মুক্তিপণে ২৩ নাবিক মুক্ত
দেশের পথে এমভি আবদুলস্নাহ
দেশে ফিরতে লাগবে ১০ দিন নাবিকদের পরিবারে আনন্দ সোমালিয়ার ৮ জলদসু্য গ্রেপ্তার
প্রকাশ | ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
সনজীব নাথ ও ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম
সোমালিয়ার জলদসু্যদের হাতে ২৩ নাবিকসহ অপহৃত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুলস্নাহ মুক্ত হয়ে অবশেষে দেশের পথে রওয়ানা হয়েছে। মুক্তিপণের বিনিময়ে ৩১ দিনের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার পর রোববার ভোর ৩টায় সোমালিয়া থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর দুটি যুদ্ধজাহাজের পাহারায় জাহাজটি দুবাইয়ের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। এদিকে, মুক্তিপণ নিয়ে উপকূলে ফেরার পর আট জলদসু্যকে সোমালিয়া পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির একটি সংবাদমাধ্যম। কিন্তু মুক্তিপণের বিষয়টি জাহাজের মালিকপক্ষ স্বীকার করেননি। তবে নাবিকরা সুস্থ আছেন এবং দেশে ফিরতে তাদের অন্তত ১০ দিন সময় লাগতে পারে। রোববার দুপুরে জাহাজটির মালিকপক্ষ কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রম্নপ ও পরিচালনা প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিংয়ের সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এস আর শিপিংয়ের কর্মকর্তারা জানান, জাহাজটি বর্তমানে ভারত মহাসাগরের অবস্থান করছে। সাগরের এই অংশটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। সোমালীয় জলদসু্যদের অন্য কোনো গ্রম্নপ আবারও হামলা চালাতে পারে এমন শঙ্কায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি স্পেন ও ইতালির নৌবাহিনীর স্কর্টে ভারত মহাসাগরের এই ঝুঁকিপূর্ণ অংশ অতিক্রম করছে বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজ 'এমভি আবদুলস্নাহ'। তবে এর আগে জলদসু্যদের আক্রমণের সময় বারবার সহযোগিতা চেয়ে স্পেন-ইতালিসহ অন্তত চারটি দেশের নৌবাহিনীর কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পায়নি জাহাজটির ২৩ নাবিক।
জানা যায়, সোমালীয় জলদসু্যদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে উপকূল ত্যাগ করে ভারত মহাসাগর অংশে পৌঁছাতেই এমভি আবদুলস্নাহর আশপাশে অবস্থান নেয় অন্তত চারটি দেশের নৌবাহিনীর কয়েকটি বোট। এরপর এসব দেশের নৌসদস্যরা জাহাজটিতে উঠে আসেন। এ সময় তারা নিজ নিজ দেশের পতাকা নিয়ে বাংলাদেশের নাবিকদের সঙ্গে ছবিও তোলেন। অবশ্য জাহাজের নাবিকরা আগে থেকে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে উলস্নাস করছিলেন।
মেরিন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মুক্তিপণ দিয়ে ফেরার পথে ভারত মহাসাগরের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ অতিক্রমের সময় সোমালীয় জলদসু্যদের অন্য কোনো গ্রম্নপের হামলার শঙ্কায় নৌসদস্যরা নিরাপত্তামূলক এই ব্যবস্থা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে কেএসআরএম গ্রম্নপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) শাহরিয়ার জাহান রাহাত জানান, 'ছয়টি যুদ্ধ জাহাজ ঘিরে রেখেছে এমভি আবদুলস্নাহকে। তারাও একটি মানসিক চাপের মধ্যে ছিল। আমাদের মতো চারটি দেশের নৌবাহিনীর তাগিদ ছিল, যাতে তাড়াতাড়ি ওই ইসু্যটা সমাধান করা যায়। এ কারণে আলস্নাহর রহমতে আমরা এ ইসু্যটা দ্রম্নত সমাধান করতে পেরেছি।'
কেএসআরএমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম বলেন, 'আমেরিকার একটা কন্ডিশন আছে; একটি ডলার নিতে হলেও তাদের সংস্থার অনুমতি নিতে হয়। ওটা আমাদেরও নিতে হয়েছে।'
এ ধরনের ইন্টারন্যাশনাল কাজে তাদের অনেক অ্যাসোসিয়েটের সমন্বয় করতে হয় বলে জানান তিনি।
যেভাবে মুক্তি
শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ৬৫ জন জলদসু্য এমভি আবদুলস্নাহ থেকে একে একে নেমে যায়। ৯টি বোটে করে তারা চলে যায় রাতের আঁধারে। যাওয়ার আগে নাবিকদের উদ্দেশে বলে যায়, 'তোমরা এখন মুক্ত'।
এর পরপরই এমভি আবদুলস্নাহর ক্যাপ্টেন দেশে জাহাজের মালিকপক্ষের কাছে তাদের মুক্তির বার্তা পাঠান। গত রোববার দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদে কবির গ্রম্নপের কার্যালয়ে এস আর শিপিং আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাহাজের নাবিকদের বরাতে তাদের মুক্তির সময়ের বর্ণনা দেন প্রতিষ্ঠানের সিইও মেহেরুল করিম।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিক সকল সংস্থার সাথে সমন্বয় করে সকল কাজ লিগ্যালি আমরা শেষ করেছি। ভোর ৩টার দিকে মেসেজ আসে, ক্যাপ্টেন জানায় তারা মুক্ত। ৬৫ জন জলদসু্য জাহাজে ছিল। তারা নয়টি বোটে করে চলে যায়। যাওয়ার সময় তারা বলে যায়, তোমরা এখন মুক্ত।'
এমভি আবদুলস্নাহর নাবিকদের মুক্তির আগের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। দিনের বেলার ওই ভিডিওতে দেখা যায়, আবদুলস্নাহর নাবিকরা সবাই জাহাজের ডেকে লাইন ধরে দাঁড়ানো। ছোট আকারের একটি উড়োজাহাজ এমভি আবদুলস্নাহর সামনে চক্কর দিচ্ছে। ওই সময় জলদসু্যরা দুটি স্পিড বোট নিয়ে জাহাজের সামনে অবস্থান নেয়। জাহাজে থাকা একজন বাংলায় নাবিকদের হাত তুলতে বলেন। এরপর সোমালি ভাষায় জলদসু্যরা কিছু বলতে শোনা যায়।
উড়োজাহাজটি একবার চক্কর দিয়ে একটি করে ব্যাগ পানিতে ফেলছিল। তারপর স্পিড বোটে থাকা জলদসু্যরা সেই ব্যাগটি তুলে নিচ্ছিল। এভাবে তিনবার তিনটি ব্যাগ ফেলা হয়। প্রতিবারই জলদসু্যরা উলস্নাস করছিল।
তৃতীয় ব্যাগ ফেলার পর উড়োজাহাজটি ঘুরে গন্তব্যের দিকে চলে যায়। এরপর এমভি আবদুলস্নাহতে থাকা কেউ একজন ইংরেজিতে নাবিকদের বলেন, 'তোমরা এবার মুক্ত। এখন চলে যেতে পারবে।'
বাংলাদেশে তখন রোববার রাত ৩টা; ওই সময়ই মুক্তি পায় জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুলস্নাহ এবং এর ২৩ নাবিক।
বাংলাদেশ সরকার কিংবা জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রম্নপের কেউ মুক্তিপণ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেননি। নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, মুক্তিপণ দেওয়ার কোনো তথ্য 'সরকারের কাছে নেই'।
তবে নাবিকদের মুক্তির কয়েক ঘণ্টা পর দু'জন জলদসু্যর বরাতে ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণের কথা লিখেছে রয়টার্স। সোমালিয়ার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোও একই পরিমাণ মুক্তিপণের খবর দিয়েছে। তবে মুক্তিপণের বিষয়ে জানতে চাইলে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি মেহেরুল করিম।
তিনি বলেন, 'আমরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সোমালিয়া এমনকি কেনিয়ার মেরিটাইম আইন মেনে কাজ করেছি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে কাজ করেছি। সমঝোতার শর্ত অনুসারে অনেক বিষয় প্রকাশ করতে পারব না আমরা।'
