পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছে কয়েক দিন আগেই। ভিড় এড়াতে অনেকে আগেভাগেই পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়েছেন। তবে ছুটির অপেক্ষায় রাজধানীতে অবস্থান করছেন চাকরিজীবীরা। কেউ কেউ ছুটি পেয়ে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। ফলে ফাঁকা হতে শুরু করেছে রাজধানী। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, শুধু ট্রেনে করেই প্রতিদিন ২ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন। এবার আগে থেকেই ঈদযাত্রা শুরু হওয়ায় বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীর চাপ তুলনামূলক কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ায় এবার যাত্রীরা ভোগান্তিহীন ঈদযাত্রায় শামিল হতে পারছেন। তবে শিল্পকারখানাসহ সব স্তরের অফিস ছুটি হলে সড়কে যানবাহনের ধীরগতি আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা। পাশাপাশি বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখো যাত্রীর চাপ বাড়লে নির্ধারিত ভাড়া নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হতে পারে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। রোববার ছিল ঈদযাত্রার পঞ্চম দিন। ঈদের আগ মুহূর্তে বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে যে পরিমাণ ভিড় থাকার কথা প্রকৃতপক্ষে এদিন তেমন চিত্র দেখা যায়নি। বাস টার্মিনালের বিভিন্ন কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতারা বলছেন, অনেকেই পরিবারের সদস্যদের আগে পাঠিয়েছেন, তাই এখন যাত্রী কম। ছুটি পুরোপুরি শুরু হলে চাপ বাড়বে। লঞ্চ টার্মিনালেও একই চিত্র। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশিরভাগ যাত্রী পদ্মা সেতু হয়েই গ্রামে যাচ্ছেন। তবে ঈদের ছুটি শুরু হলে লঞ্চেও ভিড় বাড়বে। বাস-লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রী কম : রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে দেখা গেছে কাউন্টারগুলো অনেকটাই ব্যস্ততাহীন। যাত্রী এলেই কাউন্টারে থাকা লোকেরা তৎপর হচ্ছেন টিকিট বিক্রিতে। অন্যদিকে টিকিট কিনে ফাঁকা টার্মিনালে বাস ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছেন যাত্রীরা। যাত্রী সংখ্যা কম হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সোহাগ পরিবহণের কাউন্টার মাস্টার মো. মাইনুদ্দিন বলেন, 'বেশি মানুষ চলে গেছে ১ থেকে ৩ এপ্রিলের মধ্যে। আজ যাত্রী অনেক কম। আবার ৮ ও ৯ তারিখে যাত্রী বাড়বে।' টার্মিনালে ভিড় কম জানিয়ে রাবেয়া পরিবহণের কাউন্টার মাস্টার আব্দুল কাইয়ুম বলেন, 'অনেকে এখনো ছুটি পাননি। অনেকে পরিবারের সদস্যদের আগে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এসব কারণে ভিড় তুলনামূলক কম।' যাত্রী না থাকার কথা জানিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন যমুনা লাইন পরিবহণের গাবতলীর কাউন্টার ম্যানেজার শাহরিয়ার হোসেন টিপু। তিনি বলেন, 'আমাদের যাত্রী নেই বললেই চলে। আমাদের পাঁচটা বাস যাওয়ার কথা কিন্তু গেছে তিনটা। ৪০ সিটের বাস ছেড়েছে সর্বোচ্চ ৩২ জন যাত্রী নিয়ে।' এদিকে টার্মিনাল ফাঁকা থাকাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। সাকুরা পরিবহণে টিকিট কাটতে আসা মো. ইসমাইল হায়দার বলেন, 'আমার অফিস এখনো ছুটি হয়নি। তাই আমি যেতে পারছি না। সন্তানরা আগে গ্রামে যেতে চাচ্ছে তাই ওদের মায়ের সঙ্গে পাঠিয়ে দিচ্ছি।' রাজবাড়ী যাবেন আলমাস হোসেন। তিনি বলেন, 'টার্মিনাল পুরাই ফাঁকা। ভালোই লাগছে, কোনো ঝক্কি-ঝামেলা নেই। আরামে বাড়ি যেতে পারবো।' রোববার সকাল থেকে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে তেমন যাত্রীর দেখা মেলেনি। ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রোডের উত্তরা পরিবহণের কাউন্টার সুপারভাইজার মো. মহন মৃধা বলেন, 'সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত একটি টিকিটও বিক্রি করতে পারিনি। এখন দিনের বাকি সময় আদৌ যাত্রী পাবো কি না জানি না।' তিনি আরও বলেন, 'ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রোডে তাদের ২২টি বাস আছে। সকাল থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত আটটি বাস নোয়াখালী টার্মিনাল ছেড়ে গেছে। কিন্তু এই টার্মিনাল থেকে একটি টিকিটও বিক্রি করতে পারিনি। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এখন ঈদের আগ মুহূর্তে টার্মিনালের যাত্রী অনেক কম। কাল (সোমবার) গার্মেন্টস ছুটি হলে যাত্রী বাড়বে।' তবে কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের এনা পরিবহণের বাস কাউন্টারে। এ পরিবহণের কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। প্রতি ১০ মিনিট পরপর বাস গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে। বাসের টিকিট কাটতে কোনো হয়রানি বা অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। বেলা সাড়ে ১১টায় ময়মনসিংহ যাওয়ার উদ্দেশ্যে সপরিবারে মহাখালী বাস টার্মিনালে আসেন মিরপুরের বাসিন্দা আজমল হোসেন। তিনি বলেন, 'কাউন্টারে আসার ১০ মিনিটের মধ্যেই সিরিয়াল ধরে বাসের টিকিট কেটেছি। অন্যান্য বছর ঈদের আগ মুহূর্তে টিকিটের জন্য চাপ থাকলেও এবার তা দেখা যায়নি। সড়কে যানজট না থাকায় আশা করি নির্ধারিত সময়ে ময়মনসিংহে পৌঁছাতে পারব।' সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে ৬০টি বাস ছেড়ে গেছে জানিয়ে এনা পরিবহণের সহকারী ব্যবস্থাপক এস এম খালেদ বলেন, 'এখন যাত্রী চাপ মাঝামাঝি আছে। খুব বেশিও না, আবার কমও না। সকালে বৃষ্টি হওয়ায় যাত্রী তুলনামূলক কম ছিল। তবে সোমবার মঙ্গলবার টিকিটের চাহিদা বাড়বে।' দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ৯ জন যাত্রী নিয়ে টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্য ছেড়ে যায় নিরালা সুপার। ঈদের আগ মুহূর্তে এত অল্প যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে চালক মোখলেছুর বলেন, 'গত পরশু চারজন যাত্রী নিয়ে টাঙ্গাইল থেকে মহাখালী আসছি। আজ আবার টাঙ্গাইলের সিরিয়াল পেয়েছি। কিন্তু বাসে মাত্র ৯ জন যাত্রী পেয়েছি।' এদিকে, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও যাত্রী-খরা চলছে। লঞ্চ-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকদিনে স্বাভাবিকের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও তা আশানুরূপ নয়। পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় কয়েকটি লঞ্চের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। রোববার সকালে চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া, পটুয়াখালীগামী পন্টুনে কিছুটা ভিড় দেখা গেছে। তবে কিছু সময় পরেই ফাঁকা হয়ে যায় সব। আর বিকালে আসা যাত্রীদের বেশিরভাগই বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলাগামী লঞ্চগুলোতে ভিড় করেন। পটুয়াখালী, বগা, ইলিশা রুটেও যাত্রীদের কমবেশি উপস্থিতি দেখা যায়। তবে বেশ কম যাত্রী ছিল বরিশাল রুটে। এ রুটে ছয়টি লঞ্চ যাওয়ার কথা থাকলেও যাত্রী সংকটে শনিবার তিনটির যাত্রা বাতিল করা হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে পর্যাপ্ত লঞ্চ ও বেশি ভিড় না থাকায় যাত্রীরা অনেকটা আরাম করেই বাড়ি ফিরতে পারছেন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ৬ কি.মি. যানজট রোববার সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় ঈদে ঘরমুখো মানুষদের।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, ‘সকাল আটটার দিকে রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌরসভার যাত্রামুড়া এলাকায় মালবাহী ট্রাক ও প্রাইভেট কারের মধ্যে সংঘর্ষের পর যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কের উভয় পাশে কাঁচপুর থেকে রূপসী পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।’
তিনি জানান, সকাল ৯টার দিকে হাইওয়ে পুলিশ গাড়ি দুটি সড়ক থেকে সরিয়ে নেয়। তবে সকাল ১০টা পর্যন্ত এই সড়কে যানজট দেখা গেছে। যানজট নিরসনে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা দেখা গেছে।
এদিকে ঈদ ঘনিয়ে এলেও এদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে যাত্রীর চাপ ছিল অন্য বছরের তুলনায় কম। মহাসড়কে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যাত্রী ও পরিবহণ দুটোই ছিল বেশি। সকালের তুলনায় ভোরে যাত্রী সমাগম বেশি ছিল।
সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ডে একুশে পরিবহণের টিকিট বিক্রেতা আরিয়ান মাহমুদ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় যাত্রী ডাকাডাকি করছিলেন। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর এ সময় আমরা কাউন্টারে বসে থাকি। যাত্রীদের টিকিট দিতে পারি না। এ বছর এখনো তেমন চাপ তৈরি হয়নি। ভোরে সিলেট পথের কিছু যাত্রী ছিলেন।’ বিভিন্ন কারখানা ছুটি হলে সন্ধ্যার পর কিংবা সোমবার সকালে যাত্রীর চাপ বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল হক বলেন, ‘মানুষ ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি ফিরছে। ছোট্ট একটি দুর্ঘটনার কারণে ঢাকা-সিলেট পথে সামান্য যানজট তৈরি হয়।’
যাত্রী বাড়ছে পাটুরিয়া লঞ্চঘাটে
ঈদযাত্রায় মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের সেই চিরচেনা চাপ নেই। পাটুরিয়া লঞ্চঘাটে ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তবে মহাসড়কে কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। যাত্রীবাহী ও অন্যান্য যানবাহন মহাসড়কে স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করছিল।
দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষ মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথ হয়ে ঈদে বাড়ি ফিরতেন। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা কমে এসেছে। এ কারণে এবার ঈদযাত্রা শুরু হলেও পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ অন্যান্য ঈদের সময়ের চেয়ে কম।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ সংস্থার (বিআইডবিøউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের ঈদযাত্রায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে ১৫টি ফেরি এবং আরিচা কাজিরহাট নৌপথে পাঁচটি ফেরি রয়েছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে পদ্মা নদীর তলদেশ থেকে পলিমাটি সরানোয় নৌ চ্যানেলটির দূরত্ব কমে এসেছে। এ কারণে পারাপারে ফেরিগুলোর সময়ও কম লাগছে।
সংস্থাটি আরও জানায়, ঈদে ঘরমুখো মানুষের পারাপার নির্বিঘœ করতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ২২টি লঞ্চ চলাচল করছে। এ ছাড়া আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ১২টি লঞ্চ ও ৪১টি স্পিডবোট আছে।
বিআইডবিøউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর পাটুরিয়ায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কমে গেছে। এবার ঈদে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং আরিচা কাজিরহাট নৌপথে প্রয়োজনীয়সংখ্যক ফেরি আছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ ছাড়াই বাড়ি ফিরবে বলে তিনি আশা করেন।
ট্রাফিক নির্দেশনায় উড়বে ড্রোন
ঘরমুখো মানুষের স্বস্তির ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে ড্রোনের মাধ্যমেও ট্রাফিক নির্দেশনা দেওয়ার ‘চেষ্টা করা হবে’ বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশ প্রধান মো. শাহাবুদ্দিন খান। রোববার দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পরিদর্শনে এসে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার আলেখারচর বিশ্বরোড এলাকায় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মহাসড়কের নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিদর্শনের সময় তিনি সাংবাদিকদের এসব বলেন।
হাইওয়ে পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক বলেন, ‘ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রাকে নির্বিঘœ ও স্বস্তিদায়ক করতে দেশের সব মহাসড়কে পুলিশের সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে জেলা পুলিশ, প্রশাসনসহ বিভিন্ন ইউনিট একসঙ্গে কাজ করছে। ঈদে মানুষের বাড়ি ফেরাকে আনন্দময় করতে আমরা সবাই মাঠে আছি। ঈদের ছুটি শেষ হওয়া পর্যন্ত এটা অব্যাহত থাকবে।’
প্রতিদিন ট্রেনে ঢাকা ছাড়ছেন ২ লাখ মানুষ
এদিকে, রোববার ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘ট্রেনে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন। আমরা এখন পর্যন্ত রেলের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ধরে রাখতে পেরেছি। আগামী দুই দিন যাত্রীর সংখ্যা বাড়বে। তখনও এমন পরিবেশ থাকবে বলে প্রত্যাশা করছি।’
মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘আজ কমলাপুর ও এর আশপাশের স্টেশন থেকে ৬৯টি ট্রেন ছেড়ে যাবে। এর মধ্যে ৪৪টি আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রীসংখ্যা ৩৩ হাজার ৫০০ জন। এছাড়া লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন রয়েছে।’
শুধু ঈদ নয়, সবসময়ই ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ উল্লেখ করে তিনি জানান, ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে বিনা টিকিটের যাত্রী প্রবেশ বন্ধ করতে কড়াকড়ি ভ‚মিকা রাখছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। দুই দফা টিকিট চেকিং করে যাত্রীদের ভেতরে প্রবেশ করাচ্ছেন দায়িত্বে থাকা কর্মীরা। এছাড়া স্টেশনে শৃঙ্খলা ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বুথ বসিয়েছেন এবং প্ল্যাটফর্মে টহল দিচ্ছেন।
পৌনে তিন ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ল নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস
এদিন খুলনাগামী নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের পরিবর্তে পৌনে ৩ ঘণ্টা দেরিতে দুপুর ২টা ২৭ মিনিটে ঢাকা ছেড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন এই ট্রেনের যাত্রীরা। তবে নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস বাদে অন্য ট্রেনগুলো সময়মতো কমলাপুর ছেড়েছে।
নকশিকাঁথা এক্সপ্রেসে টিকিট কাটেন ইমরান হোসেন জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকেই স্টেশনে এসেছেন। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে সেখানেই অপেক্ষা করছেন তিনি। তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কুষ্টিয়ায় গ্রামের বাড়িতে যাবেন।
পরিবার নিয়ে ইমরান থাকেন গাজীপুরে। সেখানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। দুপুর একটার দিকে তিনি বলেন, ‘গাজীপুর থেকে সকাল ৬টায় রওনা হয়েছি। সাড়ে ৯টার মধ্যে স্টেশনে চলে এসেছি। এর পর থেকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।’
শাহিদা বেগমের ছেলে আবদুল্লাহ থাকেন রাজধানীর গাবতলীতে। বাসচালকের সহকারীর কাজ করেন। গাবতলীতে ছেলের বাসায় থাকেন শাহিদা। এখন ঈদ করতে গ্রামে ফিরছেন। বললেন, ‘বাসে ভাড়া বেশি। তাই ট্রেনে যাচ্ছি।’
কমলাপুর রেলস্টেশনের ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়ে। নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস ট্রেনটি যথাসময়ে না আসায় ইমরান ও শহিদার মতো কয়েকশ’ মানুষ কমলাপুর রেলস্টেশনে ভোগান্তিতে পড়েন। আট নম্বর প্ল্যাটফর্মের যে অংশে ট্রেন এসে থামে সেখানে যাত্রীদের বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেককেই মেঝেতে বসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস আসতে দেরি হওয়ায় যথাসময়ে ঢাকা থেকে ছাড়া যায়নি বলে জানান কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার। কখন ট্রেনটি আসবে- এমন প্রশ্নে তিনি দুপুর ১টার দিকে বলেন, শিগগিরই চলে আসবে।
তবে ঈদযাত্রার পঞ্চম দিনে রোববার নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস ছাড়া বেশিরভাগ ট্রেন যথাসময়ে কমলাপুর ছেড়ে গেছে। স্টেশন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় যাত্রীদের অনেকে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
১৮ এপ্রিলের টিকিট মিলবে আজ
ঈদে ঘরে ফেরা মানুষদের ফিরতি যাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঈদ উদযাপন শেষে ১৮ এপ্রিল যারা ঢাকায় ফিরতে চান, আজ সোমবার তাদের টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। আজ সকাল ৮টায় পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনের টিকিট অনলাইনে উন্মুক্ত করা হবে। এছাড়া দুপুর ২টায় উন্মুক্ত করা হবে পূর্বাঞ্চলে চলাচল করা আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট।
যাত্রীরা ঈদের অগ্রিম যাত্রা ও ফিরতি যাত্রার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ একবার করে টিকিট কিনতে পারবেন। একজন যাত্রী সর্বাধিক ৪টি টিকিট কিনতে পারবেন। তবে টিকিট রিফান্ড করা যাবে না বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ৬ চেকপোস্ট
লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, পদ্মা বহুমুখী সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার কোটি মানুষ নাড়ির টানে বাড়িতে ছুটছেন। এবারের ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে। হাইওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী গত এক বছরে ১৩৫টি দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১৩১ জনের। এছাড়া মহাসড়কে অন্যান্য ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত দেড় হাজারের বেশি মানুষ।
রোববার সরেজমিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-মাওয়া বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে স্পিডগানের মাধ্যমে যানবাহনের গতি মনিটরিং করছে হাঁসাড়া হাইওয়ে পুলিশ। এছাড়া ঈদ যাত্রায় অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনাসহ সড়কে চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা এড়াতে একাধিক স্থানে সিসিটিভি স্থাপন করে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায় স্পিডগান ব্যবহার করে নিয়মিত মামলা দিয়েও নিয়ন্ত্রণে আসছে না পরিস্থিতি। ফলে আসন্ন ঈদুল ফিতরে লাখো মানুষের ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে এক্সপ্রেসওয়েতে ৬টি পয়েন্টে সতর্ক অবস্থানে থাকবে পুলিশ।
পুলিশ সুপার আসলাম খাঁন বলেন, জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মহাসড়কে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা ও যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সাদা পোশাকসহ দুই শতাধিকের বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া মোটর সাইকেল চলাচলের জন্য পদ্মা সেতুর পাশে আলাদা লেন তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়েসহ চলমান সব সমস্যার কথা বিবেচনা করে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক আবু জাফর রিপন বলেন, ‘ঢাকা-ভাঙ্গা ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জের অংশে ঈদে যাত্রীদের নিরাপত্তা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু উত্তর থানা কর্তৃপক্ষসহ হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা বিভিন্ন পয়েন্টে নিয়োজিত আছে। একই সঙ্গে জেলা গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা মহাসড়কে চুরি ছিনতাই বন্ধে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। এটি ঈদের ছুটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহ থাকবে। যদি কোন চালক আইন অমান্য করে তাৎক্ষণিক মামলা দেওয়াসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একাধিক বিভিন্ন পয়েন্টে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে। আশা রাখি এবারের ঈদযাত্রায় রাজধানী ছেড়ে যারা পদ্মা সেতু হয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরবেন তারা নিরাপদে গ্রামের বাড়িতে ফিরতে পারবেন।’