প্রচন্ড গরমে বাড়ছে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি
প্রকাশ | ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
পাঠান সোহাগ
রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে মাঝারি তাপপ্রবাহ বইছে। এ কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তর এই চার বিভাগে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় এ তাপপ্রবাহ আরও বাড়তে পারে। এ তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি হলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। হিট স্টোকে আক্রান্তদের সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না দিতে পারলে মৃতু্য হয়। শিশু ও বৃদ্ধরা হিট স্ট্রোকে বেশি মারা যান। পাশাপাশি তরুণদের মৃতু্য ভয় থাকে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. লেলিন চৌধুরী যায়যায়দিনকে বলেন, হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মাথা ঘুরতে পারে, জ্ঞান হারিয়ে ফেললে সঙ্গে সঙ্গে ছায়ায় নিতে হবে। শরীর ঠান্ডা করতে বাতাস দিতে হবে। পাশাপাশি মাথায় পানি দিতে পারলে ভালো। যদি অবস্থা খারাপ থাকে তাহলে দ্রম্নত কাছের হাসপাতালে নিতে হবে। যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা হয়, তত ভালো। দেরি করলে অঙ্গহানি হতে পারে। এমনকি মৃতু্যও হতে পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএসএমএমইউয়ে ইমার্জেন্সি বিভাগে ১৫ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে আটজন পুরুষ, সাতজন মহিলা। তাদের একজন স্ট্রোকের রোগী থাকলেও হিট স্ট্রোকের লক্ষণ নিয়ে কোনো রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। অন্যদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের আবাসিক সার্জন ডা. মো. আলাউদ্দিন যায়যায়দিনকে বলেন, 'আমাদের এখানে এখন পর্যন্ত হিট স্ট্রোকের কোনো রোগী ভর্তি হয়নি। গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আগামী সপ্তাহে তাপমাত্রা আরও বাড়বে। গরমের মাত্রা বাড়লে হাসপাতালে রোগী আসবে। ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সি বিভাগ সবাইকে গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে। এছাড়া রাজধানীর অন্য হাসপাতালগুলোতে এখনও হিট সেট্রাকের রোগী পাওয়া যায়নি।' বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা যায়যায়দিনকে বলেন, যেসব মানুষ দীর্ঘক্ষণ অধিক তাপমাত্রায় থাকেন। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে চলে গেলে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হিট স্ট্রোক যে কারো হতে পারে। হিট স্ট্রোক হওয়ার আগে অধিক ঘাম বের হবে শরীর থেকে। এছাড়া তীব্র মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমিও হতে পারে। শারীরিক দুর্বলতা বৃদ্ধি পারে, হৃদস্পন্দন বাড়বে, দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। এমনকি প্রচুর পানি পিপাসা লাগবে। গলা শুকিয়ে আসবে ও প্রস্রাব হলুদ হবে। কথা জড়িয়ে যাওয়া এমনকি প্রলাপ বকতে থাকা, জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মতো লক্ষণ প্রকাশ পেলে ছায়াযুক্ত শীতল স্থানে নিয়ে মাথায় কিছুক্ষণ ঠান্ডা পানি দিয়ে দ্রম্নত হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশু ও ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক বৃদ্ধরা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকেন। যাদের হার্ট ও ফুসফুসের রোগ আছে তাদের মৃতু্য ঝুঁকি বেশি। তাছাড়া ৩০ থেকে ৪৫ বছর বয়সের মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। হিট স্ট্রোক থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে ছায়াযুক্ত শীতল জায়গায় থেকে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করতে হবে। থাকার ঘরের আদ্রতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পাশাপাশি ঘন ঘন তরল পানি, স্যালাইন যুক্ত পানিসহ যেসব ফলে পানির পরিমাণ বেশি সেসব ফল খেলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমবে।
ডা. লেলিন চৌধুরী যায়যায়দিনকে বলেন, আগামী এক থেকে দেড় মাস যদি সতর্কতার সঙ্গে চলা যায় তাহলে হিট স্ট্রোক এড়ানো যাবে। তবে বাড়ির বাহিরে বের হলে পানির বোতল ও ছাতা সঙ্গে রাখতে হবে। কেউ যদি রাস্তায় হিট স্ট্রোকের শিকার হন তাহলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এর আগে গত বুধবার আবহাওয়া অধিদপ্তর রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় এ তাপপ্রবাহের মাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা জানায় চলতি মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস অনুযায়ী ছয়টির মতো তাপপ্রবাহ হতে পারে। এর মধ্যে একটি হতে পারে অতি তীব্র। এতে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে। এছাড়া গত কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। রাজধানীর তাপমাত্রাও ৩৮ ডিগ্রিতে পৌঁছে গেছে।
রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। মঙ্গলবার ঈশ্বরদী ও মংলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত মৃদু ও ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বিবেচনা করা হয়।