কিডনি দেওয়া অপর নারীও মারা গেলেন
প্রকাশ | ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
দেশে প্রথমবারের মতো 'ব্রেইন ডেড' মানুষের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল যে দুজনের শরীরে, তাদের মধ্যে দ্বিতীয় জন শামীমা আক্তারও (৩৪) মারা গেলেন ১৫ মাস পর।
মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃতু্য হয় বলে তার ভাই শাহাজাদা হোসেন জানান।
দেশের প্রথম
\হক্যাডাভেরিক অঙ্গদাতা সারাহ ইসলামের দান করা দুটি কিডনির একটি শামীমার শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল।
শাহজাদা বলেন, 'কিডনি প্রতিস্থাপন করার পর থেকে আমার বোন ভালো ছিল না, নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এই সমস্যাগুলো কিডনি প্রতিস্থাপনের আগে ছিল না। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে আইসিইউতে ছিল, গত রাতে চলে গেল।'
বিএসএমএমইউ'র উদ্যোগেই ক্যাডাভেরিক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শামীমার শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পরে 'যথেষ্ট সহযোগিতা করেনি' বলে শাহাজাদা হোসেনের অভিযোগ।
তিনি বলেন, 'হাসপাতালে এখন তো আমাদের কেউ আর চেনেই না ভালোভাবে। একমাত্র দুলাল স্যার একটু চেষ্টা করেছিল। একটা টেস্ট পর্যন্ত ফ্রি নেই, আসার সময় লাশ আটকে রাখছিল আইসিইউতে। বিল দিয়ে বের হতে হবে। আমাদের যা টাকা ছিল তা শেষ হয়ে গেছিল। আমাদের সামর্থ্য ছিল না, কর্তৃপক্ষ কি পারত না আমাদের ফ্রি করে দিতে?'
শামীমার কিডনি প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, গত ৬ মাস শামীমা কোনো চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানের বাইরে ছিলেন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তিন সপ্তাহ আগে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার ফুসফুসে সংক্রমণ এবং হেপাইটাইসিস সি ধরা পড়ে।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের অস্ত্রোপচারের পর ফলোআপে থাকা খুবই জরুরি। কিন্তু সে বাড়িতে গিয়ে আর ফলোআপে আসেনি। আসার পর দেখি ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেছে, একেবারে শুকিয়ে গেছে। আমাদের এখানে ভর্তি করার পর তার লাঞ্চে ইনফেকশন ধরা পড়ে, পাশাপাশি সি ভাইরাসেও আক্রান্ত হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চার দিন আগে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছিল।'
হাসপাতাল থেকে সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, 'এই অভিযোগটা ঠিক না। আমি কাল বলে দিয়েছি তাদের টাকা-পয়সা লাগবে না। এটা আমি দেখব।'
প্রসঙ্গত, গত বছরের জানুয়ারিতে বিএসএমএমইউতে প্রথমবারের মতো একজন 'ব্রেইন ডেড' মানুষের শরীর থেকে কিডনি নিয়ে তা দুজনের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।
টিউবেরাস সেক্লরোসিস রোগে আক্রান্ত সারাকে বাঁচানোর উপায় ছিল না। ২০ বছর বয়সি এই তরুণীও তা জানতেন। তার ইচ্ছে ছিল, মৃতু্যর পর তার মস্তিষ্ক যেন গবেষণার কাজে লাগে। তার মৃতু্যর পর অঙ্গদানের সিদ্ধান্তে পরিবারও আপত্তি করেনি।
সারাহকে ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি 'ব্রেইন ডেড' ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। সেদিন রাতেই তার কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় দুজন নারীর শরীরে।
তাদের মধ্যে হাসিনা আক্তার নামে এক নারী মারা যান গত বছরের অক্টোবর মাসে। এবার শামীমাও চলে গেলেন।
সারাহর চোখের কর্নিয়া দেওয়া হয়েছিল দুজনকে। চোখে আলো ফেরার পর এখন তারা ভালোই দেখতে পান।