মঙ্গল শোভাযাত্রা, মেলা, ইলিশ-পান্তাভাত খাওয়া, হালখাতা খোলা, গ্রামীণ মেলা ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে সারাদেশে উদযাপিত হয়েছে সার্বজনীন লোকউৎসব পহেলা বৈশাখ। অতীতের ভুলত্রম্নটি ও ব্যর্থতার গস্নানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি কামনায় আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেওয়া হয়েছে বাংলা নতুন বছরকে।
রোববার পহেলা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মাতে সারাদেশ। ভোর থেকেই মানুষের ঢল নামে রাজপথে। নারীরা লাল-সাদা শাড়ি, কাচের চুড়িতে বাঙালিয়ানার সাজে সাজেন। পুরুষের গায়ে দেখা যায় বাহারি রঙের নকশার পাঞ্জাবি। রাজধানী এবং সারাদেশ জুড়ে ছিল বর্ষবরণের নানা আয়োজন। 'বাংলা নববর্ষ ১৪৩১' জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে সরকার। দিনটি ছিল সরকারি ছুটির দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ 'মঙ্গল শোভাযাত্রা'
ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে। রমনার বটমূলে দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে আহীর ভৈরব রাগে বাঁশির সুরে এবার ছায়ানটের নতুন বছর আবাহনের শুরু হয়। এবারের অনুষ্ঠানের মূলভাবনা ছিল মানুষ ও মানবতার জয়গান। সুরের ধারার হাজার কণ্ঠে বর্ষবরণের গান হয়।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন।
মঙ্গল শোভাযাত্রা এবারের প্রতিপাদ্য ছিল কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতা 'আমরা তো তিমির বিনাশী'। সকাল নয়টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে রমনা টেনিস কমপেস্নক্সের সামনে দিয়ে শিশুপাকের্র মোড় ঘুরে আবার শাহবাগ দিয়ে টিএসসি চত্বর ঘুরে চারুকলা অনুষদের সামনে এসে শেষ হয়। এতে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ২০১৬ সালে বাংলাদেশের পয়লা বেশাখের এই মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাংলার লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন উপকরণ, গ্রামীণ জীবনের অনুষঙ্গ, পশু, পাখি, ফুল এসবের প্রতীক ও রকমারি মুখোশ দেখা যায়। এবার বড় আকারের চাকা, ফুল, হাতি, বনরুই এর প্রতীক শোভাযাত্রাকে বর্ণাঢ্য করে। রাজা-রানী ও হাতে দেখা যায় পঁ্যাচার শতাধিক মুখোশ।
'নব আনন্দে জাগো' স্স্নোগান নিয়ে প্রয়াত গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর প্রতিষ্ঠিত সংগীত সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী সকাল সাড়ে সাতটায় রমনা উদ্যানের পশ্চিম পাশে ভাসানী সড়কে শিশু একাডেমির সামনে আয়োজন করেছে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। 'মুছে যাক গস্নানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।' প্রতিপাদ্য নিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে নববষের্রর অনুষ্ঠান হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী তাদের বর্ষবরণের আয়োজন করে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে।