রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
পালিয়ে এলেন আরও ৪৬ জন

টেকনাফ সীমান্তে ফের গোলার বিকট শব্দে জনমনে আতঙ্ক

আবদুল হামিদ, নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান)
  ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
টেকনাফ সীমান্তে ফের গোলার বিকট শব্দে জনমনে আতঙ্ক

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে চলমান যুদ্ধে আবারও মর্টার শেল ও গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে। ওপারে গোলার শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এপারের স্থানীয়দের মধ্যে। বুধবার সকাল থেকে থেমে থেমে শোনা গেছে গোলার শব্দ।

স্থানীয়রা জানান, বুধবার সকাল থেকে থেমে থেমে টেকনাফের হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তসহ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় রাখাইনে বোমা ও মর্টার শেলের বিকট শব্দ শোনা গেছে। এছাড়া মেরিন ড্রাইভ সড়কের আশপাশে গোলার শব্দে স্থানীয় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

সীমান্তবর্তী পৌরসভার এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, 'সকাল থেকে এই সীমান্তে এতই গোলার বিকট শব্দ শোনা গেছে, মনে হচ্ছে বাড়ির পাশে যুদ্ধ চলছে। মধ্যে কিছুদিন গোলাগুলির শব্দ বন্ধ থাকলেও বুধবার সকাল থেকে আবার বিকট শব্দ পাওয়া যায়।'

শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা ইয়াছিন বলেন, 'বুধবার সকাল থেকে সীমান্তের লোকজন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন। নাফ নদের সীমান্তে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।'

টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলম বলেন, 'সকাল থেকে সীমান্তে ভারী গোলার বিকট শব্দ পাওয়া গেছে। অন্যদিনের তুলনার আজকের

গোলার শব্দ ছিল বিকট।'

এদিকে, যুদ্ধে টিকতে না পেরে মঙ্গলবার রাতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে দেশটি নিরাপত্তা বাহিনীর আরও ৪৬ জন পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। বিজিবির সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) শরীফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতে নতুন করে আরও ৪৬ বিজিপি সদস্য আশ্রয় নিয়েছে। এ নিয়ে ২৭৭ জন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার জানান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কয়েক দিন ধরে গোলাগুলি চলছে। আরাকান আর্মির যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে সীমান্ত অতিক্রম করে মঙ্গলবার রাতে ৪৬ জন মিয়ানমারের জান্তা সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। বর্তমানে সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে দেখা গেছে।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, মিয়ানমার মংডু ও বুথেডংয়ে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফ নদে বিজিবি ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা নাফ নদ ও সীমান্ত সড়কে টহল বৃদ্ধি করেছে। সেটি চলমান এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তুত বিজিবি ও কোস্টগার্ড।

এ বিষয়ে কোস্টগার্ডের সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি বলেন, 'রাখাইনে সংঘাতের কারণে কিছু বিজিপির সদস্য এপারে আশ্রয় নিয়েছে বলে শুনেছি। তবে আমরা নাফ নদ সমুদ্রপথে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে টহল জোরদার রেখেছি। পাশাপাশি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোস্টগার্ড প্রস্তুত রয়েছে।'

উলেস্নখ্য, রাখাইনে চলমান সংঘর্ষে গত ফেব্রম্নয়ারিতে দেশটির সেনাসহ ৩৩০ জন বিজিপির সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। যার মধ্যে ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, ৪ জন বিজিপি পরিবারের সদস্য, ২ জন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য ও ৪ জন বেসামরিক নাগরিক। পরে গত ১৫ ফেব্রম্নয়ারি তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত পাঠানো হয়। এছাড়া গত ১১ মার্চ নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে এসেছিলেন ১৭৯ জন মিয়ানমার বিজিপি সদস্য। এ নিয়ে ২৭৭ জন বাংলাদেশে অবস্থান গ্রহণ করছে। তাদের ফেরত পাঠানো প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে