রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

এলো খুশির ঈদ

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
এলো খুশির ঈদ

'ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/ আপনাকে তুই বিলিয়ে দে, শোন আসমানি তাগিদ/ তোর সোনাদানা, বালাখানা সব রাহে লিলস্নাহ দে জাকাত/ মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিদ/ ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/ আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদগাহে/ যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ/ রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ'... সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলামের এ গানের সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে বিলিয়ে দিতে উম্মুখ ধর্মপ্রাণ মুমিন মুসলমান। এখন প্রতীক্ষা শুধু এক ফালি বাঁকা চাঁদের। আজ সন্ধ্যায় শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ। বুধবার সারা দেশে যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে আজ চাঁদ দেখা না গেলে ৩০ রোজা পূর্ণ হবে। ঈদ হবে বৃহস্পতিবার।

পবিত্র কোরআন নাজিল ও মাগফিরাতের মাস রমজান শেষে ঈদের চাঁদ দেখামাত্র ছোট-বড়, ধনী-গরিব প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ে বইবে আনন্দের ঝর্ণাধারা। ঈদুল ফিতরের দিনটিই শুরু হবে ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে। বিভিন্ন ঈদগাহে সে জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

নামাজের পরপরই ঈদগাহগুলোতে চিরচেনা এবং কাঙ্ক্ষিত দৃশ্যের অবতারণা হবে। প্রত্যেক মুসলমান একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করবেন। শ্রেণি-ধর্ম-বর্ণ-বয়সনির্বিশেষে হবে সেই আলিঙ্গন। মধুর বহিঃপ্রকাশ ঘটবে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের।

এ ঈদের অন্যতম অনুষঙ্গ নতুন পোশাক। মাসজুড়ে বা অনেকে এর আগে থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করেন। এ বছর রাজধানীসহ বিপণিবিতানগুলোতে প্রতিবারের মতোই ভিড় দেখা গেছে। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ অবশ্য ঈদ কেনাকাটায় মন্দার কথা বলেছেন। তারপরও কেনাকাটার যে কমতি ছিল না, তা রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের মার্কেটমুখী রাস্তার তীব্র জট স্পষ্ট করে দিয়েছে।

এদিকে ঈদ এলে প্রতিবছর রাজধানী থেকে গ্রামের বাড়ি ফেরার বিষয়টি অধিকাংশ ঘরমুখী মানুষের দুশ্চিন্তার কারণ হলেও এবার ছিল কিছুটা ব্যতিক্রম। এবারের সড়ক-রেল ও নৌপথে ঈদযাত্রা ছিল অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে নির্বিঘ্ন। তাই অনেকটা স্বস্তিতেই ঘরে ফিরেছে মানুষ।

এদিকে আজ সন্ধ্যায় শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলে কাল বুধবার যাতে সারা দেশে যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করা যায় সে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে সবাই। ছোট বড় প্রতিটি ঈদগাহে শামিয়ানা টাঙানোর জন্য আগেই বাঁশ-খুঁটি পুঁতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঈদের কেনাকাটাসহ আনুষঙ্গিক সব প্রস্তুতিও দুপুর গড়ানোর আগেই গুটিয়ে নেবে সর্বস্তরের মানুষ।

'সেমাইয়ের ঈদ' নামে প্রচলিত এই ঈদে নানা রকম সেমাইয়ের সঙ্গে থাকবে ফিরনি, পিঠা, পায়েস, পোলাও, কোরমাসহ সুস্বাদু খাবারের আয়োজন। বিশেষ আয়োজন থেকে বাদ যাবে না রোগী, বন্দি বা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত কর্মীরাও। প্রথাগতভাবে রোগীদের জন্য হাসপাতালে, এতিমদের জন্য এতিমখানায় ও বন্দিদের জন্য কারাগারগুলোতে উন্নতমানের খাবারের ব্যবস্থা থাকবে। সরকারি শিশুসদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে কল্যাণকেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণকেন্দ্রেও থাকবে খাবার ও বিনোদনের বিশেষ ব্যবস্থা।

ঈদ উপলক্ষে বড় শহর ও রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোও সাজছে উৎসবের রূপে। রাজধানীতে বনানী থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত প্রধান সড়ক এবং সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা এবং বাংলা ও আরবিতে ঈদ মোবারক-খচিত ব্যানার দিয়ে সাজানো হবে। ঈদের দিবাগত রাতে নির্দিষ্ট সরকারি ভবনগুলোতেও আলোকসজ্জা করা হবে।

প্রিয় নবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর মদিনাতে হিজরতের অব্যবহিত পরেই সংযম আর আনন্দের প্রতীক পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতর উৎসব শুরু হয়। সৃষ্টি হয় সংযম আর সম্প্র্রীতির বৈষম্যমুক্ত এক নতুন মূল্যবোধের। প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) বলেছেন, 'চাঁদ দেখে রোজা পালন এবং চাঁদ দেখে ঈদ উদযাপন করবে। চান্দ্র মাস ২৯ দিনে হয়, আবার ৩০ দিনেও হয়। যদি আকাশে মেঘ থাকায় চাঁদ দেখা না যায়, তবে ৩০ দিনের গণনা পূর্ণ করবে।'

এদিকে আজ চাঁদ দেখা যাক বা না যাক সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের প্রচলিত নিয়মের একদিন আগেই চাঁদপুরের ৪০ গ্রামে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। যদিও এ নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে ক্রমেই দ্বন্দ্ব বাড়ছে। বিশেষ করে নবপ্রজন্ম আগাম ঈদ পালনে নারাজ। তারা সরকারি নিয়মে ঈদ উদযাপন করতেই আগ্রহ দেখাচ্ছে।

জানা গেছে, ১৯২৮ সাল থেকে সাদ্রা পীর সাহেবের অনুসারীরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদ উদযাপন করে আসছেন। তাদের ধারণা, পৃথিবীর যে অঞ্চলেই চাঁদ দেখা যাক না কেন রোজা ও ঈদ এক সঙ্গে উদযাপন করা যাবে। সেই অনুসারে গত কয়েক যুগ ধরে সরকারি নিয়ম না মেনে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের এক দিন আগে ঈদ ও রোজা উদযাপন করে আসছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ২০ গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ।

যথাযথ নিয়ম মেনে ঈদের আনন্দে শামিল হতে সারাদেশ এখন উৎসুক। সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন। ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন-বেতারসহ বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও স্টেশনগুলো ৫ থেকে ৭ দিনের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। দেশের জাতীয় দৈনিক ও সাময়িক পত্রিকাগুলো ইতোমধ্যে ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে ও প্রধানমন্ত্রী গণভবনে সকাল থেকেই গণ্যমান্য ব্যক্তি, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

দেশের প্রধান ঈদের জামাত হবে সকাল সাড়ে ৮টায় হাইকোর্টসংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। ঈদ জামাতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন ইমাম এবং বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ক্বারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিদেশি কূটনীতিক, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এতে অংশ নেবেন। আবহাওয়া প্রতিকূল বা অন্য কোনো অনিবার্য কারণে এ জামাত অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

ঈদের দিন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে বরাবরের মতোই পাঁচটি জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, সকাল ৭টা, সকাল ৮টা, সকাল ৯টা এবং সকাল ১০টায় যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ জামাত হবে। পঞ্চম জামাত হবে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে। এছাড়া ঢাকা সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠানের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ঢাকা সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ৩ শতাধিক মসজিদ, মাঠ ও ঈদগাহে ঈদের জামাতের আয়োজন করেছে। সারা দেশের সর্ববৃহৎ জামাতটি ঈদের দিন সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায়। এ বছর অনুষ্ঠিত হবে ঈদুল ফিতরের ১৯৭তম জামাত। অন্যান্য বারের ন্যায় এবারও জামাতে ইমামতি করবেন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। বরাবরের মতো এবারও দূরের মুসলিস্নদের ঈদ জামাতে যাতায়াতের সুবিধার্থে ঈদের দিন সকালে ভৈরব ও ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে