এপ্রিলের শুরুতেই তীব্র দাবদাহ শুরু হয়েছে যশোর অঞ্চলে। দাবদাহে গলে যাচ্ছে সড়ক-মহাসড়কের বিটুমিন (পিচ)। এতে বিপাকে পড়ছেন সড়কে চলাচলকারীরা; ঝুঁকি বাড়ছে দুর্ঘটনার। মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহে পিচ গলে যাওয়ায় সড়কের কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যশোর-নড়াইল সড়কে এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এদিকে রাজশাহীতে তাপমাত্রার পারদ আরও বেড়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
যশোর আবহাওয়া অফিস জানায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা যশোরে তাপপ্রবাহ চলছে। গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী। জেলায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠছে। তবে বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকায় গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। বুধবার যশোরে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস; আর বৃহস্পতিবার দুপুরে তাপমাত্রা প্রায় ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে। বাতাসের আর্দ্রতা রয়েছে ৫০ শতাংশ। এই মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপমাত্রায় গলে যাচ্ছে যশোর-নড়াইল মহাসড়কের বিটুমিন (পিচ)। স্থানে স্থানে গাড়ির চাকা বা পথচারীর স্যান্ডেল জুতার সঙ্গেও পিচ উঠেছে যাচ্ছে।
এদিকে, বিটুমিন গলে পিচ উঠে যাওয়ায় সড়ক সুরক্ষার জন্য মাঠে নেমেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। তারা গলে যাওয়া পিচের ওপর বালি ও কুচি পাথর ছড়াচ্ছে, যাতে গলে যাওয়া পিচ আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে।
যশোর-নড়াইল সড়কের ঝুমঝুমপুর বাজারে রিকশা চালক রফিক হোসেন জানান, 'রোদ গরমে দুপুর থেকে রাস্তার পিচ গলতে শুরু করে। দুপুর গড়ানোর পর রাস্তার পিচ যেনো কাদায় পরিণত হয়। ফলে রিকশার চাকা রাস্তায় আটকে যায়। এতে তাদের যেমন এক্সিডেন্টের ঝুঁকি বাড়ে, তেমনি রাস্তারও এবড়ো-থেবড়ো হয়ে যাচ্ছে।'
ঝুমঝুমপুর বাজারের ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম জানান, 'রাস্তা পারাপার হতে গেলে জুতা স্যান্ডেল পিচে আটকে যাচ্ছে। দুই একজন পিচ থেকে তুলতে না পেরে স্যান্ডেল রেখেই চলে যাচ্ছেন। গাড়ির চাকার চাপায় তা রাস্তার পিচের
সঙ্গেই আটকে থাকছে।'
শুধু যশোর-নড়াইলই নয় যশোর-ঝিনাইদহ ও যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের কিছু কিছু স্থানেও একই অবস্থার খবর পাওয়া গেছে। তবে এই মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপমাত্রায় বিটুমিন গলে যাওয়ায় সড়কের কাজের মান নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তারা সাধারণত সড়কে যে পিচ ব্যবহার করেন, তা ৬০-৭০ গ্রেডের। এর গলনাঙ্ক ৪৮-৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে এই পিচ গলার কথা। কিন্তু তার অনেক আগেই পিচ গলে যাচ্ছে।
সওজ সংশ্লিষ্ট সূত্র পিচ গলার কারণ হিসেবে দাবি করেছে, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির নিচে থাকলেও বাতাসের আর্দ্রতার কারণে অনুভূতির পরিমাণ আরও কয়েক ডিগ্রি বেশি। সড়কের পিচের ওপর এই তাপমাত্রা আরও প্রায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকে। আর কালো হওয়ায় এই পিচ সূর্যের তাপও শোষণ করে বেশি। এ ছাড়া সড়কে চাকার ঘর্ষণের ফলে উৎপাদিত তাপও এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় পিচ গলে যেতে পারে। তবে এর বাইরে সড়কের কাজ মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া জানান, যশোর-নড়াইল সড়কের যেসব স্থানে বিটুমিনের পরিমাণ বেশি পড়েছে; প্রচন্ড গরমে সেসব জায়গা গলে যাচ্ছে। এ জন্য সড়কের গলে যাওয়া স্থানগুলোতে বালি ও নুড়িপাথর দেওয়া হচ্ছে। যাতে গলে যাওয়া পিচ পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে।
এদিকে, রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের থার্মোমিটারের পারদ বৃহস্পতিবার ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছে। আর এতে নাকাল হয়ে পড়েছে নগরজীবন। দুপুরের পর প্রধান প্রধান সড়কও ফাঁকা হয়ে যায়। খেটেখাওয়া দিনমজুররা এই আগুনমুখো আবহাওয়ার মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবার ও পরিজনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। ঘরে বাইরে কোথাও এক রত্তি স্বস্তি নেই। প্রতিটি ভবনের ট্যাপকল দিয়েই বের হচ্ছে ফুটন্ত পানি। আর শহরের টিনশেড বাড়িগুলো যেন পরিণত হয়েছে অগ্নিকুন্ডে। ভেতরে থাকা মানুষগুলো তাই যারপরনাই দুর্ভোগে পড়েছেন।
গরমের তীব্রতা অব্যাহত থাকায় রাজশাহীতে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে হিট স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগও। আর দুপুরের পর বাতাসের আদ্রতা কমে যাচ্ছে। আদ্রতা কমার কারণে শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে। গরমেও ফাটছে ঠোঁট এবং হাত-পা।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের উচ্চ পর্যবেক্ষক মো. গাওসুজ্জামান জানান, রাজশাহীতে এই মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বিকাল ৩টায় রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগে ১ এপ্রিল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন ৩১ মার্চ ছিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর আবার একদিনের ব্যবধানে ফের চড়লো তাপমাত্রার পারদ।
জানতে চাইলে রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইনচার্জ) মো. রহিদুল ইসলাম বলেন, 'দুপুরে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমেছে বাতাসের আর্দ্রতাও। বিকাল ৩টায় রাজশাহীতে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৩ শতাংশ এবং ভোর ৬টায় ছিল ১০০ শতাংশ। আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে রাজশাহীর ওপর দিয়ে কালবৈশাখী বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।'
টানা সময় ধরে ভারী বৃষ্টি ছাড়া এই তাপমাত্রা কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। উল্টো আগামী কয়েকদিনে রাজশাহীর সর্বোচ্চ এই তাপমাত্রা বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।