নাবিকদের পরিবারে মুক্তির আনন্দ
নাবিকদের মুক্তির খবর দেশে পৌঁছাতেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন তাদের পরিবারের সদস্যরা।
এমভি আবদুলস্নাহর ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীরের মা জ্যোৎস্না বেগম বলেন, 'ঈদের দিন কথা বলার পর আমার ছেলের সাথে আর কথা হয়নি। আজ ভোর রাত পৌনে ৪টার দিকে সে ফোন করে মুক্তি পাওয়ার কথা জানিয়েছে।'
তার ভাষ্যে, 'ভোর রাতে মুক্তির খবর পেয়ে কী যে আনন্দ লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। মনে হচ্ছে আজকেই আমাদের ঈদ। ঈদের দিনতো আমাদের ঘরে কোনো আনন্দই ছিল না।'
নাবিক আইনুল হকের মা লুৎফে আরা বেগম বলেন, 'আমার ছেলেরা মুক্ত হয়েছে, কেমন ভালো লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। ঈদ গেলেও আমাদের ঘরে কোনো আনন্দ ছিল না। ঈদের দিন আইনুলের সাথে কথা হয়েছিল। তারপর দুই দিন আর কথা হয়নি। খুব শঙ্কায় ছিলাম, ছেলের মুক্তি নিয়ে। আমরা জাহাজ মালিকপক্ষ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা সবসময় বিষয়টি নজরে রেখেছে বলে আমার ছেলেরা মুক্তি পেয়েছে।'
সংবাদ সম্মেলনে এস আর শিপিংয়ের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, 'বিষয়টি সেনসেটিভ হওয়ায় কৌশলগত কারণে এতদিন সামনে আসেনি। ৩১ দিন পর জাহাজ মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। নববর্ষ এসেছে, নাবিকদের মুক্ত করা গেছে এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের।'
জাহাজ ও জিম্মি নাবিকদের মুক্ত করতে সহযোগিতা করায় প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কবির গ্রম্নপের তরফে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রাহাত।
এমভি আবদুলস্নাহ জাহাজে কেন আর্মড গার্ড ছিল না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'জাহাজটি যে পথ দিয়ে যাচ্ছিল, তা হাই রিস্ক এরিয়ার ডবল রেঞ্জের বাইরে ছিল। ২০০ নটিক্যাল মাইল হচ্ছে হাই রিস্ক এরিয়া। জাহাজ ৬০০ নটিক্যাল মাইল দিয়ে চলছিল।'
দেশে ফিরতে ১০ দিন লাগবে
এমভি আবদুলস্নাহ তার গন্তব্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ১৯ এপ্রিল পৌঁছাবে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, 'সেখানে সব ফরমালিটিস শেষ করে ৪-৫ দিন পর বিমানে অথবা জাহাজে করে নাবিকরা দেশের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। বিমানে নাকি জাহাজে তারা দেশে ফিরবেন তা এখনো ঠিক হয়নি। তবে কয়লা খালাস শেষে জাহাজটি চট্টগ্রামে ফিরবে।'
১৪ বছর আগে ১০০ দিন জলদসু্যদের কবলে থাকার পর মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত হওয়া একই মালিকের জাহাজ জাহান মণির নাবিকরা মুক্ত হওয়ার পর জাহাজটি পরিচালনায় বিকল্প নাবিকদের একটি দল দায়িত্ব নিয়েছিল।
এবার বিকল্প নাবিকরা প্রস্তুত কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে মেহেরুল করিম বলেন, 'বিকল্প একজন ক্রুও রেডি করা হয়নি। কারণ এমভি আবদুলস্নাহর নাবিকরা কীভাবে ফিরবেন, এখনো সে সিদ্ধান্ত হয়নি। তাদের সিদ্ধান্ত অনুসারে বাকি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এমভি জাহান মণি গ্রিসের পথে পণ্য নিয়ে যাচ্ছিল। মুক্তির পর নাবিকরা জাহাজ নিয়ে কাতারে যায়। কিন্তু পণ্য ইউরোপে খালাসের কথা ছিল। তাই বিকল্প নাবিকদের যেতে হয়। এমভি আবদুলস্নাহর পণ্য দুবাইতেই খালাস হবে। সেখান থেকে জাহাজেরও দেশে ফেরার কথা। এখন নাবিকরা ঠিক করবেন তারা কীভাবে দেশে ফিরবেন।'
দেশের প্রতি ভালোবাসার বার্তা
মুক্তি পেয়ে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা হাতে এমভি আবদুলস্নাহর নাবিকরা প্রিয় স্বদেশ ভূমিকে ভালোবাসার বার্তা দেন। জিম্মিদশা থেকে মুক্তির পর রোববার দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে জাহাজের চিফ অফিসার আতিকুলস্নাহ খান ফেসবুকে প্রথম পোস্ট দেন। তাতে দেখা যায়, জাতীয় পতাকা হাতে নাবিকরা সবাই উচ্ছ্বসিত।
মুক্ত এমভি আবদুলস্নাহর পাশেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইইউএনএভিএফওআর অপারেশন আটলান্টার একটি যুদ্ধ জাহাজকেও দেখা যাচ্ছিল ছবিতে। শেষ ছবিতে দেখা যায়, ইইউ নেভির কমান্ডোরা এমভি আবদুলস্নাহতে বাংলাদেশি নাবিকদের পাশে অবস্থান নিয়ে আছেন।
ফেসবুক পোস্টে আতিকুলস্নাহ খান লেখেন, 'আলহামদুলিলস্নাহ, অবিশ্বাস্য প্রচেষ্টার জন্য এস আর শিপিংকে ধন্যবাদ। বন্ধু, পরিবার ও সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের কৃতজ্ঞতা- যারা পুরো যাত্রায় আমাদের জন্য প্রার্থনা করেছেন। ধন্যবাদ ইইউএনএভিএফওআর অপারেশন আটলান্টা। ধন্যবাদ বাংলাদেশ। লাভ ইউ অ্যান্ড মিসিং ইউ বাংলাদেশ।'
আট জলদসু্য গ্রেপ্তার
রোববার বিকালে জানা যায়, সোমালিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পান্টল্যান্ডের পূর্ব উপকূলে ৮ জন জলদসু্যকে গ্রেপ্তার করেছে সেখানকার পুলিশ। পান্টল্যান্ড পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাতে সোমালিয়ার ইংরেজি সংবাদমাধ্যম গেরো জানায়, বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুলস্নাহকে যারা জিম্মি করেছিল, সেই জলদসু্যদের ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এমভি আবদুলস্নাহ মুক্ত হওয়ার কিছু সময় পর এই জলদসু্যদের গ্রেপ্তারের খবর এলেও তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসেবে দেওয়া অর্থ উদ্ধারের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পান্টল্যান্ড পুলিশের এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যম গেরোকে বলেন, 'মুক্তিপণ দেওয়ার প্রবণতা জলদসু্যদের আরও বেশি জাহাজে হামলা করতে উৎসাহিত করতে পারে।'
পান্টল্যান্ড মেরিটাইম পুলিশ ফোর্স রোববার বিকালে তাদের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে এক বার্তায় জানায়, তারা ভারত মহাসাগরের পান্টল্যান্ড ?উপকূলে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। এরকম এক অভিযানে তারা জলদসু্যদের আটক ও বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করেছে।
ওই পোস্টের সঙ্গে দেওয়া চারটি ছবির একটিতে আট জলদসু্যকে দেখা যাচ্ছে, যাদের পাহারা দিচ্ছিলেন তিন পুলিশ সদস্য।
৩১ দিনের জিম্মিদশার অবসান
চলতি বছরের ১২ মার্চ এমভি আবদুলস্নাহ জলদসু্যদের কবলে পড়ার খবর পেয়ে সেটিকে অনুসরণ করে ভারতীয় নৌবাহিনী এবং পূর্ব আফ্রিকা উপকূলের নৌপথের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইইউএনএভিএফওআর আটলান্টা অপারেশনের যুদ্ধ জাহাজ।
এ সময় দুই বাহিনীই এমভি আবদুলস্নাহর কাছাকাছি পৌঁছালেও অস্ত্রের মুখে জাহাজের নাবিকরা জিম্মি থাকায় তারা কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি। এরপর জলদসু্যরা জাহাজটিকে সোমালিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পান্টল্যান্ড রাজ্যের জিফল উপকূলে নিয়ে যায়। তীর থেকে মাত্র দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে জাহাজটি নোঙর করা হয়।
শুরুতেই এমভি আবদুলস্নাহর নাবিকরা পরিবারের কাছে পাঠানো অডিও বার্তায় জানায়, মুক্তিপণ না দিলে জলদসু্যরা নাবিকদের এক এক করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে।
এর মধ্যে ১৬ মার্চ ভারতীয় নৌবাহিনী অভিযান চালিয়ে এমভি রুয়েন নামের মাল্টার পতাকাবাহী একটি জাহাজকে জিম্মি হওয়ার তিন মাস পর জলদসু্যদের কবল থেকে ?মুক্ত করে। গ্রেপ্তার করে ৩৫ জলদসু্যকে।
সমুদ্রপথের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আন্তর্জাতিক বাহিনীগুলো এমভি আবদুলস্নাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযানে আগ্রহী হলেও নাবিকদের পরিবার ও জাহাজের মালিকপক্ষ জানায়, তারা এমন কোনো অভিযান চায় না। সমঝোতার ভিত্তিতে জাহাজটি ছাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানায় মালিকপক্ষ। এরপর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও অভিযানের বিষয়ে অসম্মতির কথা জানিয়ে দেওয়া হয়।
এমভি আবদুলস্নাহ ও নাবিকদের জিম্মি করার নয় দিনের মাথায় ২০ মার্চ প্রথমবার জলদসু্যদের প্রতিনিধিরা জাহাজ মালিকের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করে। এরপর থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে দেনদরবার চলছিল।
২২ মার্চ পান্টল্যান্ড পুলিশের বরাতে বিবিসি সোমালি জানায়, জলদসু্যরা যাতে ভূমি থেকে কোনো সহায়তা না পায়, সেজন্য সেখানকার পুলিশ একটি অভিযান শুরু করেছে। অন্যদিকে সমুদ্র অংশে আন্তর্জাতিক বাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ এমভি আবদুলস্নাহকে ঘিরে রেখেছে।
তারপর থেকে জাহাজে সুপেয় পানির সংকট এবং জলদসু্যদের অস্ত্রের মুখে রাত-দিন নাবিকদের জিম্মি করে রাখার খবর আসতে থাকে।
এরপর গত তিন সপ্তাহে বারবার জাহাজের মালিকপক্ষ জানায়, আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। নাবিকদের নিরাপদে মুক্ত করার বিষয়ে তারা আশাবাদী।
অবশেষে শনিবার রাত ৩টায় আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। মুক্তি পায় ২৩ নাবিক। মুক্ত হয় জাহাজ এমভি আবদুলস্নাহ।
মুক্তিপণের বিষয়ে জানেন না নৌপ্রতিমন্ত্রী
এদিকে, মুক্তিপণের বিষয়ে নৌ পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। সোমবার সচিবালয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি একথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'জলদসু্যদের ওপর প্রচন্ড চাপ ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্ধারকারী জাহাজ ছিল তাদের থেকে দুই নটিকেল মাইল দূরে। একটা বহুমাত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে এমভি আবদুলস্নাহর ২৩ নাবিককে উদ্ধার করা হয়েছে। বহুমাত্রিক চাপের কারণে জলদসু্যরা নাবিকদের ছাড়তে বাধ্য হয়। আর কিছুদিন গেলে কী পরিণতি হতো, সেটা বুঝতে পেরেই জলদসু্যরা নাবিকদের ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।'
আমর্স গার্ড থাকলে এমভি আবদুলস্নাহ ঝামেলায় পড়ত না উলেস্নখ করে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'ওই জাহাজে আমর্স গার্ড না থাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে। জাহাজে আমর্স গার্ড আছে কিনা এ বিষয়ে জানতে জলদসু্যদের সোর্স থাকতে পারে। সেই তথ্য নিয়েই জাহাজ আটক করে তারা। ২০২১ সাল পর্যন্ত ওই জাহাজে আমর্স গার্ড ছিল।'