চাকরি হারাবেন একীভূত দুর্বল ব্যাংকের এমডি-ডিএমডি
নীতিমালা জারি করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
ব্যাংকিং খাতে এখন আলোচিত বিষয় মার্জার বা একীভূতকরণ ইসু্য। ইতোমধ্যে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংক একীভূত হওয়ার জন্য সমঝোতা চুক্তিও হয়ে গেছে। কিন্তু এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো নীতিমালা ছিল না। এই প্রথমবারের মতো ব্যাংক একীভূতকরণের নীতিমালা জারি করল বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমবারের মতো ব্যাংক একীভূতকরণের জন্য নীতিমালা জারি করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা সার্কুলার অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংক অধিগ্রহণকারী ব্যাংককে নীতি সহায়তা দেবে। এতে বলা হয়, প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের ক্ষেত্রে নীতি-সহায়তা দেবে। সেখানে একীভূতকরণের ফলে কী হবে তা স্পষ্ট করা হয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, একীভূত হওয়া দুর্বল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) চাকরি হারাবেন। এমনই শর্ত যুক্ত করে দিয়েছে ব্যাংক একীভূতকরণ নীতমালায়। এ ছাড়া একীভূত হওয়া দুই ব্যাংকের মধ্যে খারাপ অবস্থায় থাকা ব্যাংকের পরিচালক আগামী পাঁচ বছর অন্য কোনো ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না।
নীতিমালার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে চারটি সংযুক্তি দেওয়া হয়েছে। নীতিমালার আলোকে, খারাপ অবস্থায় থাকা ব্যাংকগুলো নিজ থেকে একীভূত না হলে বাধ্যতামূলকভাবে একীভূতকরণ করা হবে। একীভূতকরণের আগে দুই ব্যাংকের মধ্যে একটি সমঝোতা সই করতে হবে। এরপর বিস্তারিত পরিকল্পনা বিশেষ করে আমানতকারী, সকল পাওনাদার ও বিনিয়োগকারীর অর্থ ফেরতের পরিকল্পনা জমা দিতে হবে।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক বহিঃনিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক চিত্র বের করবে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে সর্বশেষ আদালতের কাছে একীভূতকরণের আবেদন করতে হবে।
এদিকে কোনো দুর্বল বা সংকটাপন্ন ব্যাংক অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হলে, হস্তান্তর-গ্রহীতা ব্যাংকের মূলধন, তারল্য, খেলাপি ঋণ ইত্যাদি আর্থিক সূচক প্রভাবিত হতে পারে বলে উলেস্নখ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংকের কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখা এবং জনস্বার্থে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত নীতি-সহায়তা দেবে।
এক. নূ্যনতম মূলধন সংরক্ষণ, সিআরআর (ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও), এসএলআর (স্যাচুটরি লিকু্যইডিটি রেশিও), এলসিআর (লিকু্যইডিটি কাভারেজ রেশিও), এনএসএফআর (নেট স্ট্যাবল ফান্ডিং রেশিও) সংরক্ষণে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট অংশ ছাড় দেওয়া হবে।
দুই. হস্তান্তরকারী ব্যাংকের আয়ের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকের পুঞ্জীভূত ক্ষতি সামঞ্জস্য করতে হস্তান্তরকারী ব্যাংকের এ ক্ষতিকে 'গুডউইল'-এ রূপান্তর করে তা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে হস্তান্তর-গ্রহীতা ব্যাংকের আয় থেকে সমন্বয় বা পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হবে।
তিন. বিদ্যমান সুবিধার আওতায় অগ্রাধিকারভিত্তিতে তারল্য সুবিধা প্রদান করা হবে। চার. ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি বন্ড ক্রয়ের মাধ্যমে নগদ সহায়তা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবং পাঁচ. মূলধন বৃদ্ধির জন্য শেয়ার, পারপেচু্যয়াল বন্ড এবং সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড ইসু্যতে সহায়তা দেওয়া হবে।
এদিকে মার্জার নীতিমালা না থাকার কারণে অনেক ব্যাংক বুঝতে পারছিল না কি করণীয়। তাই অনেক ব্যাংক এগিয়ে আসছে না। মৌখিকভাবে জানিয়েছিল, দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালকরা ভাল ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবে না। দুর্বল ব্যাংকের নামের অংশও থাকবে না। এতে করে অনেক ব্যাংকই স্বেচ্ছায় এই প্রক্রিয়ায় একীভূত হতে চাইবে না। কারণ এতে পরিচালকদের কর্তৃত্ব খর্ব হবে। এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ও পদ্মা ব্যাংকের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান নাফিস শারাফাতের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আগে থেকেই রয়েছে। ফলে এই ব্যাংকটি সহজেই রাজী হয়েছে। কিন্তু বাকি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে বিষয়টি এত সহজ হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া সাম্প্রতি পদ্মা ব্যাংক (ফার্মারস ব্যাংক) ও এক্সিম ব্যাংকের একীভূত হওয়ার খবরের পর সাধারণ একাউন্টধারীদের মধ্যে নানান প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই প্রথম মার্জার নীতিমালা প্রকাশ্যে আনলো।