সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম আইডির নিরাপত্তা দুর্বলতা ঠিক করে দেওয়া, হ্যাক হওয়া আইডি উদ্ধার করে দেওয়ার নামে নিজেরাই বিভিন্ন ব্যক্তির আইডির নিয়ন্ত্রণ নিত। এরপর আইডি ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিত টাকা। এ ছাড়া আইডিতে যুক্ত থাকা প্রবাসীর স্বজনদের কাছে ম্যাসেজ দিয়ে মায়ের অসুস্থতার কথা বলে টাকা আদায় করত তারা।
এভাবেই দীর্ঘদিন ফ্রিল্যান্সার ও ফেসবুক বিশেষজ্ঞ পরিচয়ে প্রতারণা করে আসছিল শামীম আহমেদ জয় (২৩) ও মোহাম্মদ স্বাধীন আহমেদ (১৮)।
তারা সহোদর। তাদের টার্গেটে থাকত ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
শুক্রবার এক প্রবাসীর ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর ডেমরা থানার টেংরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে হ্যাকিংয়ের কাজে ব্যবহৃত ১টি সিপিইউ, ২টি মোবাইল ফোন, ১টি রাউটার ও ১২টি ভুয়া এনআইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়। পরে তার দখলে থাকা প্রায় ৫০০ দেশি-বিদেশি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের লগইন করার প্রয়োজনীয় ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ডের তথ্য পাওয়া যায়।
শনিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির
মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, সম্প্রতি কানাডিয়ান এক প্রবাসীর আইডির নিরাপত্তা ত্রম্নটি ঠিক করে দেওয়ার কথা বলে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বস্ন্যাকমেইল করে জয়। ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রায় ১০ হাজার কানাডিয়ান ডলার হাতিয়ে নেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রবাসী তার বাবার মাধ্যমে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) সাইবার ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, একটা সময় একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে হ্যাক হওয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারের কাজ করত শামীম। ফ্রিল্যান্সার থেকে ২০২৩ সাল থেকে প্রতারণা শুরু করে সে। শামীম প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ওই অ্যাকাউন্টের ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা পরিচিত ব্যক্তিদের মেসেঞ্জারে 'আমার মা স্ট্রোক করেছে। জরুরি তিন হাজার ডলার পাঠাও।' এমন সব বার্তা পাঠিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা শুরু করে। আবার হ্যাক করা অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেও আদায় করা হতো অর্থ। এমনকি হ্যাক করা আইডি থেকে গুরুত্বপূর্ণ-স্পর্শকাতর তথ্য, গোপন ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে বস্ন্যাকমেলিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
তিনি বলেন, এ ছাড়া ওই অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করে ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা বন্ধুদের টার্গেট করে মেসেঞ্জারে তাদের অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অথবা অ্যাকাউন্টের সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার কথা বলে একটি মোবাইল নম্বর অথবা একটি ইমেইল অ্যাড্রেস অ্যাড করার অনুরোধ করত। ভুক্তভোগী মোবাইল নম্বরটি অথবা ইমেইল অ্যাড্রেসটি অ্যাড করলে শামীম আহমেদ জয় টার্গেট অ্যাকাউন্টটিতে 'ফরগেট পাসওয়ার্ড' অপশনটি ব্যবহার করে ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিত। এরপর একটি লেমিনেটিং মেশিন ব্যবহার করে ভুক্তভোগীদের নামে ভুয়া এনআইডি কার্ড তৈরি করে ফেসবুকে সাবমিট করে হ্যাককৃত অ্যাকাউন্টটি স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিত।
সিটিটিসির এই কর্মকর্তা বলেন, শামীমকে গ্রেপ্তারের পর তার কাছ থেকে বিভিন্ন দেশের প্রবাসীর প্রায় ৫০০ ফেসবুক অ্যাকাউন্টের লগইন করার প্রয়োজনীয় ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ডের তথ্য পাওয়া গেছে। ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা এই হ্যাকারের টার্গেট। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে বস্নাকমেইলের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৫০ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে শামীম। প্রত্যেক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সর্বনিম্ন ১০০০ হাজার ডলার নিত সে।
এক প্রবাসীর ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় ওই প্রবাসীর বাবা ডিএমপির উত্তরা পূর্ব থানায় মামলা করেন। এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের পুলিশ রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ডিএমপির এ কর্মকর্তা।