রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ওয়ার্ল্ড ফেডারেশনের তথ্য

বাংলাদেশে প্রতি লাখে ১০ জন হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত

যাযাদি ডেস্ক
  ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
বাংলাদেশে প্রতি লাখে ১০ জন হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত

মানুষের রক্তের জিনগত একটি বিশেষ রোগের নাম হিমোফিলিয়া। রোগটি মানুষের শরীরে মারাত্মক পর্যায়ে গেলে শরীরে কোনো আঘাত ছাড়াই রক্তক্ষরণের পাশাপাশি মাংসপেশি ও হাড়ের সংযোগস্থল ফুলে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত রোগীর রক্ত জমাট বাঁধতে সময় লাগে। আর অনেক সময় ধরে রক্তক্ষরণ চলায় মৃতু্যঝুঁকি বেড়ে যায় বহুলাংশে। এ ছাড়া এই রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় বেশির ভাগ মানুষ চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারেন না। ফলে কম বয়সেই বেশির ভাগ রোগীর মৃতু্য হয়। আর যারা বেঁচে থাকেন, তাদের অনেকে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেন।

এদিকে, ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব হিমোফিলিয়ার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি লাখে ১০ জন মানুষ হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত। সে হিসাবে দেশে প্রকৃত রোগীর সংখ্যা হওয়ার কথা প্রায় ১৭ হাজার। অথচ শনাক্ত রোগী মাত্র তিন হাজারের কিছু বেশি। অর্থাৎ প্রায় ৮২ শতাংশই এখনো শনাক্তের বাইরে।

বিশেষজ্ঞ মতে, মানুষের শরীরে কোথাও কেটে গেলে কিংবা কোনো কারণে রক্তপাত হলে তা স্বাভাবিকভাবেই জমাট বাঁধে। কিন্তু হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত রোগীর রক্ত জমাট বাঁধতে অনেক সময় লাগে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, রক্ত জমাট বাঁধার জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ প্রোটিন ফ্যাক্টর। হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে এ প্রোটিনের ঘাটতি থাকে। সাধারণত পুরুষরা হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত হয়। আর নারীরা হিমোফিলিয়ার জন্য দায়ী জিন বহন করে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় হিমোফিলিয়া একটি সেক্স লিঙ্কড রিসেসিভ ডিজঅর্ডার

যা মানুষের শরীরের এক্স ক্রোমোজোমের মাধ্যমে বংশ পরম্পরায় চলতে থাকে। তাই মা যদি তার এক্স ক্রোমোজোমে এই জিন বহন করেন, তবে তার ছেলে সন্তানরা হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। আর মেয়ে সন্তানরা এর বাহক হতে পারে।

চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা জানান, শনাক্ত রোগীদের অনেকে গুরুতর পরিস্থিতিতেও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। কারণ রাজধানীকেন্দ্রিক সীমিত চিকিৎসাব্যবস্থা এবং এই রোগের ওষুধও সহজলভ্য নয়।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাউদ্দিন শাহ বলেন, 'বিস্নডিং ডিস-অর্ডার রোগীর চিকিৎসা যদি দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে শুরু করা না যায় তাহলে মাংসপেশি, অস্থিসন্ধিতে রক্তক্ষরণ হয়ে সে জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে ফুলে যায় এবং প্রচন্ড ব্যথা হতে থাকে। এ জন্য চিকিৎসা করতে হলে রোগীর নিজ এলাকায় চিকিৎসাব্যবস্থা থাকা দরকার। সেটি আমাদের নেই।'

অধ্যাপক ডা. মো. সালাউদ্দিন শাহ বলেন, 'আমাদের দেশে ফ্যাক্টরগুলো আসে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব হিমোফিলিয়ার মাধ্যমে। এ ছাড়া দেশে কিছু সেন্টার রয়েছে, যেখানে হেমাটোলজি বিভাগ রয়েছে। যেমন, বিএসএমএমইউ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, শিশু হাসপাতাল ও ল্যাব ওয়ান ফাউন্ডেশন। এখানে অলাভজনকভাবে রোগীদের ফ্যাক্টর ও পস্নাজমা দেওয়া হয়। এ ছাড়া রাজশাহী, রংপুর ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পাওয়া যায়।'

'হিমোফিলিয়া রোগী কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। সাধারণত তারা মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত থাকে। এদের বিয়ের আগে এবং বিয়ের পরে কাউন্সেলিং প্রয়োজন হয়। সেই কাউন্সেলিং ব্যবস্থাও আমাদের নেই। এর প্রতিরোধের উপায় হলো ডায়াগনসিস, চিকিৎসা, আরেকটা হলো রিহ্যাবিলিটেশন, মানসিক সাপোর্ট ও থেরাপির ব্যবস্থা'-বলেও উলেস্নখ করেন এই বিশেষজ্ঞ।

তিনি জানান, আমাদের প্রান্তিক পর্যায়ে শুধু বস্নাড ট্রান্সফার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ডায়াগনোসিস, শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শনাক্তকরণ ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে রোগীর মৃতু্যর ঝুঁকি আরও কমবে।

প্রসঙ্গত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে প্রতি ১০ হাজার মানুষের মধ্যে একজন হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত হন। সেই হিসাবে দেশে প্রায় ১৮ হাজার রোগী থাকার কথা। কিন্তু দেশে মাত্র তিন হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছেন। বাকিদের শনাক্তকরণে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে