পবিত্র ঈদুল ফিতর ঘিরে সারাদেশে বইছে উৎসবের আনন্দ। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ইতোমধ্যে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন কর্মজীবীরা। বাস, ট্রেন, লঞ্চ- সবখানেই নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড়। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের ঈদযাত্রা অনেকটা স্বস্তিদায়ক। ঘরমুখো মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানী থেকে বের হওয়ার মুখগুলোতে যানজট থাকলেও দূরযাত্রায় দুর্ভোগ নেই। এদিকে মানুষ বাড়ি ফেরায় ধীরে ধীরে ফাঁকা হতে শুরু করেছে জনবহুল রাজধানী ঢাকা।
শনিবার রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন, গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল এবং সদরঘাট লঞ্চঘাট ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। নির্ধারিত সময় বাস ছেড়ে যাচ্ছে। তবে মহাসড়কে গাড়ির চাপ হওয়ায় যানজট তৈরি হচ্ছে। মহাসড়কে যাত্রীর চাপ না থাকলেও বাসভাড়া দ্বিগুণ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চট্টগ্রামমুখী যানবাহনের চাপ বেড়েছে। অতিরিক্ত চাপের কারণে মেঘনা সেতু থেকে কুমিলস্নার দাউদকান্দি মেঘনা-গোমতী সেতু পর্যন্ত যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করছে। এ ছাড়া ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় যানজট তৈরি হয়েছে। ফলে এই এলাকায় থেমে থেমে চলছে গাড়ি।
পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল পস্নাজায় সাতটি টোল বুথে প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে একটি করে যানবাহনে টোল আদায় করা হচ্ছে। তবে মোটর সাইকেলের উপচেপড়া ভিড় থাকায় আলাদা দুটি লেন তৈরি করে টোল আদায় করা হচ্ছে।
এদিকে, কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে মোটামুটি সব ট্রেনই সময়মতো ছেড়েছে। প্রায় সব ট্রেনেই ভিড় থাকলেও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। এবার টিকিট ছাড়া
\হকোনো যাত্রীকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না স্টেশনে। আর যেসব গাড়িতে ট্রেনের যাত্রী আছে, সেগুলোকেই স্টেশন এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। এরপর যাত্রীরা নেমে পস্ন্যাটফরমে প্রবেশ করছেন। এরপর দ্বিতীয় ধাপে টিকিট চেক করা হচ্ছে। শেষ দফায় পস্ন্যাটফরমে প্রবেশের ঠিক আগে আরও এক দফা জাতীয় পরিচয়পত্র ও টিকিট চেক করে দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে গত কয়েকদিনের তুলনায় শনিবার নৌপথে ঈদযাত্রীদের চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে লঞ্চের কেবিনের চাহিদা বেশি। ডেকে তুলনামূলক যাত্রী কম। যাত্রী বাড়তে থাকায় লঞ্চের সংখ্যাও বাড়িয়েছেন লঞ্চ মালিকরা। তবে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সড়কে যানজটে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
উত্তরের সড়কে ভাড়া বেড়েছে দ্বিগুণ
ঈদযাত্রার চতুর্থদিন শনিবার কোনো ভোগান্তি ছাড়াই কর্মস্থল ছেড়েছেন উত্তরাঞ্চলের মানুষ। শিল্পকারখানা ছুটি না হওয়ায় সড়কে যাত্রীর চাপ সেভাবে বাড়েনি। তবে বাস ভাড়া অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
শনিবার বিকাল ৩টার দিকে ঢাকা-আরিচা ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের নবীনগর, বাইপাইল, শ্রীপুর ও জিরানীবাজার বাসস্ট্যান্ড ঘুরে ঘরে ফেরা মানুষের তেমন চাপ দেখা যায়নি। তবুও বাড়ানো হয়েছে বাসের ভাড়া। জনপ্রতি ৪০০-৫০০ কিংবা এর চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে দাবি যাত্রীদের।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩৭২ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত, বগুড়ার ভাড়া ৫৫৮, নাটোর ৫৯৩, পাবনা ৬৪৬, নওগাঁ ৭০১, রাজশাহী ৭১২, জয়পুরহাট ৭১২, রংপুর ৮৭৯, দিনাজপুর ৯৪০, লালমনিরহাট ৯৯৪, কুড়িগ্রাম ১০০২, নীলফামারী ১০১৬, ঠাকুরগাঁও ১০৯৫ টাকা এবং পঞ্চগড় ১২৩৫ টাকা। তবে এই ভাড়ার চেয়ে প্রতিটি গন্তব্যস্থলে যেতে হলে অতিরিক্ত ৩০০-৫০০ টাকা গুনতে হচ্ছে নাড়ির টানে বাড়িফেরা মানুষকে।
নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের কয়েকটি কাউন্টার ঘুরে নাটোরের দুটি টিকিট নিশ্চিত করেছেন রিকশাচালক হারুন মন্ডল। তিনি গ্রামের উদ্দেশে পোশাক শ্রমিক স্ত্রী ও শিশু সন্তান নিয়ে ঈদযাত্রা করবেন। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ৫৯৩ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও তাকে প্রতিটি টিকিট ক্রয় করতে হয়েছে ৯৫০ টাকা দরে।
তিনি বলেন, 'আমি নাটোর যাব। আগে কাউন্টারে টিকিট কিনে চেয়ারকোচে বাড়ি যেতাম। আজ এসে দেখি, ওইসব কাউন্টারে টিকিট নেই। পরে লোকাল গাড়ির ৯৫০ টাকা করে এক হাজার ৯০০ টাকা দিয়ে দুটি টিকিট কিনেছি।'
মনিরুল ইসলাম রনি বলেন, 'আমি ছোটখাটো ব্যবসা করি। আমাকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এই এলাকাতেই থাকতে হবে। তাই ভোগান্তিহীন ঈদযাত্রার আশায় পরিবারের সদস্যদের একটু আগভাগেই গ্রামে পাঠিয়ে দিলাম। ভাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময় বগুড়ার ভাড়া ৫৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা। কিন্তু ঈদযাত্রা উপলক্ষে তা বাড়িয়ে ৯০০ টাকা করা হয়েছে। আর যাত্রীরাও বাধ্য। কারণ, সব যানবাহনের টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।'
নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকার আজিজ পাম্প সংলগ্ন শ্যামলী পরিবহণের কাউন্টার মাস্টার বলেন, 'আমাদের টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। আমরা শুধু যাত্রীদের তুলে দেওয়ার জন্য কাউন্টার খুলে রেখেছি। যাত্রীরা আসছেন আমরা গাড়িতে তুলে দিচ্ছি। এখান থেকে দুই-একটি টিকিট বিক্রি করছি। যাত্রীর চাপ নেই, টিকিট বিক্রি করব কার কাছে।'
লোকাল গাড়ির কাউন্টার মাস্টার মো. পরান বলেন, 'আমরা ঈদের আগে বিভিন্ন গাড়ি কন্ট্রাক্ট করে থাকি। এ সময় বেশি ভাড়া থাকে। আমরাই তো বেশি টাকা দিয়ে মালিকের কাছ থেকে কন্ট্রাক্ট করে নেই। বাসের মালিকের টাকা, তেল খরচ, রাস্তা খরচ ও স্টাফ খরচ বাদ দিয়ে আমাদের তিনজনের খরচ তুলতে হয়। এ ক্ষেত্রে ১০০-২০০ টাকা বেশি নিতেই হয় ভাই। ঈদে রাস্তা খরচ বেশি, আর আমরা যেসব গাড়ি পাই, সেগুলোর বেশির ভাগই ভিন্ন রুটের। ঈদ উপলক্ষে তাদের কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়। আর এসব নানা কারণে গাড়ির খরচ একটু বেশি। আমরা যাত্রীদের সেবার জন্য এসেছি। এত কষ্ট করছি, দুই-একশো টাকা লাভ না করলে আমরা পরিবার নিয়ে ঈদ করব কীভাবে!'
সাভার হাইওয়ে থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাবুল আক্তার বলেন, 'অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে দ্রম্নত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ। অতিরিক্ত ভাড়া অদায়ের ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।'
বন্ধ মৈত্রী, মিতালী ও বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন
আসন্ন ঈদুল ফিতরে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় নিরসনে আন্তঃদেশীয় তিন ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস, মিতালী এক্সপ্রেস ও বন্ধন এক্সপ্রেস চলাচল আজ রোববার থেকে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। তিনটি ট্রেন মোট ১১ দিন বন্ধ থাকবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নেওয়া কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, আন্তঃদেশীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস, মিতালী এক্সপ্রেস ও বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন ৭-১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। শুধু মিতালী এক্সপ্রেস (৩১৩২) ট্রেন জলপাইগুড়ি থেকে ১৭ এপ্রিল ছেড়ে আসবে। আগামী ১৮ এপ্রিল থেকে সবকটি আন্তঃদেশীয় ট্রেন আবারও সিডিউল অনুযায়ী চলাচল করবে।
এ ছাড়া আগামী ৮ এপ্রিল রাত ১২টার পর থেকে ঈদের পরের দিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কনটেইনার ও জ্বালানি তেলবাহী ট্রেন ছাড়া অন্যান্য সব গুডস ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হবে।
চাপ নেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে
ঈদযাত্রায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কা থাকলেও এখনো যানবাহনের তেমন চাপ দেখা যায়নি। শনিবার মহাসড়কে স্বস্তিতেই চলাচল করছে আঞ্চলিক ও দূরপালস্নার বাস।
এদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে যাত্রীদের বাড়তি কোনো চাপ নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঘাট কর্তৃপক্ষ। ঈদে ঘরমুখী মানুষজন নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে নৌপথ পারাপারে ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষ, জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসন নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। বৈরী আবহাওয়া না থাকলে এবারের ঈদযাত্রায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, পাটুরিয়া ফেরিঘাট হয়ে ভোগান্তি ছাড়াই গ্রামের বাড়ি ফিরতে পারবেন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষজন।
শনিবার দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, জাগীর পুলিশ ক্যাম্প, গোলড়াসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদে মহাসড়কের পাটুরিয়া ফেরিঘাটমুখী যানবাহনের তেমন চাপ নেই। কিছুক্ষণ পরপর দূরপালস্নার বাস স্বাভাবিকভাবেই চলাচল করছে। ঢাকা থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত চলাচল করা সেলফি পরিবহণে যাত্রীর চাম কম ছিল। বাসস্ট্যান্ড এলাকার সদর উপজেলা পরিষদের সামনে সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
এই রুটে চলাচলকারী সেলফি পরিবহণের যাত্রী রায়হান খান বলেন, 'ঈদের দুই-একদিন আগে গ্রামের বাড়িতে যেতে অনেক সমস্যা আর ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এজন্য পরিবার নিয়ে এখনই গ্রামের বাড়ি ভাঙ্গায় যাচ্ছি। পরিবার নিয়ে সড়কপথে বা ফেরিঘাট এলাকায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করা খুবই কষ্টের। এ জন্য ভোগান্তি এড়াতে আগেই গ্রামের বাড়িতে রওনা হয়েছি।'
গোল্ডেন পরিবহণের যাত্রী মিজানুর রহমান বলেন, 'পাটুরিয়া ফেরিঘাট হয়ে প্রতিবছরই ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে যাই। অনেক ঈদযাত্রায় ২০-২৫ ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে মহাসড়ক ও ফেরিঘাট এলাকায়। কিন্তু পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকে এই রুটে যানবাহনের চাপ অনেক কম।'
গোলড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকেন্দ বসু বলেন, 'ঈদে মানুষজন গ্রামের বাড়িতে যেতে শুরু করছে। তবে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জের অংশের যানবাহনের কোনো চাপ নেই। ঈদের দুই-একদিন আগে সাভার, আশুলিয়া, নবীনগরসহ ওই অঞ্চলের পোশাক কারখানা ছুটি হলে যানবাহনের চাপ কিছুটা বাড়বে। তবে মহাসড়কে যানজটমুক্ত রাখতে জেলা পুলিশের পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশও কাজ করবে। আশা করছি, এবারের ঈদযাত্রায় ঘরমুখী যাত্রীদের সড়কপথে তেমন ভোগান্তি হবে না।'
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ করপোরেশেন (বিআইডবিস্নটিসি) আরিচা কার্যালয়ের বাণিজ্য শাখার উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ বলেন, 'শুক্রবার ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা বাড়লেও নৌবহরে পর্যাপ্ত ফেরি থাকায় ভোগান্তি ছাড়াই পারাপার হয়েছে। শনিবার সকালের দিকে কিছু যাত্রীবাহী বাস ও ছোট গাড়ি ছিল, তবে ঘাটে আসা মাত্রই ফেরিতে ওঠে নদী পার হয়েছে। ঈদযাত্রায় যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে আরও দুটি ফেরি আমাদের বহরে এসে যোগ দেবে। আশা করছি, ভোগান্তি ছাড়াই এবার ঘরমুখী মানুষ ও যানগুলো নৌপথ পারাপার হতে পারবে।'
বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে একমুখী যান চলাচল
স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল থেকে জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে এলেঙ্গা থেকে সেতুর পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কের প্রায় ৮ কিলোমিটার সড়ক এখনো দুই লেনের। যানবাহনের চাপ বাড়লে ওই ৮ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকায় এলেঙ্গা থেকে সেতুর গোলচত্বর পর্যন্ত শুধু উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন চলতে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গ থেকে আসা যানবাহন সেতু পার হওয়ার পর ভূঞাপুর হয়ে বিকল্প সড়কে এলেঙ্গা পর্যন্ত চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ২৮ হাজার ৭১০টি যানবাহন পারাপার হয়েছে এবং মোট টোল আদায় হয়েছে দুই কোটি ৩৫ লাখ ৪৯ হাজার ৮০০ টাকা।
শনিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া পর্যন্ত ঘুরে কোথাও যানজট দেখা যায়নি। তবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যানবাহন বেশি চলাচল করতে দেখা যায়। এই মহাসড়কে চলাচলকারী বাস-মাইক্রোবাস চালকরা জানায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসার পর সাভারের বাইপাইল ও গাজীপুরের চন্দ্রায় কিছুটা যানজটে পড়তে হয়েছে। তবে বেশিক্ষণ আটকে থাকতে হয়নি। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি সময় লেগেছে।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মীর মো. সাজেদুর রহমান জানান, মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লেও কোনো যানজট নেই। স্বাভাবিকের মতো যানযাহনগুলো চলাচল করছে। ঈদের ছুটি হলে আরও যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
ট্রেনের বিলম্ব সহনীয় রাখার চেষ্টা
শনিবার ঢাকা রেলস্টেশনে ঈদযাত্রা পরিদর্শন শেষে রেলওয়ের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সরদার সাহাদাত আলী সাংবাদিকদের বলেছেন, ঈদযাত্রায় ট্রেনের বিলম্ব সহনীয় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেসব ট্রেনের সময়সূচিতে বিলম্ব আছে, সেগুলোকে প্রতি ঘণ্টায় মনিটরিং করা হচ্ছে। বিশেষ কোনো ঘটনা না ঘটলে আমাদের যে ব্যবস্থাপনা আছে, এতে সব ট্রেন সঠিক সময় চালানোর ব্যবস্থা করতে পারব।
ট্রেন ছাড়ার সময় যাত্রীদের চাপ থাকে, পথে নানা ঘটনা ঘটে, এ জন্য কিছুটা বিলম্ব হয় জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, 'সবকিছু বিবেচনা করে ট্রেন চলাচলে কিছুটা বিলম্ব হবে বলে আমরা ধরে নেই। আমাদের যে ট্রেনগুলো স্বাভাবিকভাবে চলে, এর বাইরে শেষ তিন দিন ভিড় সামাল দিতে সংখ্যাটা বাড়ানো হয়েছে। যাত্রী চাহিদা বিবেচনা করে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হচ্ছে।'
আনফিট গাড়ি নামালে কঠোর ব্যবস্থা
শনিবার গাবতলী বাস টার্মিনালের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, ঈদে আনফিট গাড়ি নামার সুযোগ নেই, কেউ যদি বের করে, সেটি জানালে তাৎক্ষণিকভাবে লোকাল প্রশাসনের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, 'গার্মেন্ট মালিকদের রিকুইজিশন দিতে বলেছি, যাতে আনফিট গাড়ি না নিয়ে বিআরটিসির বাস নিতে পারে। সুতরাং, এখানে আনফিট গাড়ি রাস্তায় নামার সুযোগ নেই। এ ছাড়া যেসব জায়গা থেকে আনফিট গাড়ি বের হওয়ার চেষ্টা করে সেগুলো বন্ধ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে আমরা নজরদারিতে রেখেছি।'
তিনি আরও বলেন, 'প্রতিবছরই আমরা এই টার্মিনালগুলো পরিদর্শন করি মানুষের ঈদযাত্রা যাতে স্বস্তিদায়ক হয়। এখানে (গাবতলী বাস টার্মিনাল) আমাদের মোবাইল কোর্ট, ভিজিলেন্স টিম, মনিটরিং টিম কাজ করছে। আমি এখানে বিভিন্ন টিকিট কাউন্টার ঘুরে দেখলাম, বেশিরভাগ জায়গায় ভাড়া কম নেয়া হচ্ছে।'
যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'আপনারা ভাড়ার চার্ট দেখে ভাড়া দেবেন, সেই তালিকা অনুযায়ী ভাড়া দেবেন। অতিরিক্ত এক টাকাও ভাড়া দেবেন না। যদি কেউ অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে টিকিট কাটার আগের আমাদের ভিজিলেন্স টিমের কাছে অভিযোগ করবেন। যদি এর পরেও কোনো সুরাহা না হয়, তাহলে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কঠোর ব্যবস্থা নেবে।'