রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পবিত্র লাইলাতুল কদর আজ

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
পবিত্র লাইলাতুল কদর আজ

আজ রমজানুল মুবারকের ২৬ তারিখ। আজকের রাত সাধারণভাবে লাইলাতুলকদর হিসেবে পরিচিত। আজ মসজিদে মসজিদে মুসলিস্নরা সারা রাত জেগে আলস্নাহর ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থাকবেন। রোজা পালনকারী ঈমানদাররা চোখের পানি ফেলে কায়মনোবাক্যে রাব্বুল আলামিনের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। সারা রাত নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, তওবাহ-তাহলিল, জিকির-আসগার ও দ্বীনি আলোচনায় মশগুল থাকবেন।

রমজান মাস কোরআন নাজিলের মাস। শবেকদর কোরআন নাজিলের রাত। এ রাতেই প্রথম পবিত্র মক্কা মুকাররমার হেরা পর্বতের গুহায় মহান আলস্নাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে ফেরেশতাদের সরদার হজরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে বিশ্বনবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর প্রতি মহাগ্রন্থ আল কোরআন অবতীর্ণ হয়। যার কারণে একটি সাধারণ রাত 'লাইলাতুলকদর' বা 'শবেকদর' রজনির সম্মানে বিভূষিত হয়েছে।

কোরআন নাজিল সম্পর্কে আলস্নাহ তাআলা বলেন, 'রমজান মাস! যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে মানবের দিশারিরূপে ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শন। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫)। মহান আলস্নাহ রাব্বুল আলামিন আরও বলেন, 'উজ্জ্বল কিতাবের শপথ! নিশ্চয় আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি ছিলাম সতর্ককারী, যাতে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার পক্ষ থেকে, নিশ্চয় আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি। এ হলো আপনার প্রভুর দয়া, নিশ্চয় তিনি সব শোনেন ও সব জানেন। তিনি নভোমন্ডল-ভূমন্ডল ও এ উভয়ের মাঝে যা আছে সে সবের রব। যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাস কর; তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি জীবন ও মৃতু্য দেন, তিনিইতোমাদের পরওয়ারদিগার আর তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও। তবু তারা সংশয়ে রঙ্গ করে। তবে অপেক্ষা কর সে দিনের, যেদিন আকাশ সুস্পষ্টভাবে ধূম্রাচ্ছন্ন হবে। (সুরা-৪৪ দুখান, আয়াত: ১-১০)।

শবেকদর ও কোরআন অবতরণ এবং এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে দয়াময় আলস্নাহ কোরআনে 'সুরা কদর' নামে একটি স্বতন্ত্র সুরা নাজিল করেছেন। তাতে বলেছেন, 'নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ কদর রজনীতে। আপনি কি জানেন, মহিমাময় কদর রজনি কী? মহিমান্বিত কদর রজনি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা হজরত জিবরাইল (আ.) সমভিব্যবহারে অবতরণ করেন; তাদের প্রভু মহান আলস্নাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষার উদয় পর্যন্ত। (সুরা-৯৭ কদর, আয়াত: ১-৫)।

শবেকদরের রাতের ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ রাত গুনাহ মাফের রাত। হাদিসে এসেছে- 'যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান সহকারে ও আলস্নাহর কাছ থেকে বড় শুভফল লাভের আশায় ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, তার পেছনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে' (বুখারি ও মুসলিম)। এ রাতের কল্যাণ থেকে একমাত্র হতভাগ্য লোক ছাড়া আর কেউ বঞ্চিত হয় না (ইবনে মাজাহ ও মিশকাত)।

কিয়ামুল লাইল: 'কিয়ামুল লাইল' অর্থ হলো রাত্রি জাগরণ। মহান আলস্নাহর জন্য আরামের ঘুম স্বেচ্ছায় হারাম করে রাত জেগে ইবাদত করা আলস্নাহর প্রিয় বান্দাহদের একটি গুণ। মহান আলস্নাহ তার প্রিয় বান্দাহদের পরিচয় দিয়েছেন এভাবে- 'তারা রাত্রিযাপন করে রবের উদ্দেশে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে থেকে' (সুরা ফুরকান : ৬৪)।

'তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে পৃথক থাকে (অর্থাৎ তারা শয্যা গ্রহণ করে না; বরং এবাদতে মশগুল থাকে)। তারা গজবের ভয়ে এবং রহমতের আশায় তাদের রবকে ডাকতে থাকে এবং আমি যা দিয়েছি তা থেকে দান করে থাকে। কেউ জানে না। তাদের আমালের পুরস্কারস্বরূপ (আখিরাতে) তাদের জন্য কী জিনিস গোপনে রাখা হয়েছে' (সুরা সিজদা : ১৬-১৭)।

মুসনাদে আহমদ গ্রন্থে হজরত ওবায়দা ইবনে সামেত বর্ণিত হাসিসে উদ্ধৃত হয়েছে- 'নবী করিম (সা.) বলেছেন- 'কদরের রাত রমজান মাসের শেষ ১০ রাতে রয়েছে। যে ব্যক্তি এর শুভফল লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, আলস্নাহ তার আগের ও পেছনের গুনাহ মাফ করে দেবেন।'

রাসুল (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিন মসজিদে ইতেকাফে থাকতেন এবং ইবাদতে গভীর মনোনিবেশ করতেন। কাজেই কোনো একটা বিশেষ রাতকে নির্দিষ্ট না করে হাদিস অনুযায়ী অন্তত রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য লাভের আশায় ইবাদতে মশগুল হওয়া জরুরি। এতে অবহেলা করলে হাদিসের ভাষায় হতভাগ্য হিসেবে চিহ্নিত হতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে