ঈদ ও নববর্ষের টানা পাঁচ দিনের ছুটি শেষে সোমবার অফিস-আদালত খুললেও প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে স্বাভাবিক কর্মব্যস্ততা ফেরেনি। সেই সঙ্গে রাজধানীতে বিরাজ করছে ঈদের আমেজ। রাস্তায় নেই যানজট, মানুষের ভিড় ও ভোগান্তি।
এদিন সকাল থেকে ঢাকার মিরপুর, কল্যাণপুর, শ্যামলী, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার ও শাহবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি ও গণপরিবহণের সংখ্যা কম। এসব এলাকার অনেক বিপণিবিতান এখনো বন্ধ। সড়কের পাশের কিছু দোকানপাট খুলেছে। তবে সেগুলো প্রায় ক্রেতাশূন্য। ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও ছুটির আমেজ দেখা গেছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী নুর উদ্দিন বলেন, সাধারণ সময় যানজটের কারণে সকালে কল্যাণপুর থেকে শাহবাগ পৌঁছতে কমপক্ষে এক থেকে সোয়া ঘণ্টা লেগে যায়। সোমবার তিনি ২২-২৩ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেছেন। এখনো ঢাকায় যানজট শুরু হয়নি। রাজধানীজুড়ে ঈদের মতোই একটা আমেজ আছে।
এবার ঈদের ছুটি ছিল তুলনামূলক দীর্ঘ। ঈদের আগে ৭ এপ্রিল ছিল পবিত্র শবে কদরের ছুটি। এর আগের দুই দিন শুক্রবার ও শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। গত ১১ এপ্রিল দেশে উদ্?যাপিত হয় ঈদুল ফিতর। ঈদ উপলক্ষে ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল সরকারি ছুটি ছিল।
ঈদে প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে নগরবাসীর একটি বড় অংশ গ্রামে যায়। তাই ঈদের সময় ঢাকা প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়।
\হছুটির এই সময় ঢাকায় ছিল না যানজট। ছিল না মানুষের চাপ।
মুঠোফোন অপারেটরদের তথ্য অনুযায়ী, ঈদের আগে চার দিনে (৬-৯ এপ্রিল) রাজধানী ছাড়েন ৫৭ লাখের মতো মুঠোফোন সিমধারী। এই হিসাবে এবার ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার কথা।
পরিবহণ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামানের ২০২৩ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, গত বছরের ঈদুল ফিতরের আগের চার দিনে ঢাকা ছাড়েন এক কোটি ২০ লাখ মানুষ। সেই হিসাবে ঈদের সময় প্রতিদিন গড়ে বাড়ি যান ৩০ লাখ মানুষ।
কয়েকজন কর্মজীবী বলেন, ঈদের আমেজ কাটিয়ে ঢাকার পুরোপুরি স্বরূপে ফিরতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে। ঢাকার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে ২১ এপ্রিল। এ ছাড়া অধিকাংশ পোশাক কারখানাও খুলবে ২০ এপ্রিলের দিকে। তখন ঢাকা স্বাভাবিকরূপে ফিরবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, ঈদের টানা পাঁচ দিনের ছুটি কাটিয়ে অফিস-আদালত খুললেও প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে স্বাভাবিক কর্মব্যস্ততা ফেরেনি।
লম্বা ছুটি শেষে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থলে ফিরে সোমবার কর্মদিবস শুরু করেছেন সহকর্মীদের সঙ্গে ঈদ ও নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করে।
জনপ্রশাসন, বাণিজ্য, খাদ্য, বিদু্যৎ ও জ্বালানি এবং নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ঘুরে দেখা যায়, সচিব, অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার অধিকাংশ কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা উপস্থিত হলেও মধ্যমসারির কিছু কর্মকর্তা এখনো ছুটি কাটাচ্ছেন।
এদিন সচিবালয়ে দর্শনার্থীদের উপস্থিতিও তেমন ছিল না। সুনসান সচিবালয়ে ব্যক্তিগত গাড়ির চিরচেনা জটলাও চোখে পড়েনি।
এদিকে, সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সহকর্মী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। এ সময় তিনি বলেন, বাজার পরিস্থিতি ঢাকা আর ঢাকার বাইরে ভিন্ন। ঢাকার বাইরের কম দামের পণ্য ঢাকায় বেশি দামে বিক্রি হয়। ভোক্তা যাদের কাছ থেকে পণ্য কেনেন, তাদের কাছে এসে দাম বাড়ে। সুলভমূল্যের বাজার প্রতিষ্ঠার কারণে ১৫ রোজার পরই জিনিসপত্রের দাম কমে গিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, 'রাজধানীর সার্বিক পরিস্থিতি এ সপ্তাহ ঢিলেঢালা যাবে। সামনের সপ্তাহে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে বলে আশা করি।'
অন্যদিকে, সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। এর আগে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ছিল। দেশবাসী স্বস্তি ও উৎসাহ নিয়ে ঈদ ও নববর্ষ পালন করেছে।
তিনি আরও বলেন, 'সীমিত সামর্থ্য নিয়ে দেশে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা ফলাফল বা কৃতিত্ব লাভের জন্য কাজ করি না, দেশ ও জনগণের স্বার্থে কাজ করে চলছি।'
বিদু্যৎ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এরাদুল হক জানান, ঈদের ছুটিতে তিনি ঢাকাতেই ছিলেন। ঈদের পরদিন বাগেরহাটের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন এক দিনের জন্য। সোমবার আবার যথাসময় দপ্তরে হাজির হয়েছেন।
এ ছাড়া এদিন সকালে মন্ত্রণালয়ের সহকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিদু্যৎ সচিব হাবিবুর রহমান
এসময় তিনি বলেন, 'ছুটি শেষে আমরা নিরাপদে কর্মস্থলে ফিরে এসেছি। আজ থেকে আবার নিয়মিত কাজে যুক্ত হবে সবাই।'
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউলস্নাহ বলেন, 'সকালে এসেই আমি দপ্তরের সহকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি। কিছুক্ষণের মধ্যে সচিব মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাব।'
এ ছাড়া পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর সোমবার ব্যাংক ও পুঁজিবাজারও খুলেছে। ব্যাংকে এখন লেনদেন হচ্ছে স্বাভাবিক সময় সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। তবে দাপ্তরিক কাজ চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। আর পুঁজিবাজারে লেনদেন চলবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২-২০ মিনিট পর্যন্ত। দাপ্তরিক সময় হবে সকাল ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।