মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির (এএ) সংঘাত কিছুতেই থামছে না। প্রায় প্রতিদিনই গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে সীমান্তবর্তী অঞ্চল। এতে আতঙ্ক কাটছে না সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত স্থানীয়দের।
বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত টেকনাফ উপজেলা হ্নীলা, পৌরসভার ও সাবরাং-এর বিপরীতে ব্যাপক গোলাগুলি ও গোলার বিকট শব্দ হয়। এতে বাংলাদেশ সীমান্ত কেঁপে ওঠে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ফরিদ আলম জানান, টেকনাফের হ্নীলা ইউপির লেদা ও চৌধুরীপাড়া সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একাধিক ঘাঁটি রয়েছে।
এসব ঘাঁটিতে উড়ছে মিয়ানমারের পতাকা। অবস্থান শক্ত করেছে সীমান্তরক্ষী
বাহিনী বিজিপি। তবে এসব ঘাঁটি দখলে নিতে আরাকান আর্মি কৌশল পাল্টে রাতে আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছে। তার পাল্টা জবাবও দিচ্ছে বিজিপি। মিয়ানমারের চলমান ওই সংঘাতের প্রভাব পড়ছে এপারের সীমান্তের বাসিন্দাদের ওপর।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উঁচু পাহাড়ের ওপর দিয়ে আসার সময় সীমান্তের দিকে তাকালে আগুনের দলা আর ধোঁয়ার কুন্ডলি দেখা যায়। মাঝে মধ্যে বিকট শব্দ হয়। বিস্ফোরণের শব্দে বসতঘরেও থাকা যায় না। বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি খুবই আতঙ্কের।
স্থানীয় জেলেরা জানান, মিয়ানমারের সংঘাতের কারণে বন্ধ রয়েছে নাফ নদীতে মাছ শিকার। যার কারণে ঘাটে নোঙর করা রয়েছে অসংখ্য ট্রলার। দীর্ঘ সময় মাছ শিকারে যেতে না পেরে নষ্ট হচ্ছে ট্রলারের ইঞ্জিনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। আর চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে নাফ নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা কয়েক হাজার জেলে।
জেলে গুরা মিয়া বলেন, 'ট্রলার নিয়ে নদীর ওদিকে যাওয়া যাচ্ছে না। সেখানে প্রচুর গোলাগুলি হচ্ছে। কাজ বন্ধ থাকায় উপোস থাকার অবস্থা আমাদের। পাশাপাশি পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে পরিবার পরিজনের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছি।'
নাফ নদীতে মাছ শিকারে না গেলেও জীবিকার তাগিদে অনেকে জেলে ছুটে যাচ্ছে সীমান্তের নিকটবর্তী মৎস্য ঘের, ক্ষেত খামার ও লবণ মাঠে। তাদের নির্ভয় দেওয়া হচ্ছে বলে জানান টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী।
তিনি বলেন, 'বৃহস্পতিবার রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি ও মর্টারশেলের গোলার বিকট শব্দ ভেসে আসে সীমান্তের এপারে। হ্নীলার ফুলের ডেইল এবং ওয়াবরাংয়ের ঠিক বিপরীত এলাকায় গোলাগুলি ও মর্টারশেলের গোলার বিকট শব্দ হয়। এপারের সীমান্তের অনেক বাসিন্দা রাতে ঘুমাতে পারেনি গুলি ও গোলার বিকট শব্দে।'
সীমান্তে গোলাগুলি, মাদক পাচার ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কায় নাফ নদীতে বন্ধ রয়েছে মাছ শিকার। যার কারণে বিপাকে পড়েছেন ১০ হাজারের বেশি জেলে পরিবার।
এ বিষয়ে টেকনাফ (২ বিজিবি) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, 'গোলাগুলির বিষয়গুলো তাদের অভ্যন্তরীণ সংঘাত। তবে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সীমান্ত দিয়ে যাতে মাদক ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না ঘটে, সে ব্যাপারে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে।'