রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

চাঁদ দেখে রমজান বিদায়ের নির্দেশ

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
চাঁদ দেখে রমজান বিদায়ের নির্দেশ

অফুরন্ত রহমত, বরকত, ফজল, কর্মের বর্ষণ, মাগফিরাত ও নাজাতের দান এবং নৈকট্য ও সান্নিধ্য প্রদানের জন্য বিশেষ সুযোগ হিসেবে উম্মতে মুহাম্মদিকে আলস্নাহতায়ালা প্রতি বছর একটি মাস সিয়াম সাধনার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছেন। আজ সেই মাসটির ২৯ তারিখ। হতে পারে এ বছরের রমজান মাসের আজই শেষ দিন। মুমিন হৃদয়ে একদিকে রমজানকে বিদায় জানানোর ব্যথা, অন্যদিকে ঈদের আনন্দের গুঞ্জরণ সমানভাবে উৎসারিত হচ্ছে। আলস্নাহ যাদের হায়াত দিবেন তারাই কেবল আগামী বছর আবার এই জান্নাত লাভের মাসটি পেয়ে ধন্য হবেন।

এদিকে চাঁদ দেখে রোজা রাখা এবং চাঁদ দেখে রোজা ভঙ্গ করার কথা হাদিসে উলেস্নখ আছে। তাই রমজানের চাঁদ দেখে রোজা শুরু করা হয়

আর শাওয়ালের চাঁদ দেখে ঈদ করা হয়ে থাকে। কিন্তু মেঘের কারণে চাঁদ দেখা না গেলে রমজান মাস ত্রিশ দিনে পূর্ণ করার জন্য রাসূল (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন।

বুখারি ও মুসলিম শরিফে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) ও হযরত ইবনে উমর (রা.) বর্ণিত হাদিসে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে : 'তোমরা রোজা রাখবে না যতক্ষণ চাঁদ দেখতে পাবে না এবং রোজা ভাঙবে না যতক্ষণ চাঁদ দেখতে পাবে না। (২৯ তারিখ) আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে সেই মাসের (ত্রিশ) দিন পূর্ণ করে লও।'

তাবেয়ি তাউস বলেছেন, 'আমি মদিনায় হযরত ইবনে ওমর ও হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন তাঁদের নিকট এক ব্যক্তি রমজান মাসের চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দেয়। তাঁরা দুইজনই তা গ্রহণ করলেন এবং বললেন, রাসূলে করিম (সা.) রমজান মাসে চাঁদ দেখার ব্যাপারে একজনের সাক্ষ্য গ্রহণের অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু রোজা খোলার ব্যাপারে দুইজনের সাক্ষ্য ছাড়া রোজা খোলার অনুমতি দিতেন না।' চাঁদ দেখা গেলে দীর্ঘ এক মাসের তাকওয়া অর্জনের প্রশিক্ষণ কোর্স রমজান মাসের রোজা পালনের সামগ্রিক ইবাদতেরও শেষ হবে। উদ্দেশ্য থাকবে বাকি ১১ মাস যেন এর আলোকে নিজেদের পরিচালিত করতে পারি। যে তাকওয়ার গুণাবলি আমরা রোজা থেকে অর্জন করেছি বাকি জীবন যেন সে আলোকে পরিচালিত করতে পারি সে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

