স্বাগত মাহে রমজান
সুদ অর্থ-সম্পদের বরকত নষ্ট করে
প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
নশ্বর পৃথিবীর মোহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অবিনশ্বর আখেরাতের প্রতি ধাবিত করার মাস রমজানুল মুবারকের আজ পঞ্চবিংশ দিবস। আর মাত্র কয়েকদিন পর রমজান আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেবে। নিয়ামুবর্তিতার এ বিশেষ মাস থেকে বের হয়ে আমরা আবারও আমাদের গতানুগতিক জীবনে ফিরে যাবে। তাকওয়ার দাবি, জীবন পরিচালনা, আচরণ ও লেনদেনে সাবধানতা অবলম্বন, সমাজ ও সামষ্টিক কর্মকান্ডে শুদ্ধতা ও স্বচ্ছতা রক্ষা, দায়িত্বের অনুভূতি এবং সব কাজে আলস্নাহকে স্মরণ রাখার যে শিক্ষা নিয়ে রমজান মাস আগমন করেছিল, রমজান-উত্তর জীবনেও তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। বিশেষ করে জেনে না জেনে যারা সুদ গ্রহণ করেছে, তারা এ মাসের মহান শিক্ষা থেকে সে পথ থেকে চিরস্থায়ীভাবে সরে আসতে সচেষ্ট হবে।
কুরআন ও হাদিসে কঠিনভাবে সুদকে হারাম করা হয়েছে। সুদের যাবতীয় প্রকার-প্রকৃতি ও যে নামেই ব্যবহার করা হোক তা নিষিদ্ধ। আলস্নাহ? বলেন, 'হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ খেয়ো না। আর আলস্নাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো। এবং তোমরা সেই আগুন থেকে বেঁচে থাক, যা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তোমরা আনুগত্য কর আলস্নাহ ও রাসূলের, যাতে তোমাদেরকে দয়া করা হয়।' (সূরা আল ইমরান ১৩০-১৩২)
আলস্নাহ আরও বলেন, 'মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে বলে তোমরা সুদ হিসেবে যা প্রদান করে থাক আলস্নাহর কাছে তা ধন সম্পদ বৃদ্ধি করে না।
(সূরা রূম-৩৯) বরং সুদ অর্থ-সম্পদের বরকতকে মিটিয়ে দেয়, আলস্নাহর ক্রোধ বাড়িয়ে দেয় এবং সুদের কারণে আমল কবুল হয় না বলে হাদিসে সুস্পষ্টভাবে উলেস্নখ করা হয়েছে।
আলস্নাহ বলেন, যারা সুদ খায়, কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে এমন লোকের মতো, যার ওপর শয়তান আছর করে তাকে মোহাবিষ্ট করে দিয়েছে। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে : ক্রয়-বিক্রয়ও তো সুদ নেওয়ার মতোই। অথচ আলস্নাহ তা'আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আলস্নাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা বাক্বারা ২৭৫-২৭৬)
এদিকে সুদকে আলস্নাহ তা'আলা সুস্পষ্টভাবে হারাম করলেও অনেকেই নানা কৌশলে তা হালাল বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। যা শরিয়ত অনুযায়ী অত্যন্ত গোনাহের। এটি প্রকাশ্যে আলস্নাহ এবং তাঁর রাসূলের বিরোধিতা শামিল। আলস্নাহ তা'আলা বলেন : 'যারা তাঁর নির্দেশের বিরোধিতা করে তারা যেন সতর্ক হয়ে যায় যে, তারা ফেতনায় পতিত হবে অথবা তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সম্মুখীন হবে। (সূরা নূর-৩৬)
রাসূলুলস্নাহ? (সা.) থেকে সহিহ্? সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে তিনি বলেন, 'নিঃসন্দেহে মহান আলস্নাহ? পবিত্র তিনি পবিত্রতা ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করেন না। আলস্নাহ্ তা'আলা রাসূলদের (আ.) প্রতি যা নির্দেশ পাঠিয়েছেন, মুমিনদের প্রতিও তাই পাঠিয়েছেন। তিনি এরশাদ করেন : 'হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার্য গ্রহণ কর এবং সৎ কর্ম কর।' (সুরা মু'মেনূন : ৫১)
তিনি মুমিনদেরকে লক্ষ্য করে নির্দেশ দেন : 'হে ঈমানদারগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু সামগ্রী থেকে আহার্য গ্রহণ কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুজি হিসেবে দান করেছি।
অতঃপর রাসূলুলস্নাহ? (সা.) সেই ব্যক্তির কথা উলেস্নখ করেন, যে দীর্ঘ সফর করে এলায়িত কেশ ও ধুলায়মান পোশাক নিয়ে অত্যন্ত ব্যাকুলভাবে আকাশের দিকে দু'হাত তুলে ডাকতে থাকে, হে আমার প্রতিপালক! হে রব!! অথচ সে ব্যক্তির পানাহার সামগ্রী হারাম উপার্জনের, পোশাক-পরিচ্ছেদ হারাম পয়সায় সংগৃহীত, এমতাবস্থায় কী করে তার দোয়া কবুল হতে পারে? (সহিহ্? মুসলিম)
কিয়ামতের দিন হাশরের মাঠে আলস্নাহ তা'আলা তাকে তার সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। কীভাবে সম্পদ উপার্জন করেছে? আর কোথায় তা খরচ করেছে? নবী (সা.) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, 'কিয়ামতের দিন কোনো মানুষের পা টলবে না যতক্ষণ সে চারটি প্রশ্নের উত্তর না দিবে। প্রশ্ন করা হবে, তার যৌবনকাল সম্পর্কে কোন কাজের মাঝে এ বয়স অতিবাহিত করেছে? তার জীবন সম্পর্কে কীভাবে তার আয়ু শেষ করেছে? তার সম্পদ সম্পর্কে কীভাবে তা উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে? এবং তার জ্ঞান সম্পর্কে কী আমল করেছে সেই জ্ঞান দ্বারা? (তিরমিযি)
আলস্নাহ আরও বলেন, 'হে ঈমানদারগণ! তোমরা আলস্নাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ করো, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। অতঃপর তোমরা যদি সুদ না ছাড়, তবে আলস্নাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে নিজেদের মূলধন ফেরত পেয়ে যাবে। তোমরা কারো ওপর অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৭৮-২৭৯)
নবী (সা.) বলেন, তোমরা ধ্বংসকারী সাতটি কাজ থেকে দূরে থাক। এগুলো হচ্ছে- আলস্নাহর সঙ্গে শিরক, জাদু, কোনো অধিকার ছাড়া কাউকে খুন করা, সুদ খাওয়া, ইয়াতিমের সম্পদ ভক্ষণ করা, যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা, বিদু্যষী সতী-সাধী মুমিন নারীদেরকে অপবাদ প্রদান করা। (বুখারি ও মুসলিম)
ছহিহ মুসলিমে জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুলস্নাহ (সা.) অভিশাপ করেছেন সুদখোরকে, সুদ দাতাকে, সুদের লিখককে এবং তার দুই সাক্ষীকে। তিনি বলেন, পাপের ক্ষেত্রে এদের সকলেই এক সমান।
\হ