রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে শুক্রবার বেলা ২টার দিকে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট এক ঘণ্টার চেষ্টায় তা নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় কারো হতাহতের খবর না মিললেও হাসপাতালজুড়ে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ছোটাছুটি করে সবাই নেমে আসেন নিচে। আগুন লাগার কারণ উদ্ঘাটনে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সহকারী তালহা বিন জসিম বলেন, শুক্রবার দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটের দিকে হাসপাতালের পঞ্চম তলায় কার্ডিয়াক বিভাগে আগুন লাগে। খবর পেয়ে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের তিনটি ইউনিট ছুটে যায়। পরে সিদ্দিক বাজার এবং তেজগাঁও থেকে আরও দুটো ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। বেলা ২টা ৩৯ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'বি বস্নকের পাঁচ তলায় আগুন লেগেছিল। বি বস্নকের প্রতিটি তলায় আইসিইউ আছে। যেখানে আগুন লেগেছে সেখানেও আইসিইউ ছিল। আমরা রোগীদের সরিয়ে নিয়েছি। প্রত্যেককে অন্য জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।' আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেওয়া নৌবাহিনীর ঘাঁটি হাজী মহসিনের লেফটেন্যান্ট কমান্ডার তানবিনুর রহমান বলেন, 'আইসিইউতে যত রোগী ছিল, তাদের এবং স্বজনদের সবাইকেই নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছেন তারা।'
কোত্থেকে আগুনের সূত্রপাত এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. ফখরুদ্দীন জানান, ১টা ৫৫ মিনিটে হাসপাতালে পৌঁছে তারা দেখেন, কার্ডিয়াক বিভাগের আইসিইউ ইউনিটে এসিসহ বেশ কিছু ইকুইপমেন্টে আগুন জ্বলছে। তারা প্রথমে সেখান থেকে রোগী ও লোকজনকে বের করেন। পরে আগুন নির্বাপণ শুরু করেন।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি আইসিইউয়ের একটি এসি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তবে এরপরেও আমরা তদন্ত করব বলে উলেস্নখ করেন তিনি।
এদিকে বিকালে শিশু হাসপাতালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'আগুনের ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির পাঁচ সদস্যের মধ্যে কার্ডিয়াক আইসিইউ বিভাগের প্রধানকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। এছাড়া কমিটিতে আছেন একজন মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ওয়ার্ড মাস্টার, একজন নার্স ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি। তারা তিন দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেবেন।'
রোগীদের কোনো ক্ষতি হয়নি: স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী
এদিকে, ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে আগুন লাগার পর রোগীদের নিরাপদে অন্য হাসপাতালে সরিয়ে নেওয়ায় কারও কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা।
শুক্রবার বিকালে হাসপাতালের পরিস্থিতি ঘুরে দেখার পর বোর্ডরুমে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ কথা বলেন। হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমও এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটের দিকে হাসপাতালের বি বস্নকের পঞ্চম তলায় কার্ডিয়াক বিভাগে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ছুটে যায় অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর পাঁচটি ইউনিট। তাদের চেষ্টায় বেলা ২টা ৩৯ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ ঘটনায় কারও হতাহতের খবর না মিললেও পুরো হাসপাতালজুড়ে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। ছুটোছুটি করে সবাই নেমে আসেন নিচে।
হাসপাতালের বি বস্নকের পঞ্চম তলায় কার্ডিয়াক বিভাগে আগুনের সূত্রপাত হয়।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'ওই কার্ডিয়াক আইসিইউতে সাতজন রোগী ছিল। সব রোগীকেই আমরা এনআইসিভিডিতে (জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট) ট্রান্সফার করেছি এবং সেখানে সব রোগীই ভালো আছে।'
তিনি বলেন, 'এটা খুবই দুঃখজনক এরকম একটা হাসপাতালে আগুন। আবার নিজের বাসাতেও তো শর্টসার্কিট থেকে অনেক কিছু হয়। কিন্তু আমরা এখনই কিছু বলতে চাচ্ছি না। তদন্ত হোক আগে। আমরা পাঁচ সদস্যের কমিটি করে দিয়েছি।'
কোনো রোগীর কোনো ক্ষতি হয়নি জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'এনআইসিভিডিতে আমি খবর নিয়েছি। যেখানে তাদের রাখা হয়েছে সেটা কার্ডিয়াক আইসিইউ। সব রোগী ভালো আছে।'
হাসপাতালের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'আমি সব ইনস্ট্রুমেন্টের দাম তো আর জানি না। তবে আমি ওখানে গিয়ে বাচ্চাদের আইসিইউ বেডগুলো দেখেছি, আপনারাও দেখেছেন, সেগুলোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, পুড়ে গেছে। অক্সিজেনসহ অন্য লাইনগুলো পুড়ে গেছে। তবে সেখানে টাকার অঙ্কে কত ক্ষতি, সেগুলো আমরা তদন্ত না করে বলতে পারব না।'
আগুন লাগার পর হাসপাতালের লিফট থেকে শুরু করে অক্সিজেনের লাইনও বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে সে কারণে কোনো রোগীর কোনো ক্ষতি হয়নি বলে প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্য।
তিনি বলেন, 'লাইনের তার ককগুলো ভাগ থাকে, প্রত্যেক ওয়ার্ডের জন্য আলাদা সুইচ রয়েছে। সব এক লাইনে চলে না। আমরা চাইলে কোনো একটি নির্দিষ্ট ওয়ার্ডেও বন্ধ রাখতে পারি।'
হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'আমাদের মেজর কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ফায়ার ব্রিগেড অত্যন্ত দ্রম্নততার সঙ্গে রেসপন্স করেছে। আর আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের নিজস্ব ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম দ্রম্নত রোগীদের কার্ডিয়াক আইসিইউ থেকে অন্য আইসিইউতে শিফট করে। পরে রোগীগুলোকে অন্য হাসপাতাল ও আমাদের নিজস্ব অন্য আইসিইউগুলোতে নিয়ে যাই।'
তিনি জানান, বি বস্নকের ওই ভবনে ১৯৪টি বেডে ১৭৩ রোগী ছিল। তাদের বিভিন্নভাবে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছে।