাম পাইকারি পর্যায়ের দামের উপর নির্ভর করে।

তিনি বলেন, 'শুক্রবার দুপুরে নগরীর পাহাড়তলি পাইকারি বাজার থেকে কিছু চাল কেনার জন্য যোগাযোগ করেছিলাম। চালের দাম কেজিপ্রতি ২-৬ টাকা পর্যন্ত এবং বস্তাপ্রতি ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি চাচ্ছেন তারা। এজন্য আর নতুন করে চাল কেনা হয়নি।'

মিলমালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধানের সরবরাহ কম থাকার পাশাপাশি দামও কিছুটা বেশি। অন্যদিকে বেসরকারি পর্যায়ে ধানের মজুত থাকলেও সরকারি পর্যায়ে চালের মজুত কমে যাওয়ায় খবরে দাম ক্রমেই বাড়ছে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের বি. বাড়িয়া অটোরাইস মিলের স্বত্বাধিকারী ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, 'আমরা মূলত দিনাজপুর, ময়মনসিংহ থেকে ধান এনে এখানে ভাঙাই। ধানের দাম বেড়েছে মণপ্রতি ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত। এর প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে।'

তিনি বলেন, 'বাজারের ধানের সরবরাহ তুলনামূলক কম। ভালো মানের ধান মণপ্রতি ১ হাজার ৩৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা ধান মণপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে নতুন ধান আসবে। এর আগে এমন সংকট আমাদের কাছেও অপ্রত্যাশিত।'

পরিবহণ খাতেও বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে উলেস্নখ করে ফরিদ উদ্দিন বলেন, 'ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রামে আগে একটি ট্রাকের ভাড়া ছিল ১৬-১৭ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে ২৩-২৪ হাজার টাকা হয়ে গেছে। দিনাজপুর থেকে চট্টগ্রামে আগে একটি ট্রাকের ভাড়া ছিল ২৫-২৭ হাজার টাকা। এখন তা ৩৫ হাজার টাকা হয়েছে। অর্থাৎ পরিবহণ ব্যয়ও ট্রাকপ্রতি ৫-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর প্রভাবও চালের বাজারে পড়ছে।'

খাতুনগঞ্জের জেদ্দা অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী আব্দুল গণি পেয়ার বলেন, 'আমরা দিনাজপুর, কুষ্টিয়া ও হবিগঞ্জের মোকাম থেকে চাল সংগ্রহ করে থাকি। তারা বলছে, ধান নেই। তাই চাল নেই। বাড়তি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। অনেক মোকামে চাল নেই বলে জানা গেছে।'

এদিকে চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগ জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে সরকারি গুদামে স্বাভাবিক সময়ে চালের মজুত থাকার কথা ১ লাখ ৬১ হাজার ৬৫২ টন। সেখানে গত শুক্রবার পর্যন্ত তা ছিল ৩০ হাজার ৬২০ টন। যা এক-পঞ্চামংশেরও কম। এ চাল দিয়ে চট্টগ্রামে এক মাসের বেশি চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়।

সূত্রমতে, খাদ্য অধিদপ্তরের অধীনে চট্টগ্রামের হালিশহর সিএসডিতে ১২৬টি গুদাম রয়েছে। এসব গুদামের ধারণক্ষমতা ১ লাখ ১০ হাজার ৬৫২ টন। এখানে সরকারি আমদানি ও সংগ্রহের ধান-চাল মজুত থাকে। এখান থেকেই চট্টগ্রাম অঞ্চলের সব ধরনের সরকারি ত্রাণ, টিআর, জিআর, ভিজিএফ, কাবিখা, ওএমএস, টিসিবি, বিভিন্ন বাহিনীর রেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন কর্মসূচির চাল সরবরাহ করা হয়। এখান থেকে গত মার্চে বিতরণ করা হয় ১৭ হাজার ৭৬০ টন চাল। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এখানে চাল মজুত ছিল ২১ হাজার ৫৪০ টন।

একইভাবে চট্টগ্রামের দেওয়ানহাট সিএসডিতেও চালের মজুত কমে এসেছে। এখানকার ৬৭টি গুদামে ৫১ হাজার টন ধারণক্ষমতা থাকলেও মজুত রয়েছে ৯ হাজার ৮০ টন। এখান থেকে গত মার্চ মাসে চাল বিতরণ হয়েছে ১৪ হাজার ৬৮২ টন।

অথচ সরকারি গুদামগুলো এখন চালে ঠাসা থাকার কথা। সরকারি চাল প্রতিদিন বিলি-বণ্টনের কারণে একেবারেই কমে আসছে মজুত। গত ১০ মার্চ সরকারিভাবে ধান ও চাল সংগ্রহ শেষ হওয়ায় গুদামে নতুন করে চাল মজুতের কোনো সুযোগ নেই।

আর এই মজুতকে নিম্ন পর্যায়ের মজুত বলে মন্তব্য করেছেন খোদ খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারাই। তবে বিষয়টি নিয়ে তারা প্রকাশ্যে তেমন কোনো কথা বলছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাদ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে এক মাসের বেশি চালের মজুত নেই।

হালিশহর সিএসডির ব্যবস্থাপক থোয়াই মংপ্রম্ন মারমা চালের মজুত সর্বনিম্ন পর্যায়ে আসার কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। চালের বরাদ্দ দেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি শেষ হওয়া ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে সামান্য পরিমাণ ধান-চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক এসএম কায়সার আলী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি সহকারী পরিচালক দোলন দেবের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তরের সহকারী উপপরিচালক দোলন দেব বলেন, আমাদের চাল লাগলে আবার উত্তরবঙ্গে যোগাযোগ করা হবে এবং চাল আনা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে