রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
আইসিডিডিআর,বিতে ঘণ্টায় ২০ রোগী ভর্তি

গরমে বাড়ছে রোগব্যাধি

পাঠান সোহাগ
  ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
গরমে বাড়ছে রোগব্যাধি

চলছে গ্রীষ্মের দাবদাহ। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। পাশাপাশি আবহাওয়ার এই বিরূপ পরিবর্তনে রাজধানীসহ সারাদেশে জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গরমের তীব্রতায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এ ছাড়া শ্রমজীবী নিম্ন আয়ের তরুণ ও বৃদ্ধরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। এদিকে রাজধানীর মহাখালীতে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি) বা কলেরা হাসপাতালেই প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ভর্তি হচ্ছে ২০ জন রোগী।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেলেই ডায়রিয়ার জন্য দায়ী জীবাণুগুলো শক্তিশালী হয়ে থাকে। পানি ও ঠান্ডা-বাসি খাবারে জন্ম নেওয়া এ জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। তখনই ডায়রিয়া হয়। এ ছাড়া ঋতু পরিবর্তন ও বাযু দূষণজনিত কারণে শিশুদের সর্দি, নাক বন্ধ হওয়া ও হাঁচি-কাশি, তীব্র জ্বর ও গলাব্যথার মতো রোগ হচ্ছে।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ২০৫ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে আউটডোরে ৭৪৮, ৩২৬ জন জরুরি বিভাগে এবং বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হয়েছে ১৫৮ জন। এসব রোগীর মধ্যে ডায়রিয়ার আক্রান্ত ছিল ৮০, নিউমোনিয়ায় ৭৬, অ্যাজমা ও স্কিন ডিজিজে ৮৯ এবং অন্যান্য রোগে ২৫০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।

রাজধানীর মহাখালীতে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি) বা কলেরা হাসপাতালের তথ্যমতে, প্রতিবছর দুই সিজনে ডায়রিয়ার রোগী বাড়ে। ২০২২ সালে রেকর্ডসংখ্যক রোগী ভর্তি হয়েছিল। এর আগে এ হাসপাতালে এত রোগী কখনো ভর্তি হয়নি। এরপর এ পর্যন্ত একদিনে এত রোগী আসেনি। তাদের তথ্যমতে, গত ৭ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪ হাজার ৮৮৮ জন। প্রতিদিন গড়ে ৪৮৮ রোগী ভর্তি হচ্ছে এ হাসপাতালে। ১০ দিনের মধ্যে ১২ এপ্রিল সবচেয়ে বেশি ৫৯৫ রোগী ভর্তি হয়েছিল। মার্চের শেষে ও এপ্রিলের শুরুর দিকে প্রতিদিন গড় রোগী সাড়ে ৩০০ জনের কম।

আইসিডিডিআর,বি ঢাকা হাসপাতালের প্রধান ডা. বাহারুল আলম যায়যায়দিনকে বলেন, আমাদের এখানে প্রতিবছর দুইবার আউট ব্যাক হয়। একটা শীতকালে আরেকটা হয় গ্রীষ্মকালে। এ বছর মার্চের ১৩ থেকে ১৬ তারিখ সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছিল। ১৬ মার্চ ৭৮৮ জন রোগী ভর্তি হয়। এরপর থেকে রোগী কমতে থাকে। সেটাকে আমরা শীতকালীন আউট ব্যাক বলছি। গ্রীষ্মকালীন আউট ব্যাক এখনো শুরু হয়নি সেটা যে কোনো সময় শুরু হতে পারে। তবে গত বছর মে-জুন মাসে গ্রীষ্মকালীন আউট ব্যাক শুরু হয়েছিল।

ডা. বাহারুল আরও বলেন, রোটা ভাইরাসের কারণে সাধারণত ডায়রিয়া হয়ে থাকে। কিন্তু শীতকালে রোটা ভাইরাস শিশুদের বেশি আক্রান্ত করে। আর গ্রীষ্মকালে এ ভাইরাস তরুণ ও বয়স্কদের আক্রান্ত করেন। এ কারণে এ সময় শ্রমজীবী নিম্নআয়ের মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে এবার নিম্ন-আয়ের বস্তি এলাকার শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মানুষ মূলত বিশুদ্ধ পানির সংকটে থাকে। সাধারণত রিকশা, ঠেলা চালক ও শ্রমিক শ্রেণির মানুষ যখন যেখানে কাজ করেন সেখানের পানি পান করেন, ফাস্টফুড খান। তারাই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত বেশি হচ্ছেন। রোগীর মৃতু্য সম্পর্কে তিনি বলেন, এ হাসপাতালে আইসিইউতে সপ্তাহে এক-দুজন রোগী মারা যায়। তারা ডায়রিয়াজনিত কারণেই হাসপাতালে ভর্তি হন কিন্তু তাদের অন্যান্য রোগের উপসর্গ থাকার কারণে মারা যান।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের রেসপেরিটরি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. কামরুজ্জামান বলেন, আবহাওয়া তথ্য অনুযায়ী তাপমাত্রা আরও বাড়বে। তাপমাত্রা বাড়লে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, জন্ডিস, হেপাটাইটিস এ ও ই ভাইরাস বেড়ে যায়। পাশাপাশি নিউমোনিয়া অনেক বৃদ্ধি পায়। এগুলো ক্রমেই বাড়ছে। বিভিন্ন অঞ্চলে গরমে পানির খাবার থেকেও ডায়রিয়া ছড়াচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সবারই সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না। বাইরে থেকে এসে সঙ্গে সঙ্গে এসির নিচে বসা যাবে, ঠান্ডা পানি খাওয়া যাবে না। রাস্তার ধারে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন ধরনের শরবত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। খোলা খাবার খাওয়া যাবে না।

রাজধানীর মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রসহ (আইসিডিডিআর,বি) ও আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ঘুরে দেখা গেছে, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দি, হাঁচি-কাশি নিয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছে বেশি। কলেরা হাসপাতালের বি বস্নকে ভর্তি আছে তিন বছর বয়সের হুজাইফা আহমেদ। হুজাইফার বাবা রাশেদুল ইসলাম বলেন, গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী থেকে ঢাকা বেড়াতে এসে ছেলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। দুইদিন যাবৎ এখানে ভর্তি। কোনো অগ্রগতি নেই। এ হাসপাতালে ডি বস্নকে টঙ্গী চেরাগ আলীর মো. মোদেক মিয়া গত মঙ্গলবার ভর্তি হয়েছেন। তার ভাতিজা রোমার মিয়া বলেন, চাচা রাজমিস্ত্রির কাজ বরেন। বিকালে কয়েকবার বমি করে, চারবার পাতলা পায়খানা হয়। রাতেই এখানে ভর্তি করি। পাঁচটা সেলাই পুশ করছে। এখনো কোনো রেত-চেত নাই। শিশু হাসপাতালে কথা হয় খিলগাঁওয়ের মনিকা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাবুর বয়স চার মাস। সকাল থেকে কিছুই মুখে নিচ্ছে না। একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর আগে দুইমাস হাসপাতালে থেকে নিউমোনিয়া ভালো করে বাড়ি গেলাম এক সপ্তাহ হয়েছে। অবস্থা খারাপ তাই চিকিৎসক অক্সিজেন দিছে। এখন স্যালাইন চলছে।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. আহমদ হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, গরম যতদিন থাকবে এসব রোগী ততদিন বাড়বে। ঈদের পর দুইদিন রোগীর চাপ বেশি ছিল। গত মঙ্গলবার রোগী বেশি আসছে। আজ বুধবার আগের দিনের তুলনায় রোগী কিছুটা কম। এ হাসপাতালে নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য রোগের রোগী বেশি আসে। ডায়রিয়া-কলেরার রোগী আইসিডিডিআর,বিতে চলে যায়। ডায়রিয়া ভালো হলে শিশুদের অন্যান্য রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। তখন আমাদের এখানে চিকিৎসা নিতে আসে অনেকেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে