আইনজীবীদের গাউন পরা শিথিল

স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা

তীব্র গরমে সারা দেশে ত্রাহি অবস্থা :জনজীবন বিপর্যস্ত

প্রকাশ | ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রচন্ড দাবদাহে মানুষের পাশাপাশি প্রাণীকুলের জীবনে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। পানি পান করে তৃষ্ণা মেটাচ্ছে একটি কাক। ছবিটি খুলনা শহর থেকে তোলা
বৈশাখের তপ্ত গরমে দেশজুড়ে বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে দুই জেলায় চলছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ; সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় চুয়াডাঙ্গাকে ছাড়িয়েছে যশোর, পারদ উঠেছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আগে থেকেই তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছিল দেশ। এর মধ্যে শনিবার যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। আর ঢাকার তাপমাত্রা আরও বেড়ে এ মৌসুমে প্রথমবারের মতো ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। দেশজুড়ে এমন খরতাপ পরিস্থিতিতে দেশের সব স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় ৭ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। ঈদের ছুটি শেষে আজ রোববার খোলার কথা থাকলেও তা এখন খুলবে ২৮ এপ্রিল। আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, ২৪-২৫ তারিখের দিকে তাপপ্রবাহের তীব্রতা কমে এলেও এ মাসজুড়েই বিরাজ করবে তাপপ্রবাহ। 'তখন অতিতীব্র থেকে তীব্র, তীব্র থেকে মাঝারি এমন থাকবে। তবে তাপপ্রবাহ যে চলে যাবে তা নয়। এ মাসে বড় পরিসরে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনাও নেই। বিচ্ছিন্নভাবে দু-এক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে- যেমন, সিলেটের দু-এক জায়গায় সামান্য গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি।' বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। এরপর ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। এর আগে টানা চারদিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছিল। শুক্রবার সেখানে ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, বৃহস্পতিবার ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং মঙ্গলবার ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গত বছর পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। ১৯৯৫ ও ২০০২ সালেও সমান তাপমাত্রা উঠেছিল, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০১৪ সালে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, দেশে আবহাওয়ার রেকর্ড রাখা শুরুর পর এটাই সর্বোচ্চ। এদিন তাপপ্রবাহের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের বাকি অংশ এবং বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। এপ্রিল বাংলাদেশের উষ্ণতম মাস। এ মাসে গরমের পাশাপাশি কালবৈশাখীরও দাপট থাকে বেশি। আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মাসে দুই থেকে চারটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ এবং এক-দুটি তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। অতি তীব্র তাপপ্রবাহে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে। শুক্রবার আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মলিস্নক এক সতর্কবার্তায় বলেছিলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলমান মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ আরও তিন দিন থাকতে পারে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে বাড়তে পারে অস্বস্তি। তীব্র গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও হিট স্ট্রোক এড়াতে চুয়াডাঙ্গায় মাইকিং করে জনগণকে সচেতনও করছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা এই অবস্থায় সারাদেশে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। ঘোষণা অনুযায়ী, প্রাথমিক বিদ্যালয় আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি থাকবে। তবে আবহাওয়া পরিস্থিতি পরিবর্তন সাপেক্ষে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে। শনিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আগামী ৭ দিন সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান তাপদাহে শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় আগামী ২১ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের বিদ্যালয় ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বু্যরোর লার্নিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকবে। এর আগে সকালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুধু অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান তাপদাহ ও আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কতা জারির পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর জানায়, অধিদপ্তরের আওতাধীন সব সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা) পূর্বনির্ধারিত ছুটি শেষে ২১ এপ্রিল খোলার পরিবর্তে আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, সব মাদ্রাসা আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে তীব্র তাপদাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর ক্লাস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শনিবার বিকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তীব্র তাপদাহের কারণে পরবর্তী তারিখ ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর ক্লাস বন্ধ থাকবে। আইনজীবীদের গাউন পরা শিথিল দেশজুড়ে চলমান প্রচন্ড তাপপ্রবাহের কারণে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে মামলার শুনানিতে আইনজীবীদের গাউন পরার আবশ্যকতা শিথিল করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের আদেশ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে মামলার শুনানিকালে আইনজীবীদের গাউন পরিধানের আবশ্যকতা শিথিল করা হলো। এ নির্দেশনা ২১ এপ্রিল (রোববার) থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। প্রচন্ড তাপপ্রবাহের কারণে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের আলোচনাক্রমে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উলেস্নখ করা হয়। এর আগে ২৪ মার্চ থেকে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি শুরু হয়। স্বাধীনতা দিবস, পবিত্র শবেকদর, পবিত্র ঈদুল ফিতর, নববর্ষসহ কোর্টের ছুটি শেষে আজ থেকে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগ (আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ) খুলছে। তবে অবকাশের সময় জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের কয়েকটি বেঞ্চে ও আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে বিচারিক কার্যক্রম চলেছে। কালো কোট ও গাউন পরায় আবশ্যকতা নেই এর আগে ৪ এপ্রিল অধস্তন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত বা ট্রাইবু্যনালের বিচারক এবং আইনজীবীদের মামলা পরিচালনার সময় পরিধেয় পোশাকের বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশের সব অধস্তন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত বা ট্রাইবু্যনালের বিচারক এবং আইনজীবী ক্ষেত্রমতো সাদা ফুলশার্ট বা সাদা শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ ও সাদা নেকব্যান্ড বা কালো টাই পরিধান করবেন। এ ক্ষেত্রে কালো কোট ও গাউন পরিধানের আবশ্যকতা নেই। এ নির্দেশনা ৮ এপ্রিল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উলেস্নখ করা হয়। এ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশব্যাপী চলমান প্রচন্ড তাপপ্রবাহের কারণে দেশের বিভিন্ন আইনজীবী সমিতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের আলোচনাক্রমে ওই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।