অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধার
বান্দরবানে এবার শুরু হচ্ছে যৌথ অভিযান থানচি বাজারে গোলাগুলি কেএনএফের সঙ্গে শান্তি আলোচনা স্থগিত
প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির সময় অপহৃত ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে উদ্ধার করার কথা জানিয়েছের্ যাব। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়র্ যাবের পাঠানো এক ক্ষুদে বার্তায় বলা হয়, র্'যাবের মধ্যস্থতায় সোনালী ব্যাংকের বান্দরবানের রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে উদ্ধার করা হয়েছে।'
তাকে কখন, কোথা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে জানতে চাইলের্ যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, 'সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রুমা বাজারের কাছ থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা সমঝোতার ভিত্তিতে তাকে উদ্ধার করি।'
তবে সমঝোতার বিষয়টি স্পষ্ট করেননি এর্ যাব কর্মকর্তা। অপহরণকারীদের মুক্তিপণ দিতে হয়েছে কি না জানতে চাইলে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, 'এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।'
রুমার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও দিদারুল আলম রাত ১০টায় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'নেজাম উদ্দীন ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। এখন বলার মতো এটুকুই।'
এদিকে ভরদুপুরে বান্দরবানের থানচি উপজেলা সদরে দুটি ব্যাংকে হামলা ও ডাকাতির একদিন পরেই ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে গোলাগুলি শুরু হয় বলে সেখানে অবস্থানরত একজন পর্যটক জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'রাতে আমরা তিনজন একটি হোটেলে খেতে বসেছিলাম। ঠিত তখনি বৃষ্টির মতো গোলাগুলি শুরু হয়। আমরা খাবার ফেলে একটি দোকানে এসে লাইট বন্ধ করে বসে আছি। প্রচুর গুলি হচ্ছে। আমাদের সঙ্গে স্থানীয় আরও কয়েকজনও এই ঘরে আটকা পড়েছেন।'
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, 'থানচিতে গোলাগুলির বিষয়টি আমরা জেনেছি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আমরা কাজ করছি।'
সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায়
অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম।
বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, 'রুমার ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজার সুস্থ আছেন, তার সঙ্গে কথা হয়েছে।'
এর আগে, সকালে সোনালী ব্যাংক রুমা শাখার ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার নারায়ণ দাশ বলেছিলেন, 'ব্যাংক ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকে অপহরণের পর অপহরণকারীরা আর যোগাযোগ করেনি। এখনো কেউ মুক্তিপণও চায়নি। তিনি কেমন আছে তাও আমরা জানি না।'
অন্য দিকে বান্দরবানে তিনটি ব্যাংকে ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযুক্ত সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) এমন ঘটনাকে শুধু হামলা হিসেবেই দেখা হচ্ছে না, এর মধ্য দিয়ে তারা বড় ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির বার্তা দিচ্ছে বলে মনে করছেন প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য অপরাধীদের দমনে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালনা করা হবে যৌথ অভিযান। পার্বত্য এলাকার নিরাপত্তা বিশ্লেষকরাও মনে করেন- অপরাধ দমনে কঠোর যৌথ অভিযান জরুরি হয়ে পড়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে কেএনএফের সঙ্গে শান্তি আলোচনা বন্ধ ঘোষণা করেছে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, ব্যাংক থেকে টাকা লুট হওয়ার সময় পুলিশের একটি দল বাধা দিলে অস্ত্রধারীরা ব্যাংক কর্মকর্তা, ২ বিজিবি সদস্য, ৯ জন পুলিশ সদস্য ও ব্যাংকে আসা লোকজনসহ প্রায় ৪০ জনকে জিম্মি করে। পুলিশ গুলি চালালে জিম্মিদের গুলি করার হুমকি দেওয়া হয়। ঘটনার পর জেলার তিন উপজেলা রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়িতে সব ব্যাংকের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব এলাকায় বিরাজ করছে আতঙ্ক। বিশেষ করে থানচি বাজারে তেমন কোনো মানুষজন বের হচ্ছেন না। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অন্তত ৮ থেকে ৯টি মামলা দায়ের হতে পারে।
মঙ্গল ও বুধবার বান্দরবানের রুমা এবং থানচি উপজেলার কৃষি ও সোনালী ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা চালায় সশস্ত্র লোকজন। তারা ব্যাংক থেকে টাকা লুট করে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করে এবং এক ব্যাংক ব্যবস্থাপককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। লুট করে বেশ কিছু অস্ত্র ও গুলি।
রুমায় সোনালী ব্যাংকে হামলা-ডাকাতি এবং ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে অপহরণের ঘটনাটি মঙ্গলবার রাতে প্রথম ভাগে ঘটলেও; থানচিতে কৃষি ও সোনালী ব্যাংকে হামলা হয়েছে ভরদুপুরে। দুটি ঘটনাতেই পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ এর নাম এসেছে; যারা পাহাড়ে 'বম পার্টি' নামে পরিচিত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে থানচি উপজেলায় টাকা লুট হওয়া দুটি? ব্যাংকের শাখা পরিদর্শন শেষে চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের উপমহাপরিদর্শক নূরে আলম মিনা সাংবাদিকদের বলেন, 'লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধীদের দমনে যৌথ অভিযান হবে। রুমা ও থানচিতে ব্যাংকের টাকা লুট, পুলিশের ওপর হামলাসহ নানা অভিযোগে ৮ থেকে ৯টি মামলা হতে পারে। মামলার যাবতীয় প্রস্তুতি চলছে।'
কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের নাম উলেস্নখ না করে ডিআইজি বলেন, 'ফান্ড সংগ্রহের জন্য দুটি ব্যাংকে হামলা হয়েছে। রুমায় বেশি টাকা রয়েছে, তাই ভল্ট ভেঙে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর থানচিতে ঘটনার দিন হাটবার থাকায় ব্যাংকে লেনদেন বেশি হবে। তাই সেখানে ডাকাতি হয়েছে।'
লুট হওয়া অস্ত্র অবশ্যই উদ্ধার করা হবে বলে জানান ডিআইজি নূরে আলম মিনা।
পার্বত্য এলাকার পর্যবেক্ষক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব) এমদাদুল ইসলামও সন্ত্রাসীদের দমনে যৌথ অভিযান পরিচালনা দরকার বলে মনে করেন। একটি সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেছেন, 'অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ও যৌথ অভিযান চালাতে হবে। এমন শাস্তি দিতে হবে, যার দৃষ্টান্ত দেখে আর কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এ ধরনের অপরাধ করতে সাহস না করে।'
কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় ব্যাংকে ডাকাতি, অস্ত্র লুট ও ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তাদের বিচার হবে, কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কেন হঠাৎ তারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে, তা আমাদের জানা ছিল না। তবে যে উদ্দেশ্যেই তারা এসব করুক না কেন, আমরা তাদের কাউকে ছাড় দেব না। আর এমন কিছু ঘটেনি, যাতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হবে। আমরা দেখছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি। আগে সবকিছু জেনে নিচ্ছি, তারপর সব ধরনের ব্যবস্থা নেব। এর পেছনে কারা, তাদের কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, কোনো ধরনের নাশকতা কিংবা অন্য কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, সেগুলো দেখে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
কোনো কিছুতেই ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এসবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যেভাবে তথ্য দিচ্ছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেভাবেই কাজ করছে। পহেলা বৈশাখ কিংবা অন্য কিছু নিয়ে নাশকতার কোনো তথ্য আমাদের কাছে এখনো আসেনি। না এলেও আমাদের যে সতর্কতা, তা নেওয়া হচ্ছে।
বান্দরবানের ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা হামলার কারণ বের করব। আর যারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর পেছনে ভূ-রাজনৈতিক কিছু আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। অনেক কিছু হতে পারে। তবে তথ্য না জেনে কিছু বলতে চাচ্ছি না। আবার খুব অল্প সময়ের মধ্যে কয়েকটি বড় বড় শিল্পকারখানায় আগুন ধরার পেছনে কোনো রহস্য আছে কি না, তা ও খতিয়ে দেখা হবে।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, কুকি-চিনের আস্তানার্ যাব ও আর্মি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। পরে আমাদের সীমানা পার হয়ে তারা ভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়। সেখানেই তারা অবস্থান করছিল। এখন তারা কোথা থেকে এসেছে, কীভাবে এসেছে! মাঝে মধ্যে তাদের প্রতিনিধিরা আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা শান্তি চান বলেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে আক্রমণ ও ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা আমাদের কাছে নতুন কিছু মনে হচ্ছে। তবে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেএনএফের সঙ্গে শান্তি আলোচনা স্থগিত
বান্দরবানের নতুন সশস্ত্রগোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে সব ধরনের আলোচনা বন্ধ ঘোষণা করেছে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। কেএনএফ অপহৃত ব্যাংক কর্মকর্তাকে নিঃশর্ত মুক্তি, লুট করা টাকা ও অস্ত্র ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হলে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটিও বিলুপ্ত ঘোষণা হতে পারে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্যরা এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন।
এর আগে বুধবার শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি এক জরুরি সভা আহ্বান করে। সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত তুলে ধরার জন্য সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে বলে কমিটির নেতারা জানিয়েছেন।
জেলা পরিষদ সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ও পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা। আরও উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্যসচিব লালজার লম বম, মুখপাত্র কাঞ্চনজয তঞ্চঙ্গ্যা, সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম প্রমুখ। ক্যশৈহ্লা মারমা লিখিত বক্তব্যে জনসাধারণের নিরাপত্তা জোরদার, রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষা ও অপহৃত ব্যাংক কর্মকর্তার সুস্থ অবস্থায় নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
লিখিত বক্তব্যে ব্যাংকের টাকা ও অস্ত্র লুট, ব্যাংক কর্মকর্তা অপহরণসহ কেএনএফের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। বক্তব্যে বলা হয়, কেএনএফের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য ২০২৩ সালের ২৯ মে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সঙ্গে কেএনএফের এযাবৎ কয়েক দফা অনলাইনে ও দুই দফা সশরীর বৈঠক হয়েছে। গত বছরের ৫ নভেম্বর ও গত ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত সশরীর দুই দফা বৈঠকে দুটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষর করেছে। এতে তারা চাঁদাবাজি, অপহরণ, লুটপাটসহ সব ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধের প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিল। কিন্তু প্রতিশ্রম্নতির পর তারা রুমা ও থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি করে। একই ঘটনায় ব্যাংক কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া তারা বিভিন্ন সময়ে চাঁদাবাজি, লুটপাট, নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে রেখেছে। তাদের অতিসাম্প্রতিক ঘটনায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির শান্তি আলোচনা বৈঠকসহ সব ধরনের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ অবস্থায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি কেএনএফের সঙ্গে কোনো ধরনের বৈঠক করবে না।
৪০ জনকে জিম্মি করে অস্ত্রধারীরা
থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জসীমউদ্দীন বৃহস্পতিবার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'ব্যাংক লুটের খবর পেয়ে থানা থেকে পুলিশ ফোর্স নিয়ে যখন যাচ্ছিলাম, তখন থানার প্রধান ফটকের সামনে থেকে পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাই। একই সঙ্গে থানার পেছন দিক থেকেও গুলি করা হয়। পরে বিকল্প পথে পুলিশ ফোর্স নিয়ে ব্যাংকের সামনে যখন যাই, ততক্ষণে অস্ত্রধারীরা টাকা নিয়ে চলে যায়।'
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, 'আমরা জানতে পারি দুটি ব্যাংকের ভেতরে ব্যাংক কর্মকর্তা, টাকা তুলতে আসা দুই বিজিবি সদস্য, পুলিশ সদস্য, ব্যাংকের গ্রাহকসহ ৪০ জনকে জিম্মি করে রেখেছে অস্ত্রধারীরা। এসব লোককে বাঁচাতে পুলিশ যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে।'
ওসি আরও বলেন, 'আমরা জানতে পারি, ঘটনাস্থলে তিনটি চাঁদের গাড়ি ছাড়াও একটু দূরে শাজাহান পাড়ায় অস্ত্রধারীদের ৪০ জনের আরেকটি দল ছিল।'
তিন উপজেলায় সব ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ
এদিকে, বান্দরবানের তিন উপজেলা রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়িতে সোনালী ব্যাংকসহ সব ব্যাংকের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বান্দরবান সদরের সোনালী ব্যাংক শাখার অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক ওসমান গণি সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ওসমান গণি জানান।
তিন উপজেলার বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহক জেলা সদরের সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখা থেকে টাকা তুলতে পারবেন বলে সোনালী ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।
থানচি বাজার সুনসান, বিরাজ করছে আতঙ্ক
অন্যদিকে, থানচিতে দুই ব্যাংকে সশস্ত্র ডাকাতির পরদিন আতঙ্ক বিরাজ করছে এ পাহাড়ি জনপদে। উপজেলা সদরে বন্ধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বৃহস্পতিবার সকালে খুলে দেওয়া হলেও লোক সমাগম একেবারেই কম।
থানচি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন বলেন, 'এরকম ঘটনার পর আমরা সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা খুব আতঙ্কে ছিলাম। সে কারণে ফার্মেসির মতো জরুরি দোকান ছাড়া সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছিল। আজ বাজারের দোকানপাট খুলেছে। কিন্তু সবার মধ্যে অস্বস্তি, লোকজন বাজারে বের হচ্ছে কম।'
থানচি বাজারের অন্য এক ব্যবসায়ী বৃহস্পতিবার সকালে বলেন, 'সাধারণ সময়ে যে ধরনের লোক সমাগম বাজারে হয়, আজকে তার অর্ধেকও নেই। মানুষের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে। পাহাড়ি বিভিন্ন এলাকা থেকে যারা নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রি করতে আসেন, তাদের সংখ্যাও খুব কম।'
স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, 'অস্ত্রধারী লোকজন এখনো ওই এলাকায় থাকতে পারে। তাই আমাদের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে।'