ইমাম বুখারি ও মুসলিম স্বীয় গ্রন্থে হযরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন : 'নবী করিম (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন ঈদের ময়দানে চলে যেতেন। সর্বপ্রথম তিনি নামাজ পড়াতেন। নামাজ পড়ানো শেষ করে লোকদের দিকে ফিরে খুতবা দেয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়াতেন। তখন লোকেরা যথারীতি নিজেদের কাতারে বসে থাকত। এ সময় নবী করিম (সা.) লোকদের ওয়াজ নসিহত করতেন, শরিয়তের আদেশ নিষেধ শোনাতেন। তখন যদি কোনো সৈন্য বাহিনীকে কোথাও পাঠাবার ইচ্ছা করতেন তাহলে তা পাঠাতেন এবং কোনো বিশেষ বিষয়ে নির্দেশ জারি করার উদ্দেশ্য থাকলে তাও করতেন। অতঃপর তিনি ঈদগাহ হতে প্রত্যাবর্তন করতেন।' আব্দুলস্নাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, 'রাসূলে করিম (সা.) ঈদের নামাজের ময়দানে পায়ে হেঁটে যেতেন এবং পায়ে হেঁটে ফিরে আসতেন।' ঈদুল ফিতরের দিনে সকাল বেলা নামাঁরে জন্য বের হওয়ার পূর্বে কিছু খাওয়া সুন্নত। হযরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেছেন : 'রাসূলে মাকবুল (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বে আহার করতেন।' ঈদুল ফিতরের সকাল বেলা কিছু খাওয়ার তাৎপর্য সুস্পষ্ট। দীর্ঘ ১ মাস রোজা পালন করা হয়েছে। এ সময়ে সকাল বেলাসহ সারাদিনে কিছুই পানাহার করা হয়নি। আজ এ ঈদের দিনে সকাল বেলা কিছুই না খেলে এদিনও রোজার মতোই মনে হবে। অথচ মন মানসিকতা ও মনস্তত্ত্বের দিক দিয়ে এটি মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। সহিহ আল বুখারিতে হযরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, 'নবী করিম (সা.) ঈদের দিনে ময়দানে যাতায়াতের পথ পরিবর্তন করতেন।' অর্থাৎ যে পথে ঈদগাহে যেতেন সে পথে ফিরে আসতেন না। ফিরে আসতেন অন্য পথ দিয়ে।

ঈদের দিনে উচ্চৈঃস্বরে তাকবির বলা রাসূল (সা.) এর আমল হতে প্রমাণিত। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলে করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'তোমরা তোমাদের ঈদসমূহকে তাকবির বলার সাহায্যে সুন্দর আনন্দমুখর ও জাঁকজমকপূর্ণ করে তোল।' ইমাম যুহরি বলেছেন, 'নবী করিম (সা.) ঈদুল ফিতরের দিনে ঘর থেকে বের হয়ে নামাজের স্থানে পৌঁছা পর্যন্ত তাকবির বলতে থাকতেন।'

রাসুলুলস্নাহ (সা.) বলেন, যেদিন ঈদুল ফিতরের দিন সেদিন আলস্নাহতায়ালা ফেরেশতাদের সামনে গর্ব করতে থাকেন। অতঃপর বলেন, হে আমার ফেরেশতাগণ! মজদুরের পুরস্কার কি, যে তার কাজ পুরোপুরি করেছে? তখন ফেরেশতাগণ বলেন, হে আমাদের প্রতিপালক! তার পুরস্কার তাকে পুরোপুরি এর প্রতিদান দেওয়া। এবার আলস্নাহ বলেন, হে আমার ফেরেশতাগণ! আমার দাস ও দাসীরা তাদের ওপর চাপানো কর্তব্য পালন করেছে। তারপর তারা উচ্চৈঃস্বরে (তাকবির) ধ্বনি দিতে দিতে দুই রাকাত সালাতের জন্য (ঈদগাহে) রওয়ানা হয়েছে। আমার সম্মান ও গাম্ভীর্যের কসম! এবং আমার উদারতা ও উচ্চ মর্যাদার কসম! আমি তাদের ডাকে অবশ্যই সাড়া দেব। অতঃপর তিনি বলেন, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের পাপগুলো পুণ্য দিয়ে বদলে দিলাম। নবী (সা.) বলেন, তাই তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরতে থাকে (বায়হাকির শুআবুল ঈমান, মিশকাত ১৮৬-১৮৩ পৃ.)।

তবে এই সুসংবাদ নিশ্চয়ই তাদের জন্য, যারা পুরো মাস কাটিয়েছে রোজা রেখে। রমজানুল মোবারকের মর্যাদা রক্ষার বদৌলতেই তাদের জন্য এই মহাপুরস্কার ঘোষিত হয়েছে। পক্ষান্তরে যারা কোনো অসুবিধা ছাড়াই রমজানের রোজা রাখতে উদাসীন থেকেছে, পরম সুযোগের সদ্ব্যবহারে সক্ষম হয়নি, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বাণীর প্রতি ভ্রম্নক্ষেপ করেনি, তাদের জন্য কোনো সুসংবাদ নেই। আছে কঠোর শাস্তির হুমকি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে