৩০ রোজা হলে ঈদ হবে ১১ এপ্রিল। বাকি তিন দিন। চৈত্রের মাঝামাঝি থেকেই এবার তাপদাহ শুরু হয়েছে, যা আরও বাড়ছে। গরমে অনেকটা নাকাল হয়ে পড়েছে জনজীবন। বৃষ্টিও হচ্ছে না সেভাবে। আবহাওয়ার এ অবস্থা চলবে ঈদের দিনও। ঈদের সময় স্বাভাবিকের তুলনায় তাপমাত্রা বেশি থাকবে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে।
ঈদের দিন কেমন থাকবে আবহাওয়া- জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান শনিবার দুপুরে গণমাধ্যমকে জানান, ঈদের দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা খুবই কম। তাপমাত্রা থাকবে বেশি। গরমের অনুভূতি ও হাঁসফাঁস অবস্থা থাকবে।
তিনি জানান, এখন গরমকাল। বৃষ্টির সম্ভাবনাও কম। তাই তাপমাত্রা গরম থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে বছরের এই সময় কালবৈশাখী ঝড়ের আশঙ্কা থাকে। সেক্ষেত্রে যেকোনো সময় বৃষ্টি হতেও পারে।
এ আবহাওয়াবিদ জানিয়েছেন, রোববার থেকে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে থাকবে। দুই দিন একটু কমের দিকে থাকবে।
এরপর আবার বাড়তে থাকবে তাপমাত্রা। তাপমাত্রা গরম থাকলে স্বাভাবিকভাবে গরমের অনুভূমিও থাকবে।
এরই মধ্যে ঢাকাসহ দেশের চারটি বিভাগের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়েই মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বইছে। তাই এসব এলাকায় তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বা 'হিট অ্যালার্ট' জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সংস্থাটির আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানের আবহাওয়া অবস্থা আরও এক সপ্তাহ চলবে। এপ্রিলজুড়েই সারাদেশে তাপপ্রবাহ থাকবে।
\হএদিকে শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে, ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এই মৌসুমের সর্বোচ্চ। গত বছর রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৭ এপ্রিল, ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার রাজশাহীতে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। আর ৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি হলে সেটাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছরই এপ্রিল মাসে গড়ে সাধারণত দুই-তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ও এক-দুটি তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। তবে তারা আশঙ্কা করছেন, এ বছরের তাপপ্রবাহের ব্যাপ্তিকাল বিগত বছরগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মলিস্নক জানিয়েছেন, বিদ্যমান তাপপ্রবাহের কারণে বাতাসে এখন জলীয়বাষ্পের আধিক্য থাকবে। এতে করে মানুষের শরীরে অস্বস্তিবোধ বৃদ্ধি হতে পারে। এপ্রিল উষ্ণতম মাস, এ সময় তাপমাত্রা এমনিতেও বেশি থাকে। কিন্তু এটিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া দরকার। যখন ঝড় হয়, তখন ভারী বৃষ্টি হয়। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা আর বাড়ে না। কিন্তু ৮-৯ এপ্রিলের আগে ভারী বৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ
তাপমাত্রা ৪০.২ ডিগ্রি
এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তাপপ্রবাহে পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা। মৃদু থেকে মাঝারি শেষে শনিবার থেকে তীব্র তাপপ্রবাহে হাঁপিয়ে উঠেছে খেটেখাওয়া মানুষ। পুরো সপ্তাহজুড়ে এ জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
শনিবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে শুক্রবার তাপমাত্রার পারদ ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, শনিবার দুপুরে ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বিকেল ৩টায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশের এবং চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
তিনি আরও জানান, এপ্রিলের শুরু থেকে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় প্রচুর ঘাম ঝরছে এবং গরমের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রা আগামী কয়েকদিন এমন থাকতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, জেলায় এ মাসে অতি তীব্র তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা আছে।
চুয়াডাঙ্গায় এ পরিস্থিতি থাকবে আরও কয়েকদিন। দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও এ অঞ্চলে তেমন সম্ভাবনা নেই বলেও জানান পর্যবেক্ষক আলতাফ হোসেন।
তীব্র গরমে রোজাদারসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ হাঁপিয়ে উঠেছে। বিশেষ করে প্রাণিকূলের অবস্থা হাঁসফাঁস।
পাবনায় তাপমাত্রা
৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস!
পাবনা প্রতিনিধি জানান, পাবনায় এ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড অবশেষে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে পা রাখল। এর আগে ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক নাজমুল হক জানান, শনিবার বেলা ৩টায় ঈশ্বরদীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত এটাই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
তিনি জানান, এর আগে গত পহেলা এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে পাবনার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া গত বছর একবার ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
প্রচন্ড রোদের তাপে বাইরে চলাচল করা বা কোথাও একদন্ড দাঁড়ানো যাচ্ছে না। আর এই কারণে সড়কে মানুষের সাথে সাথে যানবাহন ও মানুষের চলাচল কমে গেছে।
তীব্র গরমে রোজাদারদের প্রাণও ওষ্ঠাগত। প্রখর রোদের ঘাম ঝরানো তাপমাত্রার কারণে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে।
আবার অনেকেই জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচন্ড তাপদাহ উপেক্ষা করেই বাধ্য হয়ে কাজে বের হয়েছেন। তীব্র গরমে বয়স্ক ও শিশুরা পড়েছে সব থেকে বেশি ভোগান্তিতে। হাসপাতালে বেড়েছে গরমে অসুস্থ রোগীর সংখ্যা।