আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত
প্রকাশ | ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
বিশেষ প্রতিনিধি
যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্যদিয়ে বৃহস্পতিবার সারাদেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। সকালে ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ঈদের আনুষ্ঠানিকতা। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহ'র অব্যাহত শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। নামাজ শেষে কুশল ও শুভেচ্ছা বিনিময় করে আনন্দ ভাগাভাগি করেন সবাই। সারাদেশে মুসলিম ধর্মের পাশাপাশি অন্য ধর্মাবলম্বীরাও ঈদ উদযাপনে শামিল হন।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, জাতীয় ঈদগাহসহ সারাদেশের ঈদগাহ ও মসজিদগুলোয় পেশ ইমাম ও খতিবরা ঈদ জামাত পূর্ব বয়ানে মাহে রমজান এবং পরবর্তী ১১ মাসের আমল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরেন। প্রখর রোদ ঈদ আনন্দে বাধা হতে পারেনি।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি, আধা-সরকারি ভবন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বেসরকারি ভবন ও সশস্ত্র বাহিনীর সব স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত ব্যানার মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোস্টে প্রদর্শন করা হয়। সরকারি ভবনগুলোসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়। ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয় কেন্দ্র, সেইফ হোমস, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, দুস্থ কল্যাণ ও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। ঈদের দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনাটিকিটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন শিশুপার্কে
প্রবেশ এবং বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়।
সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানী ঢাকায় প্রধান ঈদ জামাত হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। এখানে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, সংসদ সদস্য, সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা, বিদেশি কূটনৈতিক এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এ জামাতে অংশ নেন। রাজধানীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম জামাত অনুষ্ঠিত হয় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। এবারও পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় বায়তুল মোকাররম মসজিদে। সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত প্রথম জামাতে ইমাম ছিলেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান। মুকাব্বির ছিলেন মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বার মো. ইসহাক। পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল পৌনে ১১টায়। এতে ইমামতি করেন মিরপুর জামেয়া আরাবিয়া আশরাফিয়া ও এতিমখানার মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ ওয়াহীদুজ্জামান। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. রুহুল আমিন।
ঈদ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলীয় নেতাকর্মী, বিভিন্ন পেশাজীবী, বিচারক, বিদেশি কূটনীতিক এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাসহ সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনের ক্রিডেনশিয়াল হলে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেওয়া শুভেচ্ছা বক্তব্যে সমাজের সচ্ছল ব্যক্তিদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ছোট বোন শেখ রেহানা এবং পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ পস্নাজায় সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদুল ফিতরের জামাতের আয়োজন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, জাতীয় সংসদের হুইপ, সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার মুসলিস্নরা জামাতে অংশ নেন।
উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন-উল-হাসান জানান, উত্তর সিটি করপোরেশনে ২৭০টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।
এদিকে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় দামপাড়া জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে। প্রতি বছরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১০টায়। জামাতে ইমামতি করেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
এ ছাড়া এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রচন্ড রোদ আর তাপপ্রবাহের মধ্যে এ ময়দানে মুসলিস্নদের ঢল নামে। এবারও একসঙ্গে ছয় লাখ মুসলিস্ন একসঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করেন বলে জানান আয়োজকরা। সকাল ৯টায় শুরু হওয়া এ জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা শামসুল আলম কাশেমী।
ঈদ উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিনোদনমূলক বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করে। ঈদ জামাত উপলক্ষে সকাল থেকেই বায়তুল মোকাররমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছিল। মসজিদের দক্ষিণ গেটের দুটি আর্চওয়ে দিয়ে প্রবেশ করেছেন মুসলিস্নরা। গেটে পুলিশ এবংর্ যাব সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে ছিল।