নিয়মিত অল্প আমলও মুমিনের জন্য যথেষ্ট
প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
আগামীকাল কিংবা পরশু আকাশে উঠবে শাওয়ালের চাঁদ। বিদায় নেবে পবিত্র মাহে রমজান। সংযম, ত্যাগ, অনাহার ও ইবাদত পালনের মাধ্যমে রমজানকে বিদায় জানাবে সারা বিশ্বের মুমিন মুসলমান। তবে রমজান বিদায় নিলেও এ মাসের সংযমের শিক্ষা ঈমানদারদের হৃদয়ে চির জাগ্রত থাকবে।
আলস্নাহতায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারিমে বলেন, 'মৃতু্য আসা অবধি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত করতে থাক।' (সূরা হিজর : আয়াত ৯৯)। রাসুল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া সালস্নাম বলেন, 'আলস্নাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হচ্ছে সেই আমল, যা নিয়মিত করে যাওয়া হয়; যদিও-বা তার পরিমাণ কম হয়।' শুধু এক মাস ইবাদত করে বাকি ১২ মাস নাফরমানি আলস্নাহর কাছে পছন্দনীয় নয়। তার রমজানের আমল মূল্যহীন। মুমিনের প্রতিটি মুহূর্তই কাটবে আলস্নাহ পাকের ধ্যানে। যদিও তা অল্প আমলের মাধ্যমে হোক। হুজুর (সা.) বলেন, অল্প আমল মুমিনের জন্য যথেষ্ট। তবে থাকতে আমলের ধারাবাহিকতা। সারা বছর নামাজ, রোজা, জিকির-আজকার ও কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে পরিচয় দিতে হবে প্রকৃত মুমিনের। তবেই হবে রমজানের সার্থকতা।
কোরআন হাদিসে এসেছে, ঈমানদারদের জন্য রমজান একটি বিশেষ উপলক্ষ মাত্র। রমজানকে কেন্দ্র করে মহান আলস্নাহতায়ালা তাঁর বান্দার জন্য অফুরন্ত ভান্ডার খুলে দেন। তাই রমজানের পরবর্তী ১১ মাস রমজানের শিক্ষাকে ধরে রাখা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অত্যন্ত জরুরি। রোজার আত্মিক দিকটি সারা বছরই পালন করতে হবে। সংযমের চর্চা প্রয়োজন রোজার মাসের মতো
সারা বছরই। সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, মিথ্যাচার, পরচর্চা, অপবাদ, হিংসা, লালসা ইত্যাদি বর্জন রমজানের মতো রমজান-পরবর্তী জীবনেও অব্যাহত রাখতে হবে। সারা বছরই একই ধারায় মিতব্যয়িতা ও পরিমাপ-বিধি বজায় রেখে চলার নির্দেশ রয়েছে। ঈমানদারগণ তাদের বছরের প্রতিটি দিনই এমনভাবে আমল করবেন, যেন সে রমজান মাসই অতিবাহিত করছেন। মুমিনের ১২ মাসই রমজান।
রমজানে প্রতি ওয়াক্তের নামাজ, তারাবি, ইফতার, সেহরি ও ইতিকাফসহ যাবতীয় ইবাদতের মতো নিয়মিতভাবে প্রতি ওয়াক্ত নামাজসহ রোজা পালন করবে এবং নফল নামাজ আদায় করবে। তবেই আলস্নাহর পক্ষ থেকে অফুরন্ত রহমত, বরকত ও মাগফিরাত অব্যাহত থাকবে। আমলের এ ধারা সারা বছর ধরে রাখতে পারাটাই রমজানের শিক্ষা। আর রমজানের শিক্ষাগুলো সারা বছর ধরে রাখাই রমজানের অন্যতম উদ্দেশ্য।
রোজার মাসে আলস্নাহ রোজাদারদের কঠোর পরিশ্রমের বাস্তব প্রশিক্ষণ দেন। অতিরিক্ত ২০ রাকআত তারাবির নামাজের মাধ্যমে পরিশ্রমের যে অভ্যস্ততা গড়ে ওঠে তা মুমিন ব্যক্তিকে রোজা-পরবর্তী মাসগুলোতে বৈধ উপায়ে আরও উপার্জনের জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে শেখায়।
রমজানের সঙ্গে কোরআনের আর কোরআনের সঙ্গে রমজানের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এ মাসে রাত জেগে নামাজে কোরআন শোনার গভীর আগ্রহ রোজাদারের মধ্যে সৃষ্টি হয়। তাই দিনভর রোজা রাখার পরও রাতে নামাজে দাঁড়িয়ে কোরআন শুনতে রোজাদার ক্লান্তি বোধ করে না। এতে রয়েছে রোজাদারের জন্য কোরআন বিষয়ক এক বাস্তব প্রশিক্ষণ। আর এ প্রশিক্ষণের দাবি হচ্ছে, রোজার মাসের মতো রোজা-পরবর্তী মাসগুলোতে রোজাদারের জীবন কোরআনকেন্দ্রিক হওয়া।
সূরা আন কাবুতের ৪৫ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, 'নাজিলকৃত কোরআন পড়ো এবং নামাজ কায়েম করো।' অথচ চর্চার অভাবে অনেকেই একসময় কোরআন শিখলেও পরে তা ভুলে যান। আর এ ধরনের ব্যক্তি রোজ কিয়ামতের দিন আলস্নাহর সঙ্গে অঙ্গহীন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবেন বলে হাদিসে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। ঈমানদার মুসলমান মুত্তাকি দাবিদার হওয়ার পরও যারা কোরআন ভুলে আছে, কোরআন শেখার, পড়ার, বোঝার ও মেনে চলার প্রয়োজন অনুভব করে না, তাদের কিয়ামতে অন্ধ হিসেবে ওঠানোর জলদ্গম্ভীর ঘোষণা দিয়েছেন আলস্নাহ কোরআনে (সূরা ত্বহা : ১২৪ থেকে ১২৬)।
এদিকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত আর মর্যাদার অধিকারী হলেও কোরআন না শিখলে, কোরআনের জ্ঞান না থাকলে ইসলাম ধর্মে তার স্থান হচ্ছে মূর্খ আর নিরক্ষরের তালিকায়। আলস্নাহ বলেন, 'তাদের মধ্যে এমন কিছু নিরক্ষর-মূর্খ লোক আছে, যারা মিথ্যা আকাঙ্ক্ষা ছাড়া কিতাবের (কোরআনের) কিছুই জানে না, তারা শুধু অমূলক ধারণাই পোষণ করে।' (সূরা বাকারা : ৭৮)।
কাজেই দুনিয়ার সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নতির জন্য এবং পারলৌকিক মহাসফলতার জন্য রমজানের আলোকে সারা বছর আত্মসংস্কার, আত্মসংশোধন ও আত্মবিশ্লেষণ জরুরি। এতে সফলকাম ব্যক্তিই প্রকৃত মুমিন। মহাজ্ঞানী আলস্নাহর কাছে প্রিয়।