ইরানে পাল্টা হামলা চালানোর বিষয়ে পশ্চিমা মিত্রদের প্রচন্ড চাপ থাকার পরও হামলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে ইসরাইল। তবে দিন-তারিখ এখনো ঠিক হয়নি বলে জানিয়েছেন এক ইসরাইলি কর্মকর্তা। রোববার রাতে ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা পশ্চিমা নেতাদের সতর্কতা সত্ত্বেও 'আক্রমণাত্মক এবং প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ' উভয়ই অনুমোদন করেছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। তবে কখন কীভাবে এটি কার্যকর হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। উলেস্নখ্য, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনসু্যলেটে ইসরাইলি হামলার জবাবে গত শনিবার রাতে ইসরাইল লক্ষ্য করে নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইরান। ইসরাইলে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ এই প্রথম ইসরাইলে হামলা চালাল, যা ছিল নজিরবিহীন। গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনসু্যলেটে ইসরাইলি হামলায় ইরানের সামরিক বাহিনীর দুই ব্রিগেডিয়ারসহ ১৩ কর্মকর্তা নিহত হন। ওই হামলার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে এর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছিল ইরান। তথ্যসূত্র : গার্ডিয়ান, আল-জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স
উলেস্নখ্য, গত শনিবার রাতে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। দামেস্কে ইরানি কনসু্যলেটে হামলার জবাবে ইসরাইলের ওপর সরাসরি এই হামলা করে তেহরান। এসব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের অধিকাংশই ইরান থেকে ছোড়া হলেও ইরাক, সিরিয়া ও লেবানন থেকেও কিছু ছোড়া হয়। ইরানের নজিরবিহীন এই হামলায় ইসরাইলজুড়ে ব্যাপক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। জেরুজালেম ও তেল আবিবসহ পুরো ইসরাইলজুড়ে বাজানো হয় বিমান হামলার সাইরেন। এমন অবস্থায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনী উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের বোমা হামলার শেল্টারের কাছাকাছি থাকার নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে ইসলাইলের
সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এদিকে, ইরান থেকে উৎক্ষেপণ করা ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনগুলোকে গুলি করে ধ্বংস করার কাজে ইসরাইলি, আমেরিকা, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে জর্ডানের বাহিনীও কাজ করে। তেহরান বলেছে, তারা সিরিয়ায় ইরানের কনসু্যলেটে ইসরাইলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় এই হামলা চালিয়েছে। দেশটি আরও বলেছে, বিষয়টি এখন 'সমাপ্ত বলে মনে করা যেতে পারে'।
ইরান এই অভিযানের নাম দিয়েছিল 'অপারেশন ট্রু প্রমিজ'। ইরানের এই হামলার পর লেবানন, জর্ডান ও ইরাক তাদের আকাশপথ বন্ধ করে দেয়। আর ইরান ও ইসরাইল সামরিক বিমান বাদে বাকি সব বিমানের জন্য তাদের আকাশপথ বন্ধ করে দেয়।
ওই হামলার পর থেকেই ইসরাইল পাল্টা হামলা চালাতে পারে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু ইসরাইলের পশ্চিমা মিত্ররা পাল্টা হামলার ঘোরবিরোধী। তারপরও ইরানের হামলার জবাবে দেশটিতে হামলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে ইসরাইল। রোববার ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বিষয়টি জানিয়েছে। জানা গেছে, ইরানে হামলার বিষয়ে ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সবাই একমত হতে পারেননি। ইসরাইল বলেছে, সঠিক সময়ে ইরানকে জবাব দেওয়া হবে। ইসরাইল সফলভাবে নিজেদের প্রতিরক্ষা করতে পেরেছে এবং এটাই ইরানের বিরুদ্ধে তাদের জয় বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির এক শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, তার দেশের এখন উচিত হবে 'খুব সাবধানে' পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। তিনি বলেন, 'কখন প্রতিশোধ নেওয়া হবে, সেটাই একমাত্র বড় প্রশ্ন নয়। বরং ইসরাইল কোন্ পদক্ষেপ বেছে নেবে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।'
ইসরাইলকে সংযত থাকার আহ্বান
পশ্চিমা মিত্রদেশগুলোর
ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরাইল কী করে, সেদিকে এখন সবার নজর। তবে ইসরাইলের পশ্চিমা মিত্রদেশগুলো উত্তেজনা না বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। আমেরিকাসহ ইউরোপীয় দেশগুলো সোমবার ইসরাইলকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানির সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান এবং জাতিসংঘ মহাসচিবও ইসরাইলকে সংযত থাকতে বলেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতি যেন খাদের কিনারায় চলে না যায়, সেজন্য ইসরাইলি নেতাদের সতর্ক করেছেন তারা।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইরানের সঙ্গে বিরোধে ইসরাইল প্রতিরক্ষামূলকভাবে জিতেছে। এখন ওই অঞ্চলে আর সংঘাতের তীব্রতা বাড়া উচিত নয়। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ইসরাইলকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশে পরিস্থিতির আরও অবনতি না হওয়ার ব্যাপারে সম্ভাব্য সবকিছু করবে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ইরানকে পাল্টা জবাব দেওয়ার ব্যাপারে ইসরাইলের যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। কিন্তু তাদের সাবধান থাকা এবং হৃদয় দিয়ে চিন্তা না করে মাথা দিয়ে চিন্তা করা দরকার।
ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপে
অংশ নেবে না আমেরিকা
আমেরিকাও সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ইসরাইল যদি ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তবে ওয়াশিংটন তাতে অংশ নেবে না। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা রোববার বলেন, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সতর্ক করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ইসরাইলের দাবি, তারা ও তাদের মিত্ররা এসব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের ৯৯ শতাংশ আকাশপথেই ধ্বংস করে দিয়েছে। ইরানি হামলায় শুধু তাদের দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি বিমান ঘাঁটি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সাত বছর বয়সি এক শিশু গুরুতর আহত হয়েছে। তবে হামলায় ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও বিমান ঘাঁটিটির কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে।
এই হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দুই শক্তিশালী শত্রম্ন রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। সে রকম কিছু হলে এতে আমেরিকার জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। আর তাতে এরই মধ্যে ব্যাপক প্রাণঘাতী একটি যুদ্ধের মধ্যে থাকা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া, চীন ও ফ্রান্সের মতো বিশ্বশক্তি, মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ এবং জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
রোববার সকালে মার্কিন গণমাধ্যম জানায়, ইরানের হামলার পর রাতেই এক ফোনকলে বাইডেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তিনি প্রতিশোধমূলক হামলায় অংশ নেবেন না। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর পাশপাশি রোববার মার্কিন গণমাধ্যম এবিসি-র 'দিস উইক' অনুষ্ঠানে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের (এনএসসি) কৌশলগত যোগাযোগ সমন্বয়ক জন কারবি বলেছেন, আমেরিকা ইসরাইলের আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা বজায় রাখবে, কিন্তু যুদ্ধ চায় না।
হামলার আগে সতর্ক করেছিল ইরান
অস্বীকার আমেরিকার
ইরান বলছে, ইসরাইলে হামলার আগে তারা আমেরিকাসহ আশপাশের দেশগুলোকে সতর্ক করেছিল। তবে আমেরিকা বলছে, ইরানের এই দাবি সত্যি নয়। তারা ইসরাইলের উলেস্নখযোগ্য ক্ষতিই করতে চেয়েছিল।
তুরস্ক, জর্ডান ও ইরাকের কর্মকর্তারা রোববার বলেছেন, ইসরাইলে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কয়েক দিন আগে তাদের বিস্তৃত নোটিশ দিয়েছে ইরান। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, তেহরান ওয়াশিংটনকে সতর্ক করেনি এবং হামলায় ইসরাইলের উলেস্নখযোগ্য ক্ষতি করার লক্ষ্যেই এটি করেনি ইরান।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুলস্নাহিয়ান রোববার বলেন, ইরান প্রতিবেশী দেশ এবং ইসরাইলের মিত্র আমেরিকাকে ৭২ ঘণ্টার নোটিশ দিয়ে জানিয়েছিল- তারা হামলা চালাবে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা হামলার আগে ওয়াশিংটন ও তেহরান উভয়ের সঙ্গেই কথা বলেছিল এবং হামলার পর প্রতিক্রিয়া যেন আনুপাতিক থাকে, তা নিশ্চিত করার জন্য আঙ্কারা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে একে অপরের বার্তা উভয়পক্ষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।
তুরস্কের একটি কূটনৈতিক সূত্র বলেছে, 'ইরান জানিয়েছিল- দামেস্কে তাদের দূতাবাসে ইসরাইলের হামলার প্রতিক্রিয়ায় এই হামলা চালানো হবে এবং তারা এর বাইরে আর কিছুই করবে না। আমরা এই হামলার সম্ভাবনার বিষয়ে অবগত ছিলাম। আর তাই ইসরাইলে ইরানের এই হামলা আমাদের কাছে অবাক করার মতো কিছু ছিল না।'
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির-আবদুলস্নাহিয়ানের বিবৃতি অস্বীকার করে বলেছেন, ওয়াশিংটন সুইস মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু ৭২ ঘণ্টা আগে তারা কোনো নোটিশ পায়নি। ওই কর্মকর্তা বলেন, 'এটি একেবারেই সত্যি নয়। তারা কোনো নোটিশ দেয়নি বা তারা হামলার বিষয়ে কোনো ধারণাও দেয়নি...এমন কোনো ধারণা দেয়নি যে, 'এরা লক্ষ্যবস্তু হবে, তাই তাদের সরিয়ে দিন'।" এই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, হামলা শুরু হওয়ার পরেই তেহরান আমেরিকাকে একটি বার্তা পাঠিয়েছিল এবং তাদের উদ্দেশ্য ছিল 'অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক'।
মার্কিন এই কর্মকর্তা বলেছেন, 'হামলার মধ্যেই আমরা ইরানিদের কাছ থেকে একটি বার্তা পেয়েছি, সুইসদের মাধ্যমে। সেই বার্তায় হামলা সম্পন্ন হয়েছে বলে মূলত ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, তবে হামলা তখনও চলমান ছিল। সে সময় আমাদের কাছে এটিই ছিল (তাদের) বার্তা।'
অন্যদিকে, ইরাকি, তুর্কি ও জর্ডানের কর্মকর্তাদের প্রত্যেকে বলেছেন, ইরান গত সপ্তাহে কিছু বিশদ বিবরণসহ হামলার বিষয়ে প্রাথমিক সতর্কতা দিয়েছে। ড্রোন, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলায় বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটতে পারে এবং সংঘর্ষ বাড়তে পারে।
মার্কিন কর্মকর্তারা শুক্রবার এবং শনিবার বলেন, তারা ইরানের কাছ থেকে অল্প সময়ের মধ্যে আক্রমণের আশঙ্কা করছেন এবং সে সময় তেহরানের কাছে কঠোরভাবে বাইডেনের একমাত্র বার্তা ছিল- 'ইসরাইলে হামলা করবেন না।'
ইরাকের এক সরকারি নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ দুটি ইরাকি সূত্র জানিয়েছে, ইরান হামলার অন্তত তিনদিন আগে কূটনৈতিক চ্যানেল ব্যবহার করে বাগদাদকে এ বিষয়ে জানিয়েছিল। তখন হামলার সঠিক সময় প্রকাশ করা হয়নি, তবে হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে ইরাকি নিরাপত্তা ও সামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছিল, যেন বাগদাদ তার আকাশসীমা বন্ধ করতে পারে এবং মারাত্মক দুর্ঘটনা এড়াতে পারে। ইরাকি নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, 'সরকার ইরানি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছিল, ইরাকে মার্কিন সামরিক বাহিনীও হামলার বিষয়ে আগে থেকেই অবগত ছিল।'
জর্ডানের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরাইলে সম্ভাব্য হামলা চালানোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানাতে ইরান গত বুধবার তেহরানে অবস্থানরত আরব রাষ্ট্রদূতদের তলব করেছিল। যদিও সে সময় ইরান হামলার সময় সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি।
ইসরাইলে হামলার সময় ইরান ঠিক কোন অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করবে এবং কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হবে, সে সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দিয়েছে কিনা, জানতে চাইলে, জর্ডানের ওই সূত্রটি সরাসরি উত্তর দেননি। তবে তিনি ইঙ্গিত দেন, সেখানে বিষয়বস্তু এটিই ছিল।
অন্যদিকে, একটি ইরানি সূত্র বলেছে, কাতার, তুরস্ক এবং সুইজারল্যান্ডের কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে আমেরিকাকে হামলার নির্ধারিত দিন সম্পর্কে অবহিত করেছিল ইরান। সূত্রটি আরও বলেছে, হামলাটি এমনভাবে পরিচালিত হবে, যাতে প্রতিক্রিয়া উসকে দেওয়া না হয়। ইসরাইলে হামলার কয়েকদিন আগেই তেল আবিবকেও সতর্ক করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে ইরান।
জাতিসংঘে হামলার ব্যাখ্যা ইরানের
নিষেধাজ্ঞা চায় ইসরাইল
এদিকে, ইসরাইলের ওপর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণ জাতিসংঘে ব্যাখ্যা করেছে ইরান। তেহরানের বক্তব্য, আত্মরক্ষার জন্যই তাদের এই অভিযান। এক্ষেত্রে তাদের হাতে অন্য কোনো উপায় ছিল না। অপরদিকে, এই হামলার জন্য ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়েছে ইসরাইল।
স্থানীয় সময় রোববার ইসরাইলে ইরানের হামলা ইসু্যতে বৈঠকে বসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। সেখানে ইরান ও ইসরাইলের দূতরা উপস্থিত ছিলেন। ইরানের দূত আমির সাইদ ইরাভানি বলেন, 'আমাদের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।' তিনি জাতিসংঘের সমালোচনা করে বলেন, 'নিরাপত্তা পরিষদ আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তা রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।'
পশ্চিম এশিয়ার সাম্প্রতিক অস্থিরতা নিয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে ইরান জানিয়েছে, তারা যুদ্ধের পরিধি কিংবা তীব্রতা বাড়ুক, এমনটা চায় না। তবে যে কোনো আগ্রাসন কিংবা হুঁশিয়ারির জবাব দিতে চায়।
অপরদিকে, ইসরাইলের দূত জিলাড আরডান ইরানের সমালোচনা করে বলেন, এ হামলার মধ্য দিয়ে মুখোশ খুলে গেছে তাদের। ইরান হলো বিশ্বের এক নম্বর সন্ত্রাসী তৎপরতার মদদদাতা। এই অঞ্চল ও বিশ্বকে অস্থিতিশীল করতে তাদের সত্যিকার চেহারা বেরিয়ে পড়েছে। আরডান নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি ইরানের বিপস্নবী গার্ড বাহিনীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার আহ্বান জানিয়ে অনেক দেরি হওয়ার আগেই সম্ভাব্য সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানান।
তবে চলমান এই সংঘাত যেন আর না বাড়ে, জাতিসংঘ সেই পদক্ষেপ চেয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস উভয় পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সংঘাতের কারণে মধ্যপ্রাচ্য খাদের কিনারে উলেস্নখ করে সেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যকে উদ্ধার করা সবার দায়িত্ব বলে স্মরণ করিয়ে দেন জাতিসংঘ প্রধান। গুতেরেস বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন দিকের বড় বড় সামরিক পক্ষগুলো সংঘাতে জড়িয়ে যেতে পারে, এমন যে কোনো পদক্ষেপ উপেক্ষা করা জরুরি। এরই মধ্যে এখানকার বেসামরিক নাগরিকরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তাদের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। তাই এখনই সময়, সবাইকে যুদ্ধের কিনার থেকে ফিরিয়ে আনার।
গাজায় এখনই যুদ্ধ বিরতি প্রয়োজন বলে মনে করেন গুতেরেস। তিনি বলেন, সেখানে মানবিক অবস্থা বিপর্যস্ত। এজন্য জিম্মিদের নিঃশর্ত মুক্তি ও বাধাহীনভাবে ত্রাণ তৎপরতা চালাতে দেওয়া দরকার। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে জাতিসংঘ প্রধান বলেন, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি-নিরাপত্তার অবস্থা প্রতি ঘণ্টায় অবনতি হচ্ছে। এ অঞ্চলের (মধ্যপ্রাচ্য) বা বিশ্বের কেউ আর যুদ্ধ চায় না। এজন্য যